দেশের অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আলেমরা যখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানগুলোতে সঙ্গীত বিষয়ে একজন সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে গেজেট জারি করেছে সরকার। আর এতে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষ দুই ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) শায়খ আহমাদুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হোক, এটা বহুকাল ধরে গণমানুষের প্রাণের দাবি ছিল। সেই দাবি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ প্রাথমিকে গানের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, এই দেশে কত পার্সেন্ট মানুষ সন্তানকে গান শেখায়? কত পার্সেন্ট মানুষ স্কুলে গানের শিক্ষক চায়? বরং অধিকাংশ অভিভাবক চায়, বিদ্যালয়ে যেন তাদের সন্তানকে গান শেখানো না হয়।
তিনি বলেন, এ দেশের প্রায় সকল অভিভাবক সন্তানের জন্য প্রাইভেট ধর্মীয় শিক্ষক রাখেন কিংবা সন্তানকে মক্তবে পাঠান। সরকার যদি স্কুলে বিশেষায়িত ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিত, তাহলে অভিভাবকদের এই বাড়তি খরচ ও ঝামেলা পোহাতে হতো না। শিক্ষার্থীদেরও সময় বেঁচে যেত।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার পেছনে রাষ্ট্র প্রতি মাসে শত শত নয়; বরং হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। অথচ শিক্ষার মান দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। একদিকে অভিভাবকদের আস্থা হারাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো, অপরদিকে কিশোর গ্যাংয়ের মতো ভয়াবহ অপরাধ দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এমতাবস্থায় প্রয়োজন শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং নৈতিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ। সেটা না করে কাদের খুশি করার জন্য গানের শিক্ষক নিয়োগে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো?
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জনপ্রিয় এই আলেম আরো বলেন, সরকারের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান—গণ-আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে বাইরে থেকে আমদানি করা কালচার চাপিয়ে দেয়ার চিরাচরিত পথ পরিহার করুন। দেশের মানুষ এসবের পরিবর্তন চায়।
এই পোস্টের কমেন্টবক্সে সংযুক্তি দিয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহ আরো বলেন, প্রজ্ঞাপনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য শিক্ষকতায় বিশেষ কোটা রাখা হয়েছে। মেডিক্যাল টেস্টে প্রমাণিত হিজড়া বা জন্মগত লিঙ্গ প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে কারো আপত্তি থাকার কথা না। কিন্তু কোটা চালু করে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ শব্দের মারপ্যাঁচে কওমে লুতের অনুসারীদের শিক্ষকতায় ঢোকানো হতে পারে বলে আমরা উদ্বিগ্ন। এটা দেশ ও জাতির সাথে যুদ্ধের শামিল। এই ধরনের বিকৃত মানসিকতার লোকেরা যদি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হয়, তবে সেই শিক্ষা-ব্যবস্থার পতনঘণ্টা বাজতে বেশি দেরি হবে না।
আর বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ড. মিজানুর রহমান আজহারী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি— সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্ম শিক্ষক নিয়োগে এ দেশের অভিভাবকদের দীর্ঘদিনের দাবিকে উপেক্ষা করে, অযাচিতভাবে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা প্রদান করেছে। আমরা এই অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
মিষ্টভাষী গবেষক এই আলেম আরো বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে প্রাথমিক স্তরে ইসলাম শিক্ষার জন্য বিশেষায়িত ধর্মীয় শিক্ষক নেই। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। অথচ সঙ্গীতের মতো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ডেডিকেটেড শিক্ষক নিয়োগ স্পষ্টতই জনআকাঙ্ক্ষা পরিপন্থী। আমরা আমাদের সন্তানদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের নিরাপত্তা চাই।
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’-এর গেজেট জারি করে সরকার। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি নতুন শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেগুলো হলো- সহকারী শিক্ষক (সঙ্গীত) ও সহকারী শিক্ষক (চারুকলা)।
তবে দীর্ঘদিন ধরে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদ সৃষ্টির দাবি উঠলেও তা বিধিমালায় যুক্ত করা হয়নি। দেশের বিভিন্ন মাদরাসা থেকে স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি অর্জন করা প্রার্থীরা সহকারী শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা) পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে আসছেন। তার মধ্যেই জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারি ও শায়খ আহমাদুল্লাহ এ দাবি জানালেন।