যে আমলে রিজিক বাড়ে

কোরআন-সুন্নাহে কিছু দোয়া আছে, যেগুলো পাঠে রিজিক লাভ হয় এবং বরকত বাড়ে। এমনিভাবে এমনও কিছু সময় আছে, যখন দোয়া করাটা কবুল হওয়ার অধিক উপযোগী। অবশ্য বরকত ও কল্যাণ লাভের জন্য ইসতেগফারেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

আবু সাঈদ
যে আমলে রিজিক বাড়ে
যে আমলে রিজিক বাড়ে |আল জাজিরা

কোরআন-সুন্নাহে কিছু দোয়া আছে, যেগুলো পাঠে রিজিক লাভ হয় এবং বরকত বাড়ে। এমনিভাবে এমনও কিছু সময় আছে, যখন দোয়া করাটা কবুল হওয়ার অধিক উপযোগী। অবশ্য বরকত ও কল্যাণ লাভের জন্য ইসতেগফারেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

জীবনযাত্রার সহজতা ও রিজিক বৃদ্ধির উত্তম আমল

কুরআন-সুন্নাহে রিজিক বাড়ার আমল শিরোনামে কোনো নির্দিষ্ট দোয়া নেই। কিন্তু এমন কিছু দোয়া বর্ণিত হয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে তার কল্যাণ কামনা করতে পারে এবং রিজিক চাইতে পারে। এমন কিছু দোয়া হলো এই,

একবার দোয়া করতে গিয়ে রাসূল সা. বলেন,

اللَّهُمَّ اكْفِنِي بحَلالِكَ عن حَرامِكَ، وأَغْنِني بفَضْلِكَ عَمَّنْ سِواكَ

অর্থাৎ হে আল্লাহ, আপনার হালালের মাধ্যমে আমাকে হারাম থেকে বিরত রাখেন এবং আপনার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে অন্যদের থেকে অমুখাপেক্ষী করেন। (সুনানে তিরমিজি)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সূত্রে বর্ণিত একটি দোয়া হলো,

اللَّهُمَّ إنِّي أسألك الهدى والتقى والعفاف والغنى

অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়েত, পরহেযগারি, নিষ্কলুষতা ও আত্মনির্ভরশীলনা চাই। (সহিহ মুসলিম)

আরেকটি দোয়া হলো এই-

اللَّهُمَّ بارِكْ لي في رِزْقي

অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমার রিজিকে বরকত দান করেন। (মুসনাদে বাযযার, শায়খ আলবানী একে সহিহ বলেছেন।)

রাসূল সা. কুফুর, দারিদ্র্য এবং কবরের আজাব থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাইতেন। দোয়াতে রাসূল সা. বলতেন,

اللهم إنى أعوذ بك من الفقر والقلة والذلة، وأعوذ بك أن أظلم أو أظلم، ويأمر بذلك

অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দারিদ্র্য, অভাব ও লাঞ্ছনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি; আমি যেন নিজে কারো উপর জুলুম না করি এবং নিজেও যেন নির্যাতিত না হই। (মুসনাদে আহমদ ও অন্যান্য)

রাসূল সা. থেকে আরেকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে-

اللهم رب السماوات ورب الأرض ورب العرش العظيم، ربنا ورب كل شيء، فالق الحب والنوى ومنزل التوراة والإنجيل والفرقان، أعوذ بك من شر كل شيء أنت آخذ بناصيته، اللهم أنت الأول فليس قبلك شيء، وأنت الآخر فليس بعدك شيء، وأنت الظاهر فليس فوقك شيء، وأنت الباطن فليس دونك شيء، اقض عنا الدين، وأغننا من الفقر”

অর্থাৎ হে আল্লাহ, হে আসমান, যমিন ও আরশে আজিমের প্রতিপালক, হে আমাদের ও কুল মাখলুকাতের প্রতিপালক, হে খেজুর ও তার বীজ বিদীণকারী, হে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআন অবতীর্ণকারী, আমি সকল জিনিসের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, আপনিই অনাদি- আপনার আগে কিছু নেই। আপনিই অনন্ত- আপনার পরেও কিছু থাকবে না। আপনিই দৃশ্যমান- এরচেয়ে দৃশ্যমান আর কিছু নেই। আপনিই অদৃশ্যমান- আপনি ছাড়া কোনো কিছুর অস্তিত্ব স্বীকার্য নয়। আপনি আমাদের ঋণ মোচন করুন এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করুন। (সহিহ মুসলিম)

রিজিক বৃদ্ধির কোনো দৈনন্দিন আমল আছে কিনা?

রিজিক বৃদ্ধির কোনো দৈনন্দিন আমল রাসূল সা. থেকে বর্ণিত হয়নি। কিন্তু সকাল-সন্ধ্যার যেসব দোয়া আছে এবং ইস্তেগফার ও দুরুদ শরিফ; এই সবই রিজিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

فَقُلتُ استغفِروا ربَّكم إنَّه كان غفَّارًا * يُرسِلِ السَّماءَ عليكم مِدرارًا * ويُمدِدكم بأموالٍ وبنينَ ويجعل لكم جناتٍ ويجعل لكم أنهارًا

অর্থাৎ আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি (সর্বদা) ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অবিরাম মুষলধারে বৃদ্ধি দেবেন। তোমাদেরকে ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সহযোগিতা করবেন। তিনি তোমাদের জন্য উদ্যানের ব্যবস্থা করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নদীনালা। (সূরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)

রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি সবসময় ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সকল সঙ্কট থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন; যেকোনো উদ্বেগ থেকে পরিত্রাণ দেবেন; তাকে এমন স্থান থেকে রিজিক দান করবেন, যেখান থেকে সে ধারণাও করতে পারবে না। (সূনানে আবু দাউদ; শায়খ আলবানী একে সহিহ বলেছেন।)

রাসূল সা. রিজিকের জন্য কী দোয়া পড়তেন?

রিজিক লাভের জন্য রাসূল সা. নির্দিষ্ট কোনো দোয়া পড়েছেন বলে হাদিসে বর্ণিত নেই। তবে তিনি দোয়া পাঠ করতেন, যাতে তিনি রিজিক প্রার্থনা করতেন। যেমন,

রাসূল সা. ফজরের নামাজের পরে বলতেন,

اللَّهُمَّ إني أسألك علمًا نافعًا، ورزقًا طيبًا، وعملًا متقبلًا

অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাকে উপকারী ইলম দান করেন; উত্তম রিজিক ও মাকবুল আমলের তাওফিক দিন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, শায়খ আলবানী একে সহিহ বলেছেন।)

আরেকটি দোয়া হলো,

اللهم إني أعوذ بك من الهم والحزن، وأعوذ بك من العجز والكسل، وأعوذ بك من الجبن والبخل، وأعوذ بك من غلبة الدين وقهر الرجال

অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি আপনার থেকে দুঃখ ও উদ্বেগ থেকে পানাহ চাই। পানাহ চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে; ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে; ঋণের পেরেশানি ও মানুষের অত্যাচার থেকে। (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)

রিজিকের জন্য দোয়ার বিশেষ কোনো মুহূর্ত আছে কিনা?

দোয়া কবুল হওয়ার বরকতময় সময়গুলোতে রিজিকের জন্য দোয়া করা যেতে পারে। যেমন,

-রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে;

-ফরজ নামাজের পরে; আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে;

-জুমার দিন,বিশেষ করে আসরের নামাজের পরে;

-সেজদারত অবস্থায়। রাসূল সা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বান্দা যখন সেজদায় থাকে, তখন সে তার প্রতিপালনের সবচেয়ে নিকটবর্তী থাকে। সুতরাং (তখন) তোমরা প্রচুর পরিমাণে দোয়া করো। (মুসলিম)

রিজিক সহজলভ্য হওয়া এবং রিজিকে বরকত লাভের দোয়াতে কী পার্থক্য?

রিজিক সহজলভ্য হওয়া মানে রিজিকের বিভিন্ন উপায় খুঁজে পাওয়া এবং বিভিন্ন মাধ্যমে রিজিক লাভ করা। আর রিজিকে বরকত লাভের অর্থ হলো, রিজিকে কল্যাণ থাকা, তা দ্বারা অধিক পরিমাণে উপকৃত হতে পারা এবং তা নষ্ট হওয়া থেকে সুরক্ষা থাকা।

কারো কারো থেকে এমন হয় যে তার অনেক রিজিক আছে। কিন্তু তাতে বরকত নেই। সেজন্য এতো রিজিকেও তার প্রয়োজন পুরো হয় না। আবার কারো ক্ষেত্রে এমন হয় যে তার রিজিক কম। কিন্তু বরকত থাকায় এতেই তার প্রয়োজন পুরো হয়ে যায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি জনপদবাসী ঈমান আনয়ন করতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান ও যমিনের বরকত লুটিয়ে দিতাম। (সূরা আরাফ, আয়াত : ৯৬)

সব নামাজের পর পড়া যাবে, এমন কোনো রিজিকের দোয়া আছে কিনা?

রাসূল সা. নামাজের করে পড়ার মতো কোনো দোয়া নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে ব্যাপক অর্থবহ যেসব দোয়া আছে, সেগুলো পড়া যেতে পারে। তাসবিহ-তাহলীল ও ইস্তেগফার পড়া যেতে পারে।

প্রত্যেক নামাজের পরে যেকোনো বৈধ দোয়া করা যেতে পারে। এর মধ্যে রিজিকের দোয়াও থাকতে পারে। পড়া যেতে পারে,

اللَّهُمَّ ارزقني رزقًا طيبًا، وبارك لي فيه

অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাকে উত্তম রিজিক দান করেন এবং তাতে বরকত দিন।

اللَّهُمَّ أغنني بحلالك عن حرامك

হে আল্লাহ, আপনি আমাকে হালাল দিয়ে হারাম থেকে বাঁচান।

এমনিভাবে নামাজের পরের যেসব মাসনুন দোয়া রয়েছে, তাও গুরুত্বের সহিত পড়া যেতে পারে। এসবেও বরকত লাভ হবে।

সুনির্দিষ্টভাবে আর্থিক অবস্থার জন্য দোয়া করা যাবে কিনা?

হাঁ, হালাল মাল অর্জনের জন্য দোয়া করা যাবে। তবে এতে কোনো ধরনের সীমালঙ্ঘন বা অন্যায় পন্থা অবলম্বনের কথা বলা যাবে না। তবে দোয়ার ক্ষেত্রে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানের মঙ্গল কামনা করাই শ্রেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

فَابْتَغُوا عِندَ اللَّهِ الرِّزْقَ

অর্থাৎ তোমার আল্লাহ তায়ালার কাছে রিজিক প্রার্থনা করো। (সূরা আনকাবুত : ১৭)

অন্য আয়াতে এসেছে,

ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار

অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করেন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি দিন।