শুরু হয়েছে আরবি রজব মাস। ‘রজব’ শব্দের অর্থ সম্মানিত। ইসলামপূর্ব জাহেলিয়াতের যুগে আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সম্মান করত। এজন্য তারা এ মাসের নাম রেখেছিল রজব।
ইসলাম আগমনের পর বছরে ১২ মাসের মধ্য থেকে রজবসহ ৪টি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত মাস বলে ঘোষণা করা হয়। এ সম্পর্কে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, তন্মধ্যে ৪টি (সম্মানিত হওয়ার কারণে) নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ (সূরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)
রজব মাসে করণীয়
হজরত আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রজব মাস শুরু হলে হজরত রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাজান।’ অর্থ, ‘আয় আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করে দাও। আয় আল্লাহ আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত জীবন দাও।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদীস : ৬৫৯)
এই হাদিস থেকে অনুধাবন করা যায়, মুমিন জীবনে মাহে রজবের গুরুত্ব কতো অপরিসীম। রজব মাসের ফজিলত প্রসঙ্গে হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি রহ: বলেন, ‘এ মাসে উল্লেখযোগ্য একাধিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যেমন মিরাজ। তাই এ মাস মর্যাদাপূর্ণ। তা ছাড়া হাদীসের কিতাবগুলোতে রজব মাসে রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিক নফল ইবাদতের বর্ণনা পাওয়া যায়। এ থেকেও রজব মাসের বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়।’
আমাদের ফকিহরা বলেন, গোনাহের কারণে কলুষিত অন্তরাত্মাকে তওবার মাধ্যমে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে রজব মাসে। হজরত আবু বকর বলখি রহ: বলেন, ‘রজব ফসল রোপণের মাস। শাবান ফসলে পানি সেচ দেয়ার মাস। আর রমজান হলো- ফসল তোলার মাস।’
তিনি আরো বলেন, ‘রজব মাস ঠান্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো। আর রমজান মাস বৃষ্টির মতো।’ (লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃষ্ঠা : ১৪৩)
রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। অধিক নফল রোজা ও ইবাদতে কাটাতেন রজব ও শাবান মাস। তাই আমাদেরও কর্তব্য রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ করে রজব মাসের হক আদায় করা। বেশি বেশি নফল নামাজ ও রোজা রাখা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের তাওফিক দান করুক। আমিন।
লেখক : আলেম, লেখক ও শিক্ষক



