বরিশাল জেলার ছয়টি নির্বাচনী এলাকার সব ক’টিতেই দলীয় কর্মসূচি পালনসহ নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের পাশাপাশি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন অনেকে। এখানকার সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা একাধিক ধারায় বিভক্ত থাকায় স্থানীয় নেতারা নিজ নিজ নেতার পক্ষে প্রায়ই সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেক এলাকায় দলীয় কর্মসূচি পালিত হয় আলাদাভাবে।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরউদ্দিন স্বপনের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন চাইছেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের পর এই এলাকায় ২০০১ সালের মতোই একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন জহির উদ্দিন স্বপন ও অনুসারীরা। তার কিছু অনুসারীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যেই একাধিকবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গৌরনদী পৌর-বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবসহ দুই উপজেলার ছয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতদের অধিকাংশই জহির উদ্দিন স্বপনের অনুসারী। বিপরীতে সব ধরনের গ্রুপিং ও ঝামেলা এড়িয়ে গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদকেন্দ্রিক উপহার প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন আকন কুদ্দুসুর রহমান। এ ছাড়া দলের জন্য কারাভোগী ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়মিত খোঁজ রাখছেন তিনি।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু দলের মনোনয়নের জন্য অনেকটা এগিয়ে আছেন। দানবীর হিসেবে বরিশালজুড়ে তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। পাশাপাশি এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ করে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দুলাল হোসেন ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। এদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় যার যার অবস্থান অনুযায়ী সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সঙ্গে মনোনয়ন লড়াইয়ে আছেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন। এই দুই কেন্দ্রীয় নেতার অনুসারীরা পৃথকভাবে এলাকায় দলীয় সব কর্মসূচি পালন করেন। বিগত রমজানেও এই দুই নেতার উপস্থিতিতে পৃথক ইফতার মাহফিল হয়েছে তাদের নির্বাচনী এলাকায়।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশায় আছেন সাবেক এমপি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ। হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ দুই উপজেলার নেতাকর্মিরাও পৃথকভাবে দলীয় সকল কর্মসূচি পালন করে থাকেন। বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীও আলাদাভাবে পালন করেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনুসারীরা। এরবাইরেও বিভিন্ন সামাজিক কাজের মাধ্যমে হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন বিজিবি ট্রাইব্যুনালের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন। তিনিও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনে সাবেক হুইপ, সিটি মেয়র ও পাঁচবারের এমপি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো: মজিবর রহমান সরোয়ার দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমনটিই মনে করছেন তার অনুসারীরা। তবে এই আসনে বিগত কয়েক বছর ধরে নানামুখী সাংগঠনিক তৎপরতায় এগিয়ে আছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ। বিগত রমজানে বরিশাল নগরীসহ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ইফতার মাহফিল, দরিদ্রদের মাঝে শাড়ি-লুঙ্গি ও ঈদ উপহার বিতরণ এবং এই আসনের পাঁচ লাখ মানুষকে মুঠোফোনে ঈদ শুভেচ্ছা ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে আলোচনার শীর্ষে আছেন তিনি। দলের দুর্দিনের কারাভোগী নেতাকর্মীদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখায় নগরী এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী এখন তার জন্য একাট্রা হয়ে কাজ করছেন। সম্প্রতি নদীভাঙন প্রতিরোধসহ বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতেও কাজ করেছেন তিনি। এ ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দলের জন্য সবচেয়ে ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত এবায়েদুল হক চান। তিনি বর্তমানে বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে সাবেক এমপি ও জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান মনোনয়ন প্রশ্নে অনেকটাই এগিয়ে আছেন। বাকেরগঞ্জ বিএনপির পুরোটাই তার একক নিয়ন্ত্রণে। এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ করছেন অভিভক্ত বরিশাল জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন এবং বিএম কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক জিএস ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সিকদার বাদল।
সার্বিক বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, সারাদেশের মতো বরিশাল বিভাগেও বিএনপির কোথায় কী হচ্ছে- সব কিছুর নিয়মিত খবর রাখছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি ক্লিন ইমেজ ছাড়া কাউকে মনোনয়ন দেবেন না। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব কার্যক্রম পর্যালোচনা করেন দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন।