দেশে বৃক্ষপ্রেমিক বাড়ছে

এক বছরে চারা বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১২ লাখ

আবুল কালাম
Printed Edition
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চলছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা। মেলা উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশ-চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে নান্দনিক সাজ-সজ্জা : নয়া দিগন্ত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চলছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা। মেলা উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশ-চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে নান্দনিক সাজ-সজ্জা : নয়া দিগন্ত

সময়ের সাথে দেশে বৃক্ষপ্রেমিক বাড়ছে। গাছ রোপণে দিন দিন মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকায় বনের বাইরে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন বিভাগ বলছে, বিগত দুই বছরে শুধু বৃক্ষমেলায় এক মাসে মোট গাছ বিক্রি হয়েছে ৫২ লাখ। যার মূল্য প্রায় ৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৩ সালের চেয়ে ২৪ সালে বাড়তি চারা বিক্রি বেড়েছে ১১ লাখ ৭৯ হাজার। টাকার পরিমাণে, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৮০ লাখ ৬১ হাজার টাকার বেশি।

বৃক্ষমেলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর অর্থাৎ ২৪ সালে শুধু মেলায় বিক্রি হওয়া চারার সংখ্যা ছিল ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৩টি। যার বিক্রয় মূল্য ছিল ১৬ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার ১০ টাকা। অন্য দিকে তার আগের বছর ২৩ সালে মেলায় চারা বিক্রি হয় ২০ লাখ ৭ হাজার ২৮৭টি। যার বিক্রয় মূল্য ছিল ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ৯১ হাজার ৩৬০ টাকা। সে হিসাবে ২৩ সালের চেয়ে ২৪ সালে বাড়তি চারা বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশের বেশি।

পরিবেশবিদদের মতে, বৃক্ষের পরিবেশ ও অর্থনৈতিক মূল্য, কমিউনিটি উদ্যোগ এবং সরকারের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির ফলে লোকালয়ে গাছের সংখ্যা বাড়ছে। সামাজিক বনায়নের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ার ফলে সবুজায়নের পরিধি বিস্তৃত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইওপি সায়েন্স নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, ৫০ বছর বয়স্ক একটি ফল গাছ তার সারা জীবনে মানুষের যে উপকার করে তার আর্থিক মূল্য ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এজন্য তারা বেশি করে গাছ লাগানোর ওপর তাগিদ দিয়েছেন।

কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বনের বাইরে গাছের পরিমাণ মোট ভূমির ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এসব গাছের বেশির ভাগই বেড়ে উঠেছে মূলত সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে। এ ছাড়া রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে লাগানো গাছ, ফলবাগান ও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সরকারি-বেসরকারি জমিতে রোপণ করা গাছ। অন্য দিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ৩০ সালের মধ্যে দেশের বনভূমির পরিমাণ ২৫ শতাংশে উত্তীর্ণ করার পরিকল্পনা রায়েছে। তা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

তারই ধারাবাহিকতায় সবুজ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে এবারো শুরু হয়েছে জাতীয় বৃক্ষমেলা। এবারের বৃক্ষমেলায় রয়েছে দেশীয় ফল থেকে শুরু করে বনজ, ওষুধি ও ফুলের গাছের চারা। পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধন গাছ, বনসাই, ক্যাকটাসসহ গাছ-গাছালিতে ভরে গেছে মেলা প্রাঙ্গণ।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে বন অধিদফতর। মেলায় রয়েছে ১১২টি স্টল, যার মধ্যে ৯২টি নার্সারির এবং এর মধ্যে ডাবল স্টল রয়েছে ১৮টি। এসব স্টল দেশের বিভিন্ন নার্সারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে নেয়া হয়েছে।

মেলায় অংশগ্রহণকারী দফতরের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন এবং কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন। নাগরিক সহায়তার জন্য রয়েছে তথ্য সেল, কন্ট্রোল রুম ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব স্টল। মেলায় পছন্দের তালিকায় বনসাই শীর্ষে। দামও অনেক বেশি। পাঁচ থেকে ছয় ফিট উচ্চতার বনসাই দাম চাওয়া হচ্ছে তিন লাখ।

মূলত জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষমেলার সূচনা হয় ১৯৯৪ সালে বন বিভাগের উদ্যোগে। তবে এই সামাজিক আন্দোলনের বীজ বপন হয়েছিল আরো আগেই। ১৯৯১ সালের ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দেশের প্রতিটি নাগরিককে একটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানানো হয়। এরপর ১৩ আগস্ট গাজীপুরের শালনা গ্রামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী একটি মেহগনি গাছ রোপণ করে ‘বৃক্ষরোপণ অভিযান ৯১’-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ধীরে ধীরে এ কর্মসূচি পরিণত হয় একটি বৃহৎ জনসম্পৃক্ত সবুজ আন্দোলনে।