বাংলাদেশের জনশক্তি প্রেরণের অন্যতম সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার লেবানন। সেখানে বৈধভাবে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। তবে অনেকেই দেশটিতে যাওয়ার পর স্থানীয় আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ হয়ে পড়ছেন। এর ফলে তারা তাদের প্রাপ্য মজুরি, চিকিৎসাসেবাসহ নানা ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাসের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশী নারী-পুরুষ শ্রমিক পর্যটন শিল্প, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজারের মতো অবৈধ বাংলাদেশী অবস্থান করছেন, যা লেবাননের আইনে সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশী শ্রমিকদের বৈধ হতে সুযোগ দিচ্ছে লেবানন সরকার। এই সুযোগটি গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের সশরীরে উপস্থিত হয়ে সেটেলম্যান অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণে পরামর্শ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে দূতাবাস থেকে আবেদনকারীকে সহযোগিতা করা হবেও বলা হয়েছে।
নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে নিয়মিতকরণ (বৈধকরণ) প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করুন এই সেøাগান সামনে রেখে লেবাননের বৈরুতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়মিত প্রবাসী কর্মীদের নিয়মিত করার আবেদন গ্রহণ করার জন্য গত ১৭ জুন বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পরিবর্তিত তারিখ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ২৬ জুনের পরিবর্তে ৩ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত নিয়মিতকরণের আবেদন গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বলা হচ্ছে, লেবানন সরকারের নিয়মিতকরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নিয়মিত বৈধ হওয়ার জন্য একজন অনিয়মিত কর্মী এবং তার নতুন কফিল/নিয়োগকারীকে বাংলাদেশ দূতাবাস বৈরুতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লেবানন জেনারেল সিকিউরিটি অফিস (আমলনামা) কর্তৃক প্রদত্ত নিয়মিতকরণ আবেদন (সেটেলম্যান অ্যাপ্লিকেশন) ফরম পূরণ করতে হবে। ফরম পূরণে দূতাবাস থেকে সহযোগিতা করা হবে উল্লেখ করে বলা হয়, আগামী ২৬ জুন আরবি নববর্ষ অর্থাৎ ১ মহররম, ১৪৪৭ হি. উপলক্ষে লেবানন সরকার কর্তৃক সরকারি ছুটি থাকায় সেটির পরিবর্তে ৩ জুলাই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিয়মিতকরণের আবেদন জমা নেয়া হবে। আবেদনকারীকে সব কাগজপত্র সাথে আনার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এরআগে গত ২৯ মে বৈরুতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) ও দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছিল। লেবাননে বসবাসকারী অনিয়মিত প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের নিয়মিতকরণ শীর্ষক ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রারলেবানিজ লিরা/পাউন্ড) অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে অনেক নিয়োগকর্তা শ্রমিকের মজুরি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করে দেয়। এর ফলে অনেক বাংলাদেশী দেশে ফিরে যায়। আর যারা রয়ে গেছে তাদের মধ্যে অনেকে নিজেদের বৈধ কর্মসংস্থল ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে কাজ শুরু করে। স্থানীয় আইনের অনুসরণ না করায় তাদের নিজেরা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। লেবাননে বর্তমানে ২৫-৩০ হাজার বাংলাদেশী অবৈধ অবস্থায় আছে। অনিয়মিত এসব কর্মী তাদের প্রাপ্য মজুরি, চিকিৎসাসেবা, বীমা সুবিধা, বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণসহ নানা ধরনের অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে বলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সচিবকে লেখা চিঠিতে অবহিত করা হয়েছে।
সচিবের কাছে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছিল, নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়ায় দূতাবাস থেকে লেবানন জেনারেল সিকিউরিটির সাথে সমন্বয়পূর্বক নতুন নিয়োগকারী এবং কর্মীর মধ্যকার চুক্তিপত্র সত্যায়নসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে। নিয়মিত প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী কর্মী নিয়মিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এতে করে তারা তাদের প্রাপ্য মজুরি, চিকিৎসাসেবা, বীমা সুবিধাসহ নানা সুযোগ সুবিধা পাবেন এবং লেবানন থেকে রেমিট্যান্সও বৃদ্ধি পাবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।