লকডাউন ব্যর্থ হওয়ায় শাটডাউনে কর্মী সঙ্কট

হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায়

গত ১৩ নভেম্বর লকডাউন কর্মসূচিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কর্মীপ্রতি ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকায় ভাড়া করে ঢাকায় আনা হয়। ওই টাকা দলের শীর্ষ পলাতক নেতাকর্মীরা বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে কর্মীদের দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটানো হয়। এসব ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা আওয়ামী লীগের কোনো পদধারী নেতাকর্মী নয়। তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে অর্থের বিনিময়ে ঢাকায় নাশকতা করতে আসে।

এস এম মিন্টু
Printed Edition

মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ সোমবার। এই রায় ঘোষণা কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দুই দিনব্যাপী সারা দেশে ‘কমপ্লিøট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ১১ থেকে ১৩ তারিখে লকডাউন কর্মসূচিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কর্মী ভাড়া করে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া লকডাউন কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ায় আজকের কর্মসূচিতে কর্মী সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে নিষিদ্ধ দলটির। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিও ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন গোয়েন্দারা। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও দলটির নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, নিষিদ্ধ দলের কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশে পুলিশসহ র‌্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পুলিশের বিশেষ ইউনিট এবং গোয়েন্দারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আইজিপি আরো বলেন, যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

এ দিকে রায় ঘোষণা কেন্দ্র করে নাশকতা ঠেকাতে গতকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও র‌্যাবকে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও বিজিবির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাত আলী গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, নাশকতা ঠেকাতে আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আদালতের আশপাশের এলাকাজুড়ে গতকাল বিকেল থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়াও আমাদের গোয়েন্দারা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মধ্যে রেখেছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: শরিফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, গতকাল রোববার থেকে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরে বিজিবির টহল দল নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। আজ সোমবার সকালে ওই এলাকাসহ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার এবং রাজধানীর আশপাশের এলাকায় টহল বৃদ্ধি করা হবে।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, গত ১৩ নভেম্বর ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচিতে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই দিন আদালতে শুনানির পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আজ সোমবারের রায়ের দিন ধার্য করা হয়। রায় ঘোষণা বানচাল করতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের একটি ভিডিও বার্তায় ও তাদের ভেরিফাইড পেইজে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই সাথে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচি বাস্তবায়ন সর্বোচ্চ সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। অব্যাহত লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় চলমান অপশাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটাতে ছাত্রসমাজসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তি এবং আপামর জনতাকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র গতকাল রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ১৩ নভেম্বর লকডাউন কর্মসূচিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কর্মীপ্রতি ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকায় ভাড়া করে ঢাকায় আনা হয়। ওই টাকা দলের শীর্ষ পলাতক নেতাকর্মীরা বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে কর্মীদের দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটানো হয়। এসব ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা আওয়ামী লীগের কোনো পদধারী নেতাকর্মী নয়। তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে অর্থের বিনিময়ে ঢাকায় নাশকতা করতে আসে। এর মধ্যে অনেক দরিদ্র ও বেকার যুবক রয়েছে। তাদের বিপুল অর্থের প্রলোভনে ঢাকা আনা হয়। তবে কমপ্লিøট শাটডাউনে কর্মী সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

যেসব এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে নাশকতার পরিকল্পনা : গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় পরিকল্পনা ভেঙে যাচ্ছে নিষিদ্ধ সংগঠনের নাশকতার ছক। তবে রাজধানীর মিরপুরে ও মোহাম্মদপুর এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে পরিচিত গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় এবং মহাসড়ক এলাকায় (যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি কম) শাটডাউন কর্মসূচি পালনের আশঙ্কা রয়েছে।