বড়াইগ্রাম (নাটোর) সংবাদদাতা
নাটোরের বড়াইগ্রাম এবার রসুনের বাম্পার ফলন হলেও ভালো নেই রসুনচাষিরা। বিগত বছরগুলোতে চাষিরা নিজেদের উদ্ভাবিত বিনা হালে রসুন চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় এবং উৎপাদিত রসুনের ভালো দাম পাওয়ায় এ মৌসুমেও তারা ব্যাপক হারে রসুন চাষ করেন। রসুনের ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু উৎপাদিত রসুনের দাম না থাকায় এবার মণপ্রতি কমপক্ষে এক হাজার টাকা লোকসান গুনছেন তারা। ফলে লাভের পরিবর্তে সর্বস্বান্ত হতে চলেছেন নাটোরের রসুন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত রবি মৌসুমে বড়াইগ্রামে আট হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়। চাষকৃত জমিতে এবার কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৯৫৮ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদন হয়। কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, গত মৌসুমে বছরের পুরো সময় জুড়েই বাজারে রসুনের ভালো দাম ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রতি মণ রসুন ১০-১১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রতি মণ রসুন মাত্র এক হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ রসুনে কমপক্ষে ৯০০ টাকা লোকসান যাচ্ছে। রসুনের এ অস্বাভাবিক দরপতনে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
বাজিতপুর গ্রামের আব্দুল খালেক জানান, প্রতি বিঘা জমিতে রসুন চাষ, নিড়ানি, রসুন তোলা ও কেটে বাছাই করতে প্রায় ৩৫ জন শ্রমিক লাগে। তাদের শ্রমমূল্য ও খাবার খরচ বাবদ খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। গত বছর রসুনের দাম বেশি থাকায় বীজ বাবদ কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। এছাড়া সার ও কীটনাশক বাবদ বিঘাপ্রতি ছয় হাজার এবং সেচ দিতে আরো আড়াই হাজার টাকা খরচ পড়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মণ রসুন উৎপাদিত হয়েছে। এখন বিক্রির সময়ে সেটাও শুকিয়ে ওজনে কিছুটা কমেছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতি বিঘা জমি থেকে উৎপাদিত রসুন সর্বাধিক ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে।
এ ছাড়া যারা জমি লিজ নিয়ে রসুন চাষ করেছেন তাদের লোকসানের পরিমাণ আরো বেশি। রয়না ভরট গ্রামের রসুনচাষি আয়নাল হক জানান, এ বছর আমি মোট ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করে প্রায় ১০০ মণ রসুন পেয়েছি। অস্বাভাবিক হারে দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদিত রসুন বিক্রি করে লাভের পরিবর্তে আমার কমপক্ষে এক লাখ টাকা লোকসান যাচ্ছে।
রয়না ভরট হাটে রসুন কিনতে আসা টাঙ্গাইলের ব্যাপারী সাহাব উদ্দিন জানান, সরকার প্রচুর পরিমাণে চায়না রসুন আমদানি করছে। আমদানিকৃত এসব রসুনের আকার বড় হওয়ায় ক্রেতারা সেগুলো কিনতেই বেশি আগ্রহ বোধ করেন। দেশী রসুনের চাহিদা না থাকায় দাম কমে যাচ্ছে। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, এভাবে রসুনের দাম কমতে থাকলে কৃষকরা রসুন চাষে আগ্রহ হারাবে।
 


