মহান বিজয় দিবস আজ

মনিরুল ইসলাম রোহান
Printed Edition
মহান বিজয় দিবস আজ
মহান বিজয় দিবস আজ

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। এক অবিস্মরণীয় বীরত্বগাথা, গৌরবময় দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূখণ্ড গড়ার প্রত্যয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সব লাঞ্ছনা, শোষণ ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে কাক্সিক্ষত বিজয় অর্জন করে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। সবার মধ্যে এক বুক আশা ছিল সব লাঞ্ছনা, শোষণ, বঞ্চনার অবসান ঘটবে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের ওপর জেঁকে বসেছে স্বৈরশাসকরা। অধিকার আদায়ের জন্য কথা বলতে গিয়েও কখনো কখনো এ দেশের মানুষকে গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছে। একাত্তরের মূল চেতনার বিভ্রাট ঘটিয়ে মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করা হয়েছে।

দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আরেকবার রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পতন ঘটে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার। সে দিন থেকে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা হরণের অভিশাপ থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা আরেকবার বুকভরে শ্বাস গ্রহণ করে জানান দেয়- এ দেশের মানুষ কখনোই পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে জানে না। পরাধীনতার জিঞ্জির ভেঙে মানুষের এখন একটাই চাওয়া- সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত দেশ। এই মহান বিজয় দিবস ঘিরেও দেশের মানুষের মধ্যে প্রবলভাবে আরেকটি চাওয়া দৃঢ় হয়েছে তা হলো- আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে দীর্ঘদিনের আকাক্সিক্ষত ভোট প্রদানের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হোক।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

জাতীয় কর্মসূচি : যথাযোগ্য মর্যাদায় ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয়ভাবে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা করা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বিদেশী কূটনৈতিকরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এ দিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের আয়োজন করেছে। মাসব্যাপী ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোয় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরগুলো বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড একক ও যৌথভাবে জাহাজগুলো সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

আজ সকাল ১০টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে একটি মনোজ্ঞ এয়ার শো অনুষ্ঠিত হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গতকাল বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আ্যক্রোবেটিক শো ও সন্ধ্যায় যাত্রাপালা ‘জেনারেল ওসমানী’ অনুষ্ঠিত হয়। আজ বেলা ৩টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিবেশিত হবে বিজয় দিবসের গান। পাশাপাশি সারা দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা।