রাজউকের গবেষণা

ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ দশমিক ৯ হলে ধসে পড়বে সাড়ে ৮ লাখ ভবন

দিনে মধুপুর ফল্টে প্রায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়বে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ভবন। প্রাণ হারাবেন দুই লাখের বেশি মানুষ। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াবে ২৫ বিলিয়ন ডলার। তবে সিলেট ফল্টের ভূমিকম্পে ক্ষতি কিছুটা কম হবে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর বসে থাকার সুযোগ নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition
গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে রাজধানীর রামপুরায় হেলে পড়া একটি ভবন
গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে রাজধানীর রামপুরায় হেলে পড়া একটি ভবন

মধুপুর ফল্টে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানীর সাড়ে ৮ লাখ ভবন ধসে পড়বে এবং প্রায় ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক গবেষণায় এ কথা জানিয়েছে।

গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ভূমিকম্পবিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় রাজউকের গবেষণার তথ্য জানিয়ে বলা হয়, দিনে মধুপুর ফল্টে প্রায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়বে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ভবন। প্রাণ হারাবেন দুই লাখের বেশি মানুষ। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াবে ২৫ বিলিয়ন ডলার। তবে সিলেট ফল্টের ভূমিকম্পে ক্ষতি কিছুটা কম হবে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর বসে থাকার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে ভবনের ঝুঁকি নিরীক্ষার ক্ষমতা শুধু রাজউকের হাতে সীমাবদ্ধ না রেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আর ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় ট্রাস্ট গঠনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বড় কিছু যে হতে পারে, এটার একটা বার্তা এসেছে। আমরা যেন প্রস্তুত থাকতে পারি, সেটার জন্য প্রত্যেকেই আমরা রাজউক এবং অন্যান্য সংস্থাকে সহায়তা করি। আমি মনে করি, রাজউকের পাশাপাশি সার্ভিস প্রোভাইডার যারা আছে ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, ডেসা, গ্যাস, তাদেরও সচেতন করতে হবে। যদি এ রকম হয় তাহলে গ্যাসের লাইনটা কোথা থেকে বন্ধ করতে হবে, প্রত্যেক এলাকায় কিছু ভলেন্টিয়ার তৈরি করতে হবে।’

আলোচনা সভায় বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন ফিল্ডটাই তো খুব ডিফিকাল্ট। রাজউকের সেই ক্যাপাসিটিই নেই। ইকুইপমেন্ট দিলেও এটা বাড়বে না। থার্ড পার্টিকে দিয়ে, সে যদি সার্ভে করে প্রতি তলায় তলায়, তাহলে সেটা কম্পাইল করে আমরা সেই ভবনকে সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে পারি।’

ভবন নিরীক্ষায় বেসরকারি কোম্পানিকে যুক্ত করতে বিশেষ আদেশ জারি করার পরামর্শ দেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পাশাপাশি পুরান ঢাকা সংস্কার আবারো শুরু করার তাগিদ দেন তিনি।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করছে সরকার। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রস্তুতির পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় এটা নিয়েই আমরা কথা বলছি এবং এটিকে কার্যকর করার চেষ্টা করছি, যাতে দেশের মানুষ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও, ঝুঁকি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও আমরা এটা পালন করতে পারব।’ আলোচনায় রাজউক চেয়ারম্যান জানান, নিরাপদ ভবন নির্মাণ নিশ্চিতে নতুন একটি কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হচ্ছে।

এর আগে ২০২৪-এর জুনে রাজউকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মধুপুর ফল্টে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূকম্পনে ঢাকার ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯টি থেকে ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫টি ভবন ধসে বা ভেঙে পড়তে পারে, যা মোট ভবনের ৪০ দশমিক ২৮ থেকে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ঢাকায় ভবন ধসের আশঙ্কার এ সর্বনিম্ন ও সর্বাধিক শতাংশের গড় করলে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

২০১২ সালে এক মধুপুরের অরণখোলা ইউনিয়নের বোকারবাইদ গ্রামে ভূমিকম্পে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছিল। যার ব্যাস ছিলে পাঁচ-ছয় ইঞ্চি ও গভীরতা ছিল ২৫ থেকে ২৬ ফুট। সে সময় থেকেই মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।