গতকাল মীর কাসেম আলীর নবম শাহাদতবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ২০১৬ সালের এ দিনে তিনি কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে শহীদ হন।
মীর কাসেম আলী ছিলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা, দানবীর ও ইসলামপন্থী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অগ্রদূত। তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমে তাঁর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২০১৪ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিতর্কিত বলে আখ্যা দিয়েছিল। তবুও ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর কাশিমপুর কারাগারে রায় কার্যকর করা হয়।
গতকাল তাঁর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সমর্থকগোষ্ঠী দোয়া মাহফিল, কুরআন খতম ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ মীর কাসেম আলীর রূহের মাগফিরাত কামনায় গতকাল নয়া দিগন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিল ও মুনাজাতের আয়োজন করা হয়। নয়া দিগন্ত অফিসে আয়োজিত মাহফিলে পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক খায়রুল বাশার, সিটি এডিটর আশরাফুল ইসলাম, চিফ রিপোর্টার আবু সালেহ আকনসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। এ সময় শহীদ মীর কাশেম আলীর জীবনীর ওপর আলোচনায় বক্তারা বলেন, মীর কাশেম আলী আজীবন মানুষের সেবায় কাজ করে গেছেন। তিনি নয়া দিগন্ত, দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছেন। ইসলামী ব্যাংক-বীমা, বহু মসজিদ-মাদরাসা এবং নানাবিধ ইসলামী ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তার উদ্যোগ ছিল যুগান্তকারী। মুনাজাতে মীর কাসেম আলীকে শহীদ হিসেব কবুল করা ও বেহশতের সর্বোচ্চ স্থান দিতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাকে স্মরণ করে নানা শ্রদ্ধাঞ্জলি পোস্ট করছেন অনুসারী ও শুভাকাক্সক্ষীরা।
মীর কাসেম আলীর পরিবার এবং ঘনিষ্ঠজনরা মনে করেন, তিনি ছিলেন আদর্শিক সংগ্রামী, যিনি দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন।
সাতক্ষীরায় আলোচনা ও দোয়া মাহফিল
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সাবেক সদস্য (প্রশাসন) ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ মীর কাসেম আলীর ৯ম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ২টায় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল সাতক্ষীরা লিমিটেডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আয়োজনে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় এ আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল সাতক্ষীরা লিমিটেডের প্রশাসনিক ইনচার্জ মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের হিসাব কর্মকর্তা শেখ শরিফুল আউয়াল, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: মঞ্জুরুল ইসলাম খান, মার্কেটিং ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বুলবুল প্রমুখ। এ সময় হাসপাতালের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন, হাফেজ কহিনুর ইসলাম।