নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভীকে পৃথক পাঁচ মামলায় হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একই সাথে জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক পাঁচটি আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো: রেজাউল হক বুধবার এ আদেশ দেন। এ দিকে আরো পাঁচটি মামলায় আইভীকে গ্রেফতার দেখিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার এসব মামলার শুনানি হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা ও মারাত্মক জখম করার অভিযোগসহ পৃথক পাঁচ মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৯ নভেম্বর জামিন পান কারাগারে থাকা সেলিনা হায়াৎ আইভী।
এর মধ্যে তিন মামলায় জামিন স্থগিত চেয়ে ১০ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আবেদন করে, যা সেদিন চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত নট টুডে (অর্থাৎ ১০ নভেম্বর নয়) আদেশ দেন। অপর দুই মামলায় জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আবেদন করে। আইভীর জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক পাঁচটি আবেদন গতকাল চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। আইভির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন ও আইনজীবী এস এম হৃদয় রহমান।
জানা যায়, গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে তিনটি হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র আইভীকে গ্রেফতার দেখাতে মঙ্গলবার আবেদন করেন ফতুল্লা থানার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে সোমবার ফতুল্লা থানার একটি হত্যা মামলা এবং গ্রেফতারকালে বাধাদানের অভিযোগে সদর থানায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসব আবেদন করা হয়।
আইভীর আইনজীবী বলছেন, এ পাঁচ মামলার কোনোটির এজাহারেই সাবেক মেয়রের নাম ছিল না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পুলিশকে প্রভাবিত করে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করিয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাসির আহমেদ জানান, ‘আইভীকে গ্রেফতারের সময় পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে তখনই নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় পুলিশ বাদি হয়ে অজ্ঞাত এক শ’ থেকে দেড় শ’ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আইভীকে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছেন।’
ফতুল্লা থানার ওসি ইন্সপেক্টর আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের সময় ইয়াসিন, আব্দুর রহমান, পারভেজ ও মোহাম্মদ আবুল হোসেন মিজি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা আইভীকে গ্রেফতার দেখাতে আবেদন করেছেন। তারা তদন্ত করতে গিয়ে এসব মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়ায় এ আবেদন করেন।’
নারায়ণগঞ্জ আদালতের পরিদর্শক মো: কাইয়ুম খান বলেন, এসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ নভেম্বর আইভীকে গ্রেফতার দেখানোর বিষয়ে পুলিশের আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
সাবেক এ মেয়রের আইনজীবী আওলাদ হোসেন বলেন, স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ ও নারায়ণগঞ্জের সাবেক জনপ্রিয় মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভীর জামিনে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রশাসন ও পুলিশকে প্রভাবিত করে আরো মামলায় গ্রেফতার দেখানোর এ আবেদন করিয়েছে। সেই কবে এ মামলাগুলো হয়েছে ও তদন্ত হয়েছে। এতদিন পুলিশ কর্মকর্তারা এ আবেদন না করে তার জামিন হওয়ার পরে কেন করলেন, এটা সবাই বুঝতে পারে।
চলতি বছরের ৯ মে ভোরে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগের নিজ বাসা থেকে আইভীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া তিনটি হত্যা, দু’টি হত্যাচেষ্টা মামলাসহ পৃথক পাঁচ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।



