নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ থেকে শুরু ইলিশ ধরা

Printed Edition

রবিন আহম্মেদ পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী)

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য জারি করা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ইলিশ মাছ ধরা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সাথে সাথে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া, দশমিনা, গলাচিপা ও আশপাশের উপকূলীয় এলাকায় হাজারও জেলে আবারো নদী ও সাগরমুখী হওয়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দীর্ঘ তিন সপ্তাহের কর্মহীনতার পর আবারো কাক্সিক্ষত রুপালি ইলিশ ধরার আশায় জেলেপাড়ায় এখন উৎসবমুখর পরিবেশ।

তবে জেলেদের মুখে আনন্দের পাশাপাশি উদ্বেগের ছাপও স্পষ্ট। কর্মহীন সময়ের আর্থিক কষ্ট, ঋণের চাপ ও সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চনার অভিযোগে অনেকেই চিন্তিত। কেউ জাল সেলাই করছেন, কেউ ট্রলারে বরফ, তেল ও জ্বালানি তুলছেন। আর কেউ নতুন করে ট্রলারের যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক করছেন সব মিলিয়ে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের আশপাশের ঘাটগুলো এখন যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ স্লুইস ঘাটে জেলে হোসেন মিয়া বলেন, ২২ দিন সাগরে যেতে পারিনি, চালের সহায়তাও পাইনি। ধারদেনা করে সংসার চলেছে। এখন আশা করি, ভালো ইলিশ পাবো, ঋণ শোধ করতে পারব। ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের জেলে মান্নান চৌকিদার বলেন, আমরা নিষেধাজ্ঞা মেনে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি, কিন্তু অনেকেই রাতে লুকিয়ে মাছ ধরেছে। এতে ইলিশের ক্ষতি হয়। সবাই যদি নিয়ম মানত, তাহলে মাছ আরো বাড়ত।

মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, রাঙ্গাবালী উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৬ হাজার ৮০৯ জন। এর মধ্যে ১৩ হাজার জেলে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২৫ কেজি করে চাল পেয়েছেন। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃত অনেক জেলে এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের বদলে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বা অপেশাদার জেলেরা তালিকায় নাম তুলে সহায়তা পেয়েছেন। এতে প্রকৃত জেলেদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

অন্য দিকে জেলেদের মধ্যে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে মাত্র ১১ দিনের নিষেধাজ্ঞা। বাংলাদেশের জেলেরা ২২ দিন বসে থাকলেও, ওপারের জেলেরা মাছ ধরেছেন ভারতীয় জলসীমায়। একই বঙ্গোপসাগরে ভিন্ন সময়ের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাংলাদেশের জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছেন এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে। এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হলে ইলিশের প্রজনন অনেকাংশে নিরাপদ হয়। কিন্তু কিছু অসাধু জেলে নিয়ম ভাঙলে এই প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই দেশের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময় সমন্বয় করা গেলে ইলিশ সংরক্ষণ আরো কার্যকর হবে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ইলিশকে নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই এই ২২ দিনের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এখন ডিম থেকে জাটকায় পরিণত হওয়ার সময় আসছে। এ জন্য আগামী ১ নভেম্বর থেকে জাটকা ধরায় আট মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা (১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের কম দৈর্ঘ্যরে ইলিশ) ধরা, বিক্রি, পরিবহন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চললে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের জেলেরা ভবিষ্যতে আরো বেশি উপকৃত হবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।নিষেধাজ্ঞা শেষের এ মুহূর্তে তাই উপকূলের জেলেপাড়াগুলোয় নতুন আশার আলো জ্বলেছে।