খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচি গতকাল মঙ্গলবারও অব্যাহত ছিল। গত সোমবার শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি শুরু হয়। গতকালও শিক্ষার্থীরা শিক্ষক প্রতিনিধিদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাদের দাবিতে অনড় থাকেন। এদিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ভিসি ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত সোমবার বিকেল ৪টায় বিশ^বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অনশনরত চারজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের একজনকে নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া দু’জন বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নেন। অসুস্থ অপর একজনকে গত সোমবার রাতে তার অভিভাবকরা নিয়ে গেছেন।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা জানান, আমরণ অনশনরত চারজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের এক দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো: আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তারের নেতৃত্বে একটি শিক্ষক প্রতিনিধিদল অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করতে আসে। এ সময় শিক্ষকরা অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেন ও তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করাসহ অনশন প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান।
কুয়েটের সিইসি বিভাগের প্রধান প্রফেসর এম এ হাশেম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে এসেছি, একইসাথে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি এভাবে অসুস্থ হয়ে নয়, তোমরা এসো আমরা বসে বিষয়টির সুরাহা করি। শিক্ষার্থীরা আছে বলেই আমাদের মতো শিক্ষকদের প্রয়োজন হয়। তারাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণ, সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে এই বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি এবং এর জন্য শিক্ষার্থীরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
এ ব্যাপারে সন্ধ্যায় কুয়েটের ভিসি ড. মুহাম্মদ মাছুদের মোবাইল ফোনে রিং দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার। গতকাল বিকেলে ফোন করে তাদের খোঁজখবর নেন তিনি। এ সময় ঘটনা তদন্তে আজ বুধবার কুয়েটে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা জানান উপদেষ্টা। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধিদলের আগমনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এ দিকে কুয়েটে এবার রোকেয়া হলের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকেছেন ছাত্রীরা। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তারা হলের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। গত দুই মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আবাসিক হলটিও তালাবদ্ধ ছিল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ গিয়ে হলের প্রধান ফটকের তালা ভাঙার চেষ্টা করেন। তালা ভাঙার পর উল্লাসধ্বনি করেন শিক্ষার্থীরা। নারী শিক্ষার্থীরা হলের চত্বরে ঢোকার পর পুরুষ শিক্ষার্থীরা আবার স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ফিরে আসেন। এরপর নারী শিক্ষার্থীরা হল ভবনের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোকেয়া হলের সামনে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, এখন আমরা ১০-১৫ জন এসেছি। অনেক শিক্ষার্থী বাইরে রয়েছে। তারাও আজ কালকের মধ্যে হলে প্রবেশ করবে।
ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলার মধ্যেই এ ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভাঙেন আন্দোলনকারীরা। তারা ভিসিরি পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে আমরণ অনশন শুরু করেন। গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক হারুনার রশীদ, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তারসহ জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের কয়েকজন অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে আসেন।
এ সময় ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের জন্য মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা রেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অ্যাম্বুলেন্স থাকার পরও আরো দুটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রেখেছি। আমরা মনে করি, কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে, তা পূরণ করা যাবে না। তোমাদের কাছে অনুরোধ, কেউ অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আগেই অন্তত চিকিৎসাসেবাটা গ্রহণ করবে। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি শিক্ষক প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেন। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
ফোন করে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা : এ দিকে গতকাল বিকেলে ফোন করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার। এ সময় তিনি ঘটনা তদন্তে আজ বুধবার কুয়েটে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা শিক্ষার্থীদের জানান। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধিদলের আগমনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, প্রতিনিধিদলকে যদি আসতেই হয় তবে আজ (মঙ্গলবার) রাতের মধ্যেই আসতে হবে। এ বিষয়ে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ব্রিফিং করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এত দিন ধরে আন্দোলন করছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনেক আগেই আমাদের স্মারকলিপি দিয়েছি। এরপর আমাদের দুই মাস অপেক্ষা করতে হলে এখন আবার কিসের তদন্ত কমিটি। স্মারকলিপি যাওয়ার পরও তাহলে কি সেই তদন্তের সুযোগ হয়নি। কেন তদন্ত এখন সরেজমিন এসে করতে হবে? আমরা সেই কমিটিকে পক্ষান্তর করছি এবং আমরা বলতে চাই, আমরা এখনো আমাদের এক দফা দাবিতে অনড়।