ইকবাল হোসেন ইমন
পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান, ভাইবোন, দাদা-দাদী, খাদেম কিংবা পোষ্য প্রাণী-সবাই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম পরিবারের তাৎপর্য ও প্রয়োজনীয়তাকে অনেক ঊর্ধ্বে রেখেছে। তা ছাড়া পরিবারের ভিত্তি হলো দায়িত্বশীলতা, ভালোবাসা ও দয়া। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ (সূরা রুম-২১)
পরিবারে সদস্যদের জন্য ব্যয় করা, তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা, সন্তানের শিক্ষার ব্যয় বহন করা, চিকিৎসার খরচ মেটানো, আরামদায়ক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি সব কিছু পারিবারিক জীবনের আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। বিভিন্ন হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: পরিবারের জন্য এসব ব্যয়কে উৎসাহ দিয়েছেন; এমনকি এটিকে সর্বোত্তম সদকা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
একদিন রাসূলুল্লাহ সা:-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম সদকা কোনটি? তিনি বললেন, ‘স্বল্প সঙ্গতিসম্পন্ন ব্যক্তির কষ্টার্জিত বস্তু হতে সদাকাহ; আর (দানের সময়) অধীনস্তদের থেকে আরম্ভ (অগ্রাধিকার) করো।’ (বুলুগুল মারাম-৬৩৫) অপর এক হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘সর্বোত্তম হলো ওই দিনার, যা কোনো ব্যক্তি পরিবার-পরিজন লালন-পালনের জন্য ব্যয় করে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ-১৯৩২)
পরিবারের জন্য খরচ করলে অন্যান্য জায়গায় খরচ বা দান করার তুলনায় অধিক সাওয়াব ও মর্যাদা লাভ করা যায়। যেমনটি আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘এক রকম দিনার তাই যা তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করো। এক রকম দিনার সেটিই যা তুমি গোলাম আজাদ করার জন্য খরচ করো। এসব দিনারের মধ্যে সাওয়াবের দিক দিয়ে সবচেয়ে মর্যাদাবান হলো যা তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করো।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ-১৯৩১) এ ছাড়াও দান করার সময় রাসূল সা: নিজের পরিবার থেকে শুরু করতে বলেছেন। অর্থাৎ সব দানের ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয়রা সর্বপ্রথম হকদার। সাধারণভাবে নিকটাত্মীয়ের জন্য খরচ করা তো সদকা। আবার বিশেষ কারণে অধিক হকদারও বিবেচিত হতে পারে। একবার মহানবী সা: মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে উপস্থিত লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, ‘দাতার হাত হলো উপরের হাত। আর (দান করা) শুরু করবে তোমার পোষ্যদের থেকে- তোমার আম্মা, আব্বা, ভাইবোন, তারপর ক্রমান্বয়ে তোমার নিকটাত্মীয়।’ (সুনানে নাসায়ি-২৫৩২)
অধিক বিলাসিতা কিংবা অপচয় নয়; বরং প্রয়োজনের স্বার্থে সব ব্যয় সদকা হিসেবে গণ্য হবে। নিজের জন্য কোনো খরচ করা হলেও মুমিনকে আল্লাহ তায়ালা তার বিনিময়ে সওয়াব দিয়ে থাকেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে আদম সন্তান! ধন-সম্পদ দান করো, তোমাকেও দান করা হবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ-১৮৬২)
বিশিষ্ট দ্বায়ী ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. বলতেন, ‘পাঁচ টাকা মসজিদে দান করা অপেক্ষা স্ত্রীর জন্য আইসক্রিম কিনলে আল্লাহ অধিক সাওয়াব দেবেন।’ সমাজের অভাবীদের জন্য খরচ, মসজিদ, মাদরাসাসহ যেকোনো কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করাও ইসলামে অধিক মর্যাদার; প্রয়োজনে অত্যাবশ্যকীয়ও। সাধ্যের মধ্যে সব ক্ষেত্রেই খরচ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বান্দার কোনো সুন্দর কাজকে বৃথা যেতে দেন না। রাসূল সা: বলেছেন, ‘বান্দার সব কাজই তাঁর নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি-১) কোনো ব্যক্তি যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্যও কোনো খরচ করবে, তার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সাওয়াব দেবেন। বিভিন্ন হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, এখানে অধিক সাওয়াবও রয়েছে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া



