রয়টার্স
পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ওয়াশিংটন ও মস্কোর সাথে বেইজিংয়ের অংশগ্রহণকে ‘অযৌক্তিক ও অবাস্তব’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সাথে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের চেষ্টা করছি। রাশিয়া এতে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং আমি মনে করি চীনও রাজি হবে।’ তিনি আরো বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এই শক্তি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ হুমকি। বুধবার এ বক্তব্যের জবাবে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গু জিয়াকুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পারমাণবিক সক্ষমতা মোটেই সমপর্যায়ের নয়। তিনি উল্লেখ করেন, চীন নো-ফার্স্ট-ইউজ নীতি অনুসরণ করে এবং তাদের পারমাণবিক নীতি সম্পূর্ণ আত্মরক্ষামূলক।
তাই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সাথে একই পর্যায়ে আলোচনায় বসার বিষয়টি অযৌক্তিক। মুখপাত্র আরো বলেন, ‘বিশ্বের সর্বাধিক পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোকেই নিরস্ত্রীকরণে নেতৃত্ব দিতে হবে।’ অস্ত্র গবেষণা সংস্থা ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, রাশিয়ার হাতে মোতায়েন ও মজুদ মিলে প্রায় চার হাজার ৩০০ পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে প্রায় তিন হাজার ৭০০। ফলে বিশ্বের মোট অস্ত্রভাণ্ডারের প্রায় ৮৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে এই দুই পরাশক্তি।
অপর দিকে চীনের কাছে আছে মাত্র ৬০০ ওয়ারহেড। যদিও এ সংখ্যা তাকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি বানিয়েছে, তবে তা যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার তুলনায় অতি সামান্য। চীনের পরের অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্স (২৯০) ও ব্রিটেন (২২৫)। এ দিকে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির মেয়াদ দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। নিউ স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিটি (নিউ স্টার্ট), যা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ওপর সীমা আরোপ করে, সেটি শেষ হবে ২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি।
এর আগে স্নায়ুযুদ্ধকালীন গুরুত্বপূর্ণ এবিএম (১৯৭২) ও আইএনএফ (১৯৮৭) চুক্তি ভেঙে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ২০০২ সালে এবিএম এবং ২০১৯ সালে আইএনএফ থেকে একতরফাভাবে সরে আসে, যদিও মস্কোকে দায়ী করে ওয়াশিংটন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি নতুন একটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে তিন পরাশক্তির মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়নের প্রতিযোগিতা চলছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক মূল্যায়ন বলছে, চীন তার অস্ত্রভাণ্ডার দ্রুত আধুনিকীকরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এই প্রবণতা বিশ্বে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারে। ওয়াশিংটন দীর্ঘ দিন ধরে বেইজিংকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও চীন বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাবকে ঘিরে আবারো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।



