ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা শুরু

রয়টার্স
বিবিসি
Printed Edition
ইস্তাম্বুলের ডলমাবাহচে প্রাসাদে ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনার বৈঠকে ইউক্রেন, আমেরিকান ও রাশিয়ান প্রতিনিধিরা : ইন্টারনেট
ইস্তাম্বুলের ডলমাবাহচে প্রাসাদে ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনার বৈঠকে ইউক্রেন, আমেরিকান ও রাশিয়ান প্রতিনিধিরা : ইন্টারনেট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধের ইতি টানতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপে তিন বছরেরও বেশি সময় পর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে প্রথম শান্তি আলোচনায় বসেছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। গতকাল শুক্রবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বৈঠকের আগে ইস্তাম্বুলের ডলমাবাচে প্রাসাদে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও ইউক্রেনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক ও ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত কিথ কেলগ। ইউক্রেনের দলে আছেন তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তম উমেরভ, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা।

আলোচনায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি পরিকল্পনা পরিচালক মাইকেল অ্যান্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেবেন বলে জানিয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। রুশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে আছেন ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদিনস্কি। তার সাথে আছেন রাশিয়ার একজন উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। গত বৃহস্পতিবার জেলেনস্কির ঘোষণা অনুযায়ী, ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তার সাথে আছেন ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার উপপ্রধান, সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফের উপপ্রধান ও উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

যুদ্ধ থামাতে কূটনৈতিক পর্যায়ে যে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, বসফোরাসের তীরে ডলমাবাচে প্রাসাদে এই বৈঠক তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে; কেননা উভয়পক্ষ ২০২২ সালের মার্চের পর আর একে অপরের সাথে মুখোমুখি বসেনি। তবে এ বৈঠকে বড় কোনো ‘ব্রেক থ্রু’র সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, তার ওপর বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছেন, তার এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠক ছাড়া পরিস্থিতির বড় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, শুক্রবার প্রথমে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসবেন, এরপর তুরস্ক, রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে আলোচনা শুরু হবে।

এ আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন পুতিনই। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপের নেতারা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে রুশ প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ দিয়ে আসছিলেন। তার প্রতিক্রিয়ায় পুতিন রাশিয়া-ইউক্রেন সরাসরি বৈঠকের প্রস্তাব দেন। বৈঠকে পুতিনের উপস্থিতি নিয়ে পশ্চিমা মহলে এক ধরনের আশাবাদ তৈরি হলে জেলেনস্কিও বৈঠকে যোগ দেয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। ট্রাম্প বলেন, পুতিন ও জেলেনস্কি বৈঠকে বসলে তিনিও তাতে যোগ দেবেন।

কিন্তু পরে ক্রেমলিন যে প্রতিনিধি দলের তালিকা প্রকাশ করে তাতে পুতিনের নাম না থাকায় বৈঠককে ঘিরে আশা ফিকে হয়ে যায়। জেলেনস্কি পরে বলেন, বৈঠকে পুতিনের উপস্থিত হতে না চাওয়াতেই বোঝা যায় যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারে তিনি খুব একটা আগ্রহী নন। মস্কো বলছে, তারা এ আলোচনাকে ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে হওয়া আলোচনার ধারাবাহিকতা হিসেবেই দেখতে চায়। পুতিনে ইউক্রেনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ নামার কয়েক সপ্তাহ পর হওয়া ওই বৈঠকে রাশিয়া ইউক্রেনকে তাদের সামরিক বাহিনীর আকার কয়েক গুণ ছোট করে ফেলাসহ কিইভের জন্য ‘অস্বস্তিজনক’ সব প্রস্তাব দিয়েছিল। রুশ বাহিনীর দখলে এখন যুদ্ধ-পূর্ববর্তী ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূমি। পুতিনের এখনকার দাবিগুলো হচ্ছে, রাশিয়ার দখলে যাওয়া ভূমিগুলো ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে, ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আশা চিরতরে ত্যাগ করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হতে হবে। এসব দাবি মানাকে ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবেই দেখছে কিয়েভ; তারা দাবিগুলো তো প্রত্যাখ্যান করছেই উল্টো যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশের কাছ থেকে ভবিষ্যতের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছে।