রাজধানীতে প্রাণিমেলা শেষ

বিরল গরু-ছাগল-পাখি দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল

কাওসার আজম
Printed Edition
পুরনো বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গনে প্রাণিসম্পদ মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়  : নয়া দিগন্ত
পুরনো বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গনে প্রাণিসম্পদ মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় : নয়া দিগন্ত

শেষ দিনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ রীতিমতো প্রাণিকুলের এক উৎসবে পরিণত হয়। সকাল গড়াতেই বড়দের হাত ধরে ছোট শিশু, নতুন উদ্যোক্তা, খামারি, পশুপাখিপ্রেমী- সব বয়সী মানুষের ঢল নামতে থাকে। তিন দিনব্যাপী ‘প্রাণিসম্পদ মেলা-২০২৫’ শুক্রবার রাতে শেষ হলেও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল ঈদের মেলার মতো। জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এই আয়োজন প্রাণিসম্পদ খাতের অগ্রগতি, বাজার সম্ভাবনা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে এক মঞ্চে এনেছে বলে খামারি ও উদ্যোক্তারা মনে করছেন।

দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে দামি ও বিরল জাতের গরুর প্রদর্শনী। দেশী-বিদেশী উন্নত জাতের গাভী ও ষাঁড়ের সারিতে ছিল হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, ব্রাহমা, দেশীয় হাইব্রিডসহ নানা জাতের গরু। কয়েকটি গরুর দাম ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকা হয়। এক টন ওজনের শাহীওয়াল জাতের একটি ষাঁড়ের দাম ১২ লাখ টাকা বলা হলেও ২০ লাখের নিচে বিক্রি করবেন না বলে জানান বিক্রেতা। খামারিরা বলছেন, ভালো জাতের প্রদর্শনী নতুন উদ্যোক্তাদের প্রাণিসম্পদ ব্যবসায় আকৃষ্ট করছে।

গরুর পাশাপাশি ভেড়া-ছাগলের স্টলগুলোও ছিল সমান সরগরম। তোতাপুরী, বিটল, যমুনাপাড়ি- উন্নত জাতের বড় আকারের ছাগল দেখে তরুণ উদ্যোক্তাদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। ছিল নানা জাতের গাড়ল, দুম্বাসহ বিদেশী জাতের ভেড়াও।

অনেকেই বাণিজ্যিক খামার বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন স্টলে গিয়ে খাদ্য, চিকিৎসা ও পরিচর্যা সম্পর্কে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করেন। দর্শনার্থীরা অভিযোগ করেন, গত বছরের তুলনায় এবার মেলা নিয়ে প্রচারণা তুলনামূলক কম ছিল, তবে আয়োজনে ঘাটতি ছিল না।

মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল শৌখিন পোষা প্রাণির প্যাভিলিয়ন। আফ্রিকান গ্রে প্যারট, ম্যাকাও, কাকাতুয়া, লাভবার্ড ও নানা রঙের ফিঞ্চের কলতানে পুরো জায়গা মুখরিত ছিল। শখের পাখিপ্রেমীরা বিরল জাত সংগ্রহে ভিড় করেন। শিশুরা বড় গরু দেখে যতটা বিস্মিত, রঙিন পাখি দেখে ততটাই উচ্ছ্বসিত। কেউ সেলফি তুলছে, কেউ পোষা প্রাণিদের খাবার, পরিচর্যা বা প্রশিক্ষণ সম্পর্কে খামারিদের কাছ থেকে শোনার সুযোগ নিচ্ছে- সবমিলিয়ে মেলা যেন এক ইন্টারেক্টিভ শেখার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

আয়োজকরা বলেন, অংশগ্রহণ, উদ্যোক্তা উপস্থিতি ও বেচাকেনা- সবদিক থেকেই এবারের আয়োজন আগের বছরের তুলনায় বেশি সাড়া পেয়েছে। তারা আশা করছেন, শেষ দিনে রেকর্ডসংখ্যক দর্শনার্থী মেলা পরিদর্শন করবেন।

এ দিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য দেশীয় প্রাণিসম্পদ খাতকে শক্তিশালী করা এবং উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। তিনি স্পষ্ট করেন, অনিরাপদ বিদেশী প্রাণিজ সম্পদ আমদানির পক্ষে নয় সরকার। বরং দেশীয় খামারকে উন্নত করে শুধু স্থানীয় বাজার নয়, রফতানিযোগ্য উৎপাদনেও জোর দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘২০২৬ সালে এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। কাক্সিক্ষত সক্ষমতা পুরোপুরি তৈরি না হলেও সিদ্ধান্ত নিতে হবেই। তবে খাতকে প্রস্তুত করতে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানো জরুরি।’ পোলট্রি সেক্টরের সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি জানান, ভুট্টা ও সয়াবিনের মতো প্রধান খাদ্যশস্যের দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য ফিড সঙ্কট মোকাবেলা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাণিমেলা আয়োজন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় জাতের উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গবেষণা-উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়ালে প্রাণিসম্পদ খাত আগামী বছরগুলোতে দেশের অর্থনীতিতে আরো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে।

‘দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি : প্রাণিসম্পদে হবে উন্নতি’ প্রতিপাদ্যে এবারই প্রথম রাজধানীসহ সারা দেশে একযোগে পালিত হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ-২০২৫। তারই অংশ এই মেলা, যেখানে গরু, ছাগল, ভেড়া, পাখি, খাদ্য, প্রযুক্তি, ওষুধ সবকিছুু এক প্ল্যাটফর্মে মিলেছে। শেষ দিনে প্রাণবন্ত জনসমাগমই প্রমাণ করছে, খাতের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং সম্ভাবনা এখন অনেক বিস্তৃত।