দুর্গম পাহাড়ে শিক্ষার নতুন আলো

রাঙ্গামাটিতে সৌরবিদ্যুৎচালিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম

এ উদ্যোগে ঝরে পড়ার হার কমবে, শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি বাড়বে এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে বড় বিষয়, পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও সমানভাবে আধুনিক শিক্ষায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

পুলক চক্রবর্তী, রাঙ্গামাটি
Printed Edition

বিদ্যুতের অভাবে পিছিয়ে থাকা পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে যাচ্ছে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে সম্প্রতি চালু হলো সৌরবিদ্যুৎচালিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। ইউএনডিপি ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহায়তায় বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের লক্ষ্য, বিদ্যুৎবিহীন দুর্গম এলাকায়ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা পৌঁছে দেয়া।

এ সিস্টেমের বিশেষত্ব হলো এটি সম্পূর্ণ সৌরবিদ্যুৎচালিত। জাতীয় গ্রিডের সীমাবদ্ধতার বাইরে থেকেও বিদ্যালয়গুলো এখন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিতে পারবে। ফলে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা প্রথমবারের মতো প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানের সুযোগ পাচ্ছে। শুধু সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, মাদরাসা, অনাথাশ্রম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ও এ সুবিধার আওতায় আসবে।

সৌরশক্তি ব্যবহারের কারণে এটি পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এ উদ্যোগে ঝরে পড়ার হার কমবে, শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি বাড়বে এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে বড় বিষয়, পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও সমানভাবে আধুনিক শিক্ষায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

সম্প্রতি জেলা পরিষদ ভবনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বলেন, ‘দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা যেন প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় পিছিয়ে না পড়ে, এ প্রকল্প তাদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনা।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সদস্য দেব প্রসাদ দেওয়ান, বৈশালী চাকমা, সাগরিকা রোয়াজা, নাইউপ্রু মারমা, মিনহাজ মুরশীদসহ শিক্ষাখাতের কর্মকর্তারা। সভাপতিত্ব করেন সদস্য ও শিক্ষা আহ্বায়ক বৈশালী চাকমা।

প্রথম পর্যায়ে জেলার ১০ উপজেলার ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সিস্টেম সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মোট ১৪১টি প্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে, এর মধ্যে ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৬টি নিম্ন-মাধ্যমিক, ৫৪টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৫টি প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠান ও ১৬টি কলেজ রয়েছে। বিতরণের পর বিদ্যালয় প্রধানদের সিস্টেম স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন ইনোভেশন এক্সপার্ট তৌফিকুর রহমান।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎবিহীন পাহাড়ি অঞ্চলে এ উদ্যোগ শুধু শিক্ষার মানোন্নয়নই নয়; বরং পাহাড়ি জনপদে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।