৩০ বছর শিকলে বন্দী সাইফুলের মানবেতর জীবন

মানসিক ভারসাম্যহীন সাইফুলকে নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন মা রহিমা বেগম। রহিমা বেগম স্বামীসহ জমিজমা হারিয়ে ভিক্ষা করে ছেলের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা

Location :

Ghatail
Printed Edition
৩০ বছর শিকলে বন্দী সাইফুলের মানবেতর জীবন
৩০ বছর শিকলে বন্দী সাইফুলের মানবেতর জীবন

৩০ বছর ধরে পায়ে লোহার শিকলে বন্দী জীবন পার করছেন ৩৭ বছরের যুবক সাইফুল। মানসিক ভারসাম্যহীন সাইফুলকে নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন মা রহিমা বেগম। সাইফুল ঘাটাইল পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ধারিয়াল গ্রামের মৃত বহর আলী ছেলে। বহর আলী প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। রহিমা বেগম স্বামীসহ জমিজমা হারিয়ে ভিক্ষা করে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, ঘরের বারান্দার খুঁটির সাথে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে সাইফুলকে। কখনো দাঁড়িয়ে আবার কখনো বসে সময় কাটছে তার। বারান্দায় মাটিতেই বিছানা পাতানো রয়েছে। সেখানেই শুয়ে থাকে সে। সাইফুলকে শিকল থেকে খুলে দিলেই মানুষকে কামড় দিতে চায়। যাকে সামনে পায় তাকে জাপটে ধরে। ছাড়া পেলে শরীরের কাপড় খুলে ঘুরে বেড়ায় বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

মা রহিমা বেগম বলেন, সাইফুলের যখন আট বছর বয়স তখনই পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে দেয়া হয়। যা এখন পর্যন্ত চলছে। শিকল খুলে দিলেই বড় বড় চোখ করে মানুষের দিকে এগিয়ে যায়। মানুষকে কামড়ে ধরে। ছোটবেলায় বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজের পেছনে ঘুরেছি চিকিৎসা করাতে পারিনি। ডাক্তার কবিরাজ রোগ ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর চিন্তা করেছিলাম। ভালো বুঝদার অভিভাবকের অভাবে মানসিক হাসপাতালেও নেয়া হয়নি।

রহিমা বেগম বলেন, পথে ঘাটে ভিক্ষা করে ছেলেকে খাওয়াচ্ছি। সরকারের দেয়া ঘরে আছি। সরকার থেকে ছেলের নামে দুই হাজার ৫০০ টাকা ও আমার নামে এক হাজার ৮০০ টাকা ভাতা পেয়ে তা দিয়ে সংসার চলে না। যে কারণে চিকিৎসা বাদ দিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে বেঁচে আছি।

স্থানীয় বাসিন্দা নাজিম বলেন, ছোটবেলা থেকে সাইফুল মানসিক ভারসাম্যহীন। তিন-চার বছর ধরে তার পাগলামি বেড়ে গেছে। গ্রামের মানুষ যতটুকু পারছে সহযোগিতা করছে।

স্থানীয় জালাল হোসেন বলেন, আমাদের সমবয়সী হবে সাইফুল। দারিদ্রতার কারণে সঠিক সময়ে সাইফুলের চিকিৎসা করা হয়নি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান সরকার বলেন, তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা ও তার মাকে সরকারিভাবে ভাতা দেয়া হচ্ছে। আমাদের যতটুকু সুযোগ ছিল করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, সাইফুল এরইমধ্যে ভাতার আওতায় রয়েছেন। ভাতাভুক্ত থাকার পরেও যদি তার চলতে কষ্ট হয়- তাহলে উপজেলা প্রশাসন অবশ্যই তার পাশে দাঁড়াবে। তার পুণর্বাসন করার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো আমরা করব।