সাক্ষাৎকার

ডান-বাম-মধ্যপন্থী সবাইকে নিয়ে ঢাবির উন্নয়নে কাজ করব

ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম

এই বিজয় আমার কাছে শুধু একটি ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি হচ্ছে জুলাই শহীদদের আকাঙ্খার বিজয়। এটি সেই জুলাই প্রজন্মের বিজয়, যারা পরিবর্তন ও উন্নতির স্বপ্ন দেখেছিল।

হারুন ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Printed Edition

গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ২০২৫ এ সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী আবু সাদিক কায়েম । ২৪’র গণঅভ্যুত্থানে তিনি সম্মুখ সারির একজন নেতা ছিলেন।

দৈনিক নয়া দিগন্তের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনের সময় শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে যে প্রত্যাশা রেখেছেন এবং আমরা তাদের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেটাই বাস্তবায়ন করা আমাদের প্রধান কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা পূরণ করা এবং প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করাই আমাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশে যদি কোনো জাতীয় সঙ্কট সৃষ্টি হয়, যদি সারা দেশে কেউ অন্যায়ের শিকার হয়, তা হলে আমরা অবশ্যই এই প্লাটফর্ম থেকে প্রতিবাদ জানাবো। জুলাই বিপ্লবে যেভাবে আমরা সবাই এক বিন্দুতে মিলিত হয়ে ফ্যাসিবাদ হটিয়েছিলাম, ঠিক তেমনভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ডান, বাম, মধ্যপন্থী সবার অংশগ্রহণে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক নয়া দিগন্তের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হারুন ইসলাম

নয়া দিগন্ত : ডাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে বিজয়ী হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। এই বিজয়কে আপনি কীভাবে দেখছেন? আপনার অনুভূতি কী?

আবু সাদিক কায়েম : এই বিজয় আমার কাছে শুধু একটি ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি হচ্ছে জুলাই শহীদদের আকাক্সক্ষার বিজয়। এটি সেই জুলাই প্রজন্মের বিজয়, যারা পরিবর্তন ও উন্নতির স্বপ্ন দেখেছিল। এই ফলাফল স্পষ্ট করে যে শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতি যে আস্থা রেখেছে, তা কতটা গভীর। আমার প্রাথমিক অনুভূতি হচ্ছে এক গভীর কৃতজ্ঞতা এবং একই সাথে একটি বিশাল দায়িত্ববোধ। নির্বাচনী প্রচারণার সময় আমরা শিক্ষার্থীদের যে কমিটমেন্টগুলো দিয়েছিলাম তাদের প্রত্যাশা, তাদের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যে পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছেন, আমরা সেই পরিবর্তন নিয়ে আসবো ইনশা আল্লাহ।

নয়া দিগন্ত : আপনাদের প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ শিক্ষার্থীদের বিপুল সমর্থন পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই সমর্থনের পেছনের মূল কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

আবু সাদিক কায়েম : শিক্ষার্থীরা জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী যে ধরনের ছাত্র রাজনীতি চেয়েছে সেই রাজনীতির রূপরেখা আমরা হাজির করেছি। আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে সেটা প্রমাণ করেছি এবং এক বছর জুড়ে জুলাই আকাক্সক্ষাকে ধারণ করা, শহীদদেরকে শহীদদের আকাক্সক্ষা ধারণ করা, জুলাইকে সাংস্কৃতিকভাবে প্রাসঙ্গিক রাখা এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া প্রশাসনের কাছে উত্থাপন করা, শিক্ষার্থীদের যে মৌলিক সমস্যাগুলো আছে সেগুলোকে এড্রেস করার চেষ্টা করেছি। আমাদের ব্যক্তিত্ব, আমাদের সততা, দক্ষতা, একনিষ্ঠতা সেটার উপর শিক্ষার্থীরা আস্থা রেখেছে। গত এক বছর জুড়ে আমাদের কাজ এবং বিপ্লবে আমাদের ভূমিকা- এ সব কিছু শিক্ষার্থীদের মন জয় করেছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের পবিত্র আমানত আমাদের উপর রেখেছে। শিক্ষার্থীদের সেই আস্থা যথাযথভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করব।

নয়া দিগন্ত : ভিপি হিসেবে আপনার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য কী হবে? কোন কোন বিষয়গুলোকে আপনি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেবেন?

আবু সাদিক কায়েম : আমরা মনে করি, বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ হলো এর নীতিগত (পলিসিগত) জায়গায় সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করা। আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান বেশির ভাগ সঙ্কটই কৃত্রিমভাবে তৈরি করে রাখা হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের মূল লক্ষ্য হলো প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। এই লক্ষ্যে, আমরা কিছু মৌলিক অগ্রাধিকার চিহ্নিত করেছি, যা আমাদের কাজের মূল ভিত্তি: ১. একাডেমিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি: বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক কেন্দ্রে পরিণত করা। এর জন্য গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং লাইব্রেরি সুবিধা উন্নত করা অপরিহার্য। ২. শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও কল্যাণ: শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট দ্রুত দূর করা, খাদ্যের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ৩. নিরাপদ ক্যাম্পাস: একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা, যেখানে সব শিক্ষার্থী নির্ভয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণে মনোযোগ দিতে পারবে।

এই অগ্রাধিকারগুলো আমাদের অধিকার এবং এর ভিত্তিতেই আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনা বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করে নিয়েছি। এই পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর এবং আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা জায়গায় সঠিক পলিসি ঠিক করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এনভায়রনমেনটাকে ফিরে নিয়ে আসাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

নয়া দিগন্ত : আপনি ‘শিক্ষার্থীবান্ধব’ এবং ‘নিরাপদ ক্যাম্পাসের’ কথা বলেছেন। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য এবং সার্বিকভাবে ক্যাম্পাসের পরিবেশ উন্নত করতে আপনার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাগুলো কী কী?

আবু সাদিক কায়েম : বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি, যার প্রথম ধাপ হলো ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখা। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য ক্যাম্পাসের মূল প্রবেশ পথগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফদের যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। একই সাথে, হলগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রতিটা হলের প্রবেশপত্রকে ডিজিটালাইজেশন করার কাজ শুরু হচ্ছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা একটি ডিজিটাল কমপ্লেন বক্স স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি। এই বক্সে আসা অভিযোগগুলো নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। যারা হয়রানি বা শ্লীলতাহানির মতো অপরাধ করবে, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আমাদের নীতি কার্যকর থাকবে। সামগ্রিকভাবে ক্যাম্পাসে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সকল প্রকার ভোগান্তি উচ্ছেদ করতে অভিযান চালু থাকবে।

এ ছাড়া নিরাপত্তার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধন এবং পরিবেশ উন্নয়নেও আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। এর অংশ হিসেবে আমরা প্রতি মাসে ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন’ কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাস্তাঘাট এবং সমগ্র ক্যাম্পাসকে সবুজায়ন ও সাজিয়ে তোলা হবে। একই সাথে, ক্যাম্পাসের যে জলাভূমি রয়েছে, সেগুলোকে নতুনভাবে তৈরি করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নয়া দিগন্ত : ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পোশাকের স্বাধীনতার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং এ নিয়ে যেকোনো ধরনের হয়রানি রুখতে আপনার ভূমিকা কী হবে?

আবু সাদিক কায়েম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি মাল্টিকালচার ইনস্টিটিউট। এই ক্যাম্পাসে বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্র হিসেবে যাতে গড়ে উঠতে পারে তার জন্য আমরা কাজ করব। এখানে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, রুচি ও মতাদর্শ স্বাধীনভাবে অনুসরণ ও চর্চা করার সুযোগ রয়েছে। আমরা শুরু থেকেই সহঅধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছি। কারো নিজস্ব স্বাধীনতার যাতে কেউ কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করতে না পারে তার জন্য কাজ করব। আমরা চাই প্রত্যেকেই নিজের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী পোশাক পরিধান ও মত প্রকাশ করতে পারবেন, আর এতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না।

নয়া দিগন্ত : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পুরনো সমস্যা আবাসন সঙ্কট। এই সমস্যা সমাধানে আপনার প্যানেলের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা আছে কি?

আবু সাদিক কায়েম : বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সমস্যা হলো আবাসন সঙ্কট। এই সঙ্কট নিরসনে আমরা ইতোমধ্যেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। নতুন হল নির্মাণের বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি এবং বিভিন্ন ধাপ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তবে হল নির্মাণে সময় লাগবে, তাই এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসনের বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালের মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ভাতার ব্যবস্থা করার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। আমাদের পরিকল্পনা হলো, প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন প্রথম বর্ষ থেকেই একটি সুন্দর বিছানা, সুষ্ঠু কক্ষ এবং পড়ার টেবিল পায় সে নিশ্চয়তা দেয়া। বিশেষভাবে নারী শিক্ষার্থীদের আবাসনের বিষয়টি আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তাদের জন্য আবাসন ভাতা এবং নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা চলছে। দীর্ঘমেয়াদে পর্যাপ্ত নতুন হল নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট সমাধানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নয়া দিগন্ত : আপনি শিক্ষক-শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ব্যবস্থা এবং সহশিক্ষামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করেছেন। এই বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে কাজ করবেন?

আবু সাদিক কায়েম : আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা যেন তাদের শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা চালু করা হবে। শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি কার্যকর করার পাশাপাশি শিক্ষকদের পদোন্নতি কেবল তাদের গবেষণা, একাডেমিক কাজ ও শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে, কোনো দলীয় বিবেচনায় নয়। একইভাবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং মেধাভিত্তিক করার চেষ্টা করা হবে। এখানে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা চাপিয়ে দেয়া প্রভাবের সুযোগ থাকবে না। শুধুমাত্র যোগ্যতা, একাডেমিক উৎকর্ষতা ও সঠিক মানদণ্ডের ভিত্তিতেই নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের সহশিক্ষা কার্যক্রমকে আরো শিক্ষার্থীবান্ধব ও প্রাণবন্ত করে তোলার উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীরা এসব কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারবে, যাতে তারা দক্ষতা উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত বিকাশের সুযোগ পায়। পাশাপাশি বিভিন্ন পার্টটাইম কাজের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগও সৃষ্টি করা হবে। এসব বাস্তবায়নে আমরা বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলোচনা করছি এবং কার্যকর কর্মপন্থা গ্রহণ করছি।

নয়া দিগন্ত : অতীতে ছাত্র সংসদগুলোর বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাব বলয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে এবারের ছাত্র সংসদের স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা বজায় রাখার ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?

আবু সাদিক কায়েম : শুরু থেকেই আমরা বলেছি ব্যক্তিগত আদর্শ থাকতে পারে, কিন্তু দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করব। আমাদের ওপর শিক্ষার্থীরা যে আমানত রেখেছে, আমাদের কাজ হলো সেই আমানতের প্রতিফলন ঘটানো। কোনো দলের অনুসারী হয়ে কিংবা গোষ্ঠীগত রাজনীতি করে দায়িত্ব পালন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে যে প্রত্যাশা রেখেছে এবং আমরা তাদের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেটাই বাস্তবায়ন করা আমাদের প্রধান কাজ। আমরা চাই নতুন এক ধরনের ছাত্ররাজনীতি গড়ে তুলতে, যা জাতির সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। আমরা এক বছরের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমাদের নেতৃত্ব, ব্যক্তিত্ব, কাজের প্রতি সততা ও নিষ্ঠা প্রমাণ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা পূরণ করা এবং প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করাই আমাদের দায়িত্ব। শিক্ষার্থীদের কাজ হলো আমাদের কাছে প্রশ্ন তোলা, আর আমাদের কাজ হলো সেই প্রশ্নের জবাব দেয়া এবং দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করা। বাংলাদেশে যদি কোনো জাতীয় সঙ্কট সৃষ্টি হয়, যদি সারা দেশে কেউ অন্যায়ের শিকার হয়, তা হলে আমরা অবশ্যই প্রতিবাদ জানাবো। তবে সেটা কোনো একক দলের ভিত্তিতে নয়, বরং ন্যায় ও সত্যের ভিত্তিতে। জুলাই বিপ্লবে যেভাবে আমরা সবাই এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছিলাম, ঠিক তেমনভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডান, বাম, মধ্যপন্থী- সবার অংশগ্রহণে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলা হবে, যা দেশের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

নয়া দিগন্ত : যারা আপনাদের ভোট দেয়নি বা আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের সমর্থক, তাদেরসহ সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর অধিকার আদায়ে আপনারা কীভাবে কাজ করবেন? বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা কী।

আবু সাদিক কায়েম : এবারের ডাকসু নির্বাচনে এখানে কোনো ব্যক্তিগত জয় হয়নি; এখানে জয় হয়েছে জুলাই প্রজন্মের। যারা প্রার্থী ছিলেন, তারা সবাই আমাদের সহযোদ্ধা। আমরা জুলাই বিপ্লবের সময় এক সাথে আন্দোলন করেছি, এক সাথে ক্যাম্পাসে এক বছর কাজ করেছি। নির্বাচনের পরও আমরা বলছি আমরা যারা সহযোগী ছিলাম, আমরা প্রত্যেকে আমাদের উপদেষ্টা, তাদের ইশতেহার ও প্রত্যাশা এক সাথে বাস্তবায়ন করতে চাই। এই জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন এক দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক বা আদর্শিক ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ প্রশ্নে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নে আমরা সবাই এক সাথে কাজ করতে প্রস্তুত। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আমরা ইতোমধ্যেই সবার সাথে যোগাযোগ করেছি এবং তারা আমাদের সহযোগিতা করছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঐক্য বজায় রেখে একসাথে স্বপ্নের ক্যাম্পাস নির্মাণে কাজ করব। এভাবে সারা দেশে গণতন্ত্রের এক অনন্য নজির স্থাপন করা সম্ভব হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে সবার জন্য সমানভাবে অংশগ্রহণমূলক। এখানে কোনো দলীয়, আদর্শিক বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ থাকবে না।

এই যাত্রায় ইতোমধ্যে সবার সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের সহযোগিতা করছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা এক সাথে আমাদের স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলব। শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবি ও প্রত্যাশা আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পূরণ করব। সবাই জুলাই প্রশ্নে, বাংলাদেশ প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শহীদদের আকাক্সক্ষার আলোকে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এ ক্যাম্পাস হবে সবার ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার আলোকে আমরা একটি স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ে তুলব, যেখানে সবাই এক সাথে কাজ করবে।