বিদেশগামী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ নেয়ার আবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান অফিসে না গিয়েও করা যাবে। তারা ইচ্ছা করলে প্রশিক্ষণ নেয়ার আবেদন নিজ ঘরে বসেই সম্পন্ন করতে পারবেন। সম্প্রতি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এ-সংক্রান্ত একটি অত্যাধুনিক সফটওয়্যার নির্মাণের কাজ শেষ করেছে। সেই সফটওয়্যার ব্যবহার করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিদেশগামী শ্রমিকদের ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্ন ও সার্টিফিকেট বিতরণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বিগত এক বছরে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সম্পাদিত কর্মসংস্থান সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের তথ্য উল্লেখ করে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়। এর মধ্যে বিদেশগামী কর্মীদের ঘরে বসে প্রশিক্ষণের আবেদন ও ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্সের বিষয়ও উল্লেখ রয়েছে।
বিএমইটি সূত্রে জানা যায়, এই প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্লিয়ারেন্সের অংশবিশেষ অত্যাধুনিক সফটওয়্যার নির্মাণের কাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে শুরু হয়ে একই বছরের এপ্রিলে শেষ হয়। অত্যাধুনিক ওই সফটওয়্যরের নাম দেয়া হয়েছে ঃৎধরহরহম.নসবঃ.মড়া.নফ -এর মাধ্যমে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তিসহ মোট পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ২০ জনকে অনলাইনে পিডিও সার্টিফিকেট, ১২ হাজার ৫৫৫ জনকে হাউজ কিপিং সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে। বর্তমানে ১০৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) এবং ছয়টি আইএমটিতে শতভাগ ভর্তি, হাজিরা এবং সনদ ইস্যু করার কাজ চলমান রয়েছে বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বিএমইটির পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বল্পমেয়াদি নিয়মিত প্রশিক্ষণ কোর্স-সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিএমইটির আওতাধীন ১০৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে স্বল্পমেয়াদি নিয়মিত কোর্সে গত বছর থেকে প্রথমবারের মতো প্রশিক্ষণার্থীদের দৈনিক ১৫০ টাকা হারে আপ্যায়ন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। বিগত এক বছরে বিএমইটি কর্তৃক পরিচালিত ১০৪টি টিটিসি থেকে ৫৫টি ট্রেডে মোট এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৩৯ জনকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো: আশরাফ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এই মুহূর্তে প্রি-ডিপারচার ওরিয়েনটেশন (পিডিও) এবং হাউজ কিপিং প্রশিক্ষণার্থীদের আবেদন শতভাগ ঘরে বসেই করা যাচ্ছে। তবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে মেকানিক্যাল ট্রেডসহ সব ট্রেডের প্রশিক্ষণের শতভাগ অনলাইন আবেদন গ্রহণ ঘরে বসেই শুরু হবে। এসব আবেদনকারীকে আর পরবর্তী সময়ে বিদেশ যাওয়া সংক্রান্ত ক্লিয়ারেন্স নিতে গেলে ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সব পাওয়া যাবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা চাই কোনো ধরনের হয়রানি-ভোগান্তি ছাড়াই কিভাবে বিদেশগামীরা ট্রেনিং শেষ করতে পারবেন সেটিই আমাদের এখন প্রধান কাজ। সেভাবেই আমি সারা দেশের ট্রেনিং সেন্টারগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং করছি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মো: আশরাফ হোসেন বলেন, আগে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হতো। এগুলো এখন অনেক কমে আসছে। আশা করছি সামনে আরো কমবে। এর জন্য যা যা করা দরকার আমরা সেভাবেই কাজ চালাচ্ছি। রাতারাতি অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না।
উল্লেখ্য, জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর আওতাধীন সারা দেশের কারগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য যুগোপযোগী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা, চাহিদাভিত্তিক বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক বা বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনা করা এবং শিক্ষানবিস প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সার্বিক বিষয় সমন্বয় করা।
বিদেশগামী ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভর্তি হওয়াদের কারো কারোর অভিযোগ, বিএমইটির আওতাধীন সারা দেশের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের চিহ্নিত কিছু টিটিসিতে নানা কৌশলে বিদেশগামী কর্মীদের সাথে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো জেলায় প্রশিক্ষণার্র্থীরা সঠিক প্রশিক্ষণও পাচ্ছেন না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
এই প্রসঙ্গে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: আশরাফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, অনিয়ম কমাতে চেষ্টা করছি। একটু সময় লাগবে। আমি যোগদান করার পর ট্রেনিং-সংক্রান্ত অনিয়মের দুই হাজার ৩০০ অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছি।