সাফল্যে ২ বন্ধুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
Printed Edition
ডব্লিউডির কোচ আনোয়ারের সাথে আরামবাগ কোচ রিদন (ডানে)
ডব্লিউডির কোচ আনোয়ারের সাথে আরামবাগ কোচ রিদন (ডানে)

বাংলাদেশ প্রিমিয়ারে আগামী সিজনের জন্য নবাগত দলের সম্মান পেতে যাচ্ছে পিডব্লিউডি। তারা এবারের বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের চ্যাম্পিয়ন। অন্য দিকে বিসিএল রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ারে ফিরল আরামবাগ ক্রীড়া সঙ্ঘ। এটা পুরাতন খবর। তবে অনেকেরই অজানা এ দুই দলের কোচ ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একজন পিডব্লিউডির আনোয়ার হোসেন। অপর জন আরামবাগের আকবর হোসেন রিদন। তারা উভয়েই ১৯৯৬ ব্যাচে এসএসসি পাশ করা ছাত্র। এক সাথেই অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলে খেলেছেন । অনূর্ধ্ব- ২৩ জাতীয় দলেও একত্রে ডাক পাওয়া। ক্লাব ফুটবলে এক সাথেই মোহামেডানের সাদাকালো জার্সি গায়ে তুলেছেন। আর এবার একত্রেই দুই ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবকে তুলেছেন বিপিএলে। খেলোয়োড়ি লাইফে দু’জনই খেলেছিলেন আরামবাগ ও ফেনী সকারে।

এবারের বিসিএলে বেশ কিছু কম বয়সী কোচের উপস্থিতি। এদের মধ্যে অন্যতম এই আনোয়ার ও রিদন। দুই বছর ধরে পিডব্লিউডির কোচ আনোয়ার। গত বছর মাত্র এক পয়েন্টের জন্য দলকে প্রিমিয়ারে তুলতে পারেননি তিনি। অন্য দিকে রিদনও দ্বিতীয়বারের মতো বিসিএলের ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন। ২০২০-২১ সিজনে ছিলেন ফর্টিস এফসির কোচ। সেবারও তার দল মাত্র এক পয়েন্টের জন্য উঠতে পারেনি প্রিমিয়ারে। সে বছর অবশ্য একটি দলকে বিপিএলে উঠার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

সিনিয়র জাতীয় দলে ডাক পেয়েও খেলতে না পারা আনোয়ার কোচিংয়ে এসেছেন ২০১৭ সালে। সে বছরই ভারতের সুব্রত কাপে বিকেএসপিকে রানার্সআপ করিয়েছেন। এরপর ২০১৮-১৯ সিজনে অনূর্ধ্ব-১৮ সোহরাওয়ার্দীকাপে তার কোচিংয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল অ্যাডুকেশন বিভাগে কর্মরত। ‘এ’ লাইসেন্স কোচিং কোর্স এর পরীক্ষা দিয়ে এর রেজাল্টের অপেক্ষায় আনোয়ার। গত বছর ব্যর্থ হলেও এবার পিডব্লিউডিকে বিসিএল চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। এটাকে কোচিং ক্যারিয়ারে সেরা সাফল্য বললেন। তার মতে , ‘আমার দলের খেলোয়াড়রা শতভাগের চেয়েও বেশি দিয়েছে। তাই হারে লিগ শুরুর পরও এবং প্রথম দুই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পাওয়ার পরও শিরোপা জিতেছি। সাথে ক্লাবের পেমেন্ট ছিল ভালো।’ তবে ক্লাবের থাকার পরিবেশ আরো ভালো হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য তার।

২০০০সালে বাড্ডা জাগরণী ক্লাব দিয়ে ফুটবলে আসা ঝিনাইহদের কোট চাঁদপুরের সন্তান আনোয়ারের। এরপর ঢাকা আবাহনী, আরামবাগ, ফেনী সকার, মোহামেডান, শেখ রাসেল , মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ব্রাদার্স ইউনিয়নে এসে খেলা ছাড়েন। ২০১৬ সালে কোচ হিসেবে চাকরি নেয় বিকেএসপিতে।

‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ রিদন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতির সন্তান। এখন স্থায়ী হয়েছেন নোয়াখালীর মাইজদীতে। ২০১৮-১৯ সালে কোচিংয়ে আসেন। তা বাফুফে সভাপতি তাবিথ আওয়ালের ক্লাব নোফেলের সহকারী কোচ হিসেবে। সে বছরই অনূর্ধ্ব-১৮ লিগে নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন হেড কোচ পরিচয়ে। ২০১৯-২০ মৌসুমে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সকে সিনিয়র ডিভিশনে রানার্সআপ করেন। ফলে দল বিসিএলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ২০২০-২১ সিজনে ফর্টিস এফসির কোচ ছিলেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে। গত সিজনে চট্টগ্রাম লিগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোচিং করিয়ে এবার আরামবাগকে তুলেছেন প্রিমিয়ারে। মতিঝিল ক্লাবপাড়ার দলটির শুরুটা দারুণ ছিল। কিন্তু এরপর ছন্দ পতন। ফলে রানার্সআপে সন্তুষ্টি। রিদনের মতে, ‘আমাদেরও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গোল মিসই আমাদের শিরোপা জিততে দেয়নি। সাথে আরো কিছু সামগ্রিক বিষয় ছিল।’

ক্লাব ফুটবলে তৃতীয় বিভাগে লালমাটিয়া দিয়ে ঢাকায় খেলা শুরু রিদনের। এরপর বিআরটিসি, আরামবাগ, ফেনী সকার, চট্টগ্রাম মোহামেডান, ঢাকা মোহামেডান হয়ে নোফেল স্পোর্টিং ক্লাব দিয়ে ফুটবলার ক্যারিয়ারের ইতি। ২০০৩ সালে তার গোলেই এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলে মিরপুর স্টেডিয়ামে ১-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে- সেটিই রিদনের স্মরণীয় গোল। এরপর ২০০৬/৭ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলেন। এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলে রিদনের সাথে স্ট্রাইকিং জুটি ছিলেন আনোয়ার। সে আসরে শেষ ম্যাচে নেপালের সাথে ১-১-এ ড্র করে চূড়ান্ত পর্বে উঠতে ব্যর্থ আব্ ুইউসুফের দল। সেই স্মৃতি টেনে আনোয়ার বলেন, ‘সেবার আমরা অল্পের জন্য কোয়ালিফাই করতে পারিনি। কিন্তু এবার আমি আর রিদন মিলে দুই দলকে বিসিএল থেকে বিপিএলে তুলেছি।’ এরপর রিদনের সাথেই অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ডাক পান আনোয়ার। তবে পরে বাদ পড়ার কষ্ট। দুই বন্ধু এক সাথে ২০০৯-১০ সিজনে এক সাথে মোহামেডানে খেলেন।

এবার দুই দলের ময়দানি লড়াইয়ে অবশ্য জয় আনোয়ারেরই। প্রথম পর্বে পিডব্লিউডির কাছে হেরেছিল আরামবাগ। ফিরতি পর্বের খেলা গোলশূন্যতে ড্র। শেষপর্যন্ত আনোয়ারের দল চ্যাম্পিয়ন। রানার্সআপ রিদনরা।

মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আড়ালে দুইজন খেলা দিয়ে তথ্য আদান-প্রদানও করতেন। তা দলের ভুলভ্রান্তি দূর করার জন্য, জানান রিদন। এখন দু’জনই চান পরস্পরের দল যেন আগামী বিপিএলে ভালো করে। তবে নিশ্চিত নন তারা হেড কোচের পদে থাকবেন কি না।

রিদনের প্রস্তাব, বিসিএলের খেলোয়াড়দের ম্যাচের সংখ্যা বাড়াতে লিগের পাশাপাশি আরো টুর্নামেন্ট আয়োজনের। আনোয়ার চান, এই লিগের ক্লাবগুলোর থাকার পরিবেশ যেন আরো উন্নত হয়।