প্রাথমিকের মাঠ প্রশাসনে অসন্তোষ

হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা ৮২ কর্মকর্তাকে পদায়ন

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৮২ কর্মকর্তাকে পদায়নের ঘটনা ঘটেছে। এতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই পদায়নে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়নি। আদালত স্থগিতাদেশ বাতিল করার পর এই পদায়ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, পিটিআইয়ের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে সরকার সৃষ্টি করে উপজেলা-থানা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি), যার বর্তমান নাম দেয়া হয়েছে উপজেলা প্রাইমারি এডুকেশন ট্রেনিং সেন্টার (ইউপিইটিসি)। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ দফতরটি জেলা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করে পিটিআই। সারা দেশে ৫০৫টি ইউপিইটিসিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ইনস্ট্রাক্টর ২০০৪ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পে এবং ২০০৫ সাল থেকে রাজস্বভুক্ত হন। পদোন্নতি নীতিমালার নানা জটিলতায় এসব ইনস্ট্রাক্টররা দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত। এ পদে ২০০০, ২০০২, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে নিয়োগপ্রাপ্তরাও পদোন্নতি পাননি।

অন্যদিকে পিটিআইয়ের অধীনে ২০০৬-২০১৩ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত জুনিয়র পিটিআই ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি দিয়ে সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট করা হয়েছে। এতে সিনিয়রদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ পদোন্নতিতে আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্তরা লাভবান আর বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, পদোন্নতির আদেশ জারির আগেই এর বিরুদ্ধে আদালতে রিট দায়ের হলে হাইকোর্ট প্রথমে ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ও পরবর্তী সময় ৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো এরূপ আদেশ না করার জন্য স্থগিতাদেশ দেন।

তবে আদালতের সেই আদেশ উপেক্ষা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাখাওয়াত হোসেন সরকার ৮২ জন পিটিআই ইনস্ট্রাক্টরকে পদোন্নতি দিয়ে বিভিন্ন পিটিআইয়ে পদায়ন করে।

পদোন্নতির আদেশ পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগীরা আবার রিট করাসহ আদালতের দ্বারস্থ হলে গত ৩ আগস্ট আদালত দ্বিতীয় দফা স্থগিতাদেশ দেন। তারপরও পদোন্নতিপ্রাপ্তরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক শিক্ষা চলছিল ১৯৮৫ সালের নিয়োগবিধি মোতাবেক। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রণীত নতুন নিয়োগবিধি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়। ওই নিয়োগবিধিতে ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টরদের মাত্র ২০ শতাংশ পদোন্নতির কথা উল্লেখ করে চরম বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়। এ নিয়োগবিধির বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে দু’টি মামলায় স্টে-অর্ডার পেয়েছেন তারা। ভুক্তভোগী মনির হোসেন বলেন, সিনিয়রদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদের পদোন্নতি একদিকে যেমন বৈষম্যমূলক, তেমনি আদালতের আদেশের সরাসরি অমান্য। এ অবমাননার বিরুদ্ধে চলতি সপ্তাহে মামলাপরবর্তী আইনি পদক্ষেপের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তারা এ পদোন্নতির আদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তৎপরতা চালিয়ে যাবেন।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো: মাসুদ রানাকে দফতরে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে একটি মামলা কোর্টে ছিল। এটি গত ২৯ জুলাই বাতিল হয়েছে। এরপর পদায়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।