সংস্কারকাজে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইইউর সহযোগিতার প্রস্তাব

Printed Edition

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহযোগিতার প্রস্তাব করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটি বাংলাদেশ সফর শেষে গত বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দফতরে দেয়া প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে। প্রতিবেদন উপস্থাপন সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরকারী প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি। তিনি বলেন, আমাদের সফরের দু’টি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকার্যক্রম পর্যালোচনা এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়ত, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা ইস্যুটি যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির দিকে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা গণতান্ত্রিক উত্তরণের চেষ্টা করছে। আর এ জন্য সংস্কারকার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আশা করা যায়, সামনের নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি সত্যিকারের অগ্রগতির একটি সুযোগ। শিগগিরই দেশটিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়, বরং নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও এসেছে, যাদের সাথে আমরা আলোচনা করেছি। ভিয়েরা বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে আলোচনার মধ্যে রয়েছে। তবে অনুতাপের বিষয় হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজগঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

প্রতিনিধিদলের অপর সদস্য আরকাদিউজ বলেন, বাংলাদেশে যারা সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন, তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশকে আরো অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ আগামী দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। তবে পুরো বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নির্ভর করছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।

গত ১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ, শ্রমিক সংগঠন এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছেন। প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করেছে।

ইইউর কমিশনারের সাথে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক : ইইউর সমতা, প্রস্তুতি এবং সঙ্কট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার হাদজা লাহবিবের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। গতকাল নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈঠকে সুশাসন, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ প্রস্তুতি, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের সংস্কারপ্রক্রিয়া এবং মানবিক সহায়তার জন্য ইইউর অব্যাহত সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ইইউর সাথে অংশীদারিত্বমূলক সহযোগিতা আরো গভীর করার জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।