সময় মাত্র ৩ দিন হজযাত্রী নিবন্ধনে ভাটা

খালিদ সাইফুল্লাহ
Printed Edition

হজযাত্রী নিবন্ধনের আর মাত্র তিন দিন বাকি রয়েছে। কিন্তু নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১১ হাজার ব্যক্তি। এখনো প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার কোটা খালি রয়েছে। এ অবস্থায় কোটা পূরণ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত ২৭ জুলাই থেকে আগামী বছরের হজযাত্রীদের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়। এর আগে ২২ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে নিবন্ধনের আহ্বান জানিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্তÍ চলবে এ নিবন্ধন। এরপর গত দুই মাসে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১১ হাজার ২৮৩ জন হজযাত্রী। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন দুই হাজার ৩২২ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন আট হাজার ৯৬১ জন। আজ বৃহস্পতিবার নিবন্ধন চলবে। এরপর শুক্রবার বন্ধ থাকবে। শনি ও রোববার হজযাত্রীরা নিবন্ধন করতে পারবেন। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত নিবন্ধনের সময় রয়েছে মাত্র তিন দিন। এ বছর বাংলাদেশের জন্য হজযাত্রীর কোটা রয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। ফলে এখনো কোটা পূরণ হতে বাকি রয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৯১৫ জনের। মাত্র তিন দিনে এত বেশিসংখ্যক হজযাত্রী পাওয়া দুস্কর বলে এজন্সি মালিকদের সূত্রে জানা গেছে। এ অবস্থায় আগামী হজে কোটা পূরণ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বছর শুরুতেই চার লাখ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন করার নির্দেশনা দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত বছর এর পরিমাণ ছিল তিন লাখ টাকা। এ বছর এক লাখ টাকা বাড়ানো হয়। তবে হাবের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরে সাড়ে তিন লাখ টাকা জমা নেয়ার বিধান করা হয়।

বেসরকারি এজেন্সি আল নাফির মালিক নাজিম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের হজে গমনেচ্ছুক ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ গ্রামের মানুষ। তারা জমি, গরু, ছাগল, মাছ বিক্রি করে টাকা জমা করে হজে যায়। আবার অনেকের প্রবাসে থাকা সন্তান টাকা পাঠায়, ঢাকা শহরে থাকা সন্তানরা টাকা দেয়, এসব টাকা এজেন্সির কাছে ধীরে ধীরে জমা দেয়। এ ছাড়া কিছু ধনী লোকও হজে যায়। আগে এক সময় মাত্র ৩০ হাজার টাকায় নিবন্ধন করে পরে নিবন্ধনের শুরুতে দেড় লাখ টাকা জমা নেয়া হতো। পরবর্তী বছরগুলোতে এ টাকার পরিমাণ বাড়াতে থাকে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত বছর ছিল তিন লাখ টাকা। আর এ বছর চার লাখ টাকা করা হয়। এভাবে যতই টাকা জমার পরিমাণ বেড়েছে ততই হজযাত্রীর সংখ্যা কমেছে। গত দুই বছরে দেশে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হয়নি। প্রায় ৪০ হাজার মতো কোটা খালি থেকে যায়। এ বছরের নিবন্ধন আর মাত্র তিন দিন বাকি। আমার এজেন্সি থেকে মাত্র সাতজন নিবন্ধন করেছেন। বাকি তিন দিনে মোট ৫০ জনের মতো হতে পারে। হজের এখনো আট মাস বাকি। এত আগে নিবন্ধন করার কারণে হজযাত্রী নিবন্ধনের গতি কম। সরকার যদি এক মাস সময় বাড়ায় তাহলে এটি ১০০ জনে উন্নিত হতে পারে। দুই মাস বাড়লে হজযাত্রী আরো বাড়বে। তিনি আরো বলেন, ১২ অক্টোবর পর্যন্ত হজযাত্রী নিবন্ধন সর্বোচ্চ ২০-২৫ হাজার হতে পারে। এক মাস সময় বাড়ালে ৮০-৯০ হাজার হবে। আর দুই মাস বাড়ালে পুরো কোটা পূরণ হবে বলে আশা করি।

হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, হজযাত্রী নিবন্ধনে এবার আগ্রহ খুবই কম দেখা যাচ্ছে। মানুষের এখন হজের থেকে ওমরায় যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অনেকে মনে করছেন ওমরায় গেলে হজের বিধান পালন হয়ে যাবে। এটা ভুল ধারণা। মানুষের মধ্যের এ প্রবণতা দূর করা দরকার। হজ ফরজ হলে হজই পালন করতে হবে। ওমরা পালন করে হজের এবাদত পূরণ হবে না। তিনি আরো বলেন, বিগত ১৫-১৬ বছরে দেশে এক শ্রেণীর মানুষের হাতে টাকা ছিল, তারাও এখন নেই। এ ছাড়া দেশে নতুন বিনিয়োগ নেই, জমি বিক্রি কমে গেছে। ব্যাংকে আর্থিক সঙ্কটের কারণে এফডিআর, জমানো টাকা, পেনশনের টাকা ঠিকমতো তুলতে পারছেন না। এসব কারণেও হজের নিবন্ধনের গতি কম।

এ প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, হজ নিবন্ধনে সব সময় প্রথম দিকে গতি কম থাকে। এরপর বাড়তে থাকে। এবারো আগামীতে গতি আরো বাড়বে। আর আমরা নিবন্ধনের সময় বাড়াতে সৌদি সরকারের সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করছি কিছু সময় বাড়বে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৬ সালের জন্য হজের তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। সেগুলো হলো, ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকার বিশেষ প্যাকেজ, ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকার সুলভ প্যাকেজ এবং ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকার সাশ্রয়ী প্যাকেজ।

এর দু’দিন পর সরকারের সাথে মিল রেখে ২০২৬ সালের জন্য তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাব। বেসরকারি হজ প্যাকেজ তিনটি হলো সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার বিশেষ প্যাকেজ, পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাধারণ প্যাকেজ এবং পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকার সাশ্রয়ী প্যাকেজ।

সংগঠনটি জানায়, ২০২৫ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্যাকেজ ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এ বছর তা ৫১ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজারে। একইভাবে, গত বছর সাধারণ প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা, এবার তা ২৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজারে। আর ৫ লাখ ১০ হাজার টাকার সাশ্রয়ী প্যাকেজ এবারই প্রথম ঘোষণা করা হলো।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী হজে ১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি হজে যেতে পারবেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজ মূল্যের পুরো অর্থ আবশ্যিকভাবে জমা দিতে হবে। ৯ নভেম্বর হজ চুক্তি; আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি করতে হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজ ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হবে। ১৮ এপ্রিল থেকে শুরু হবে হজ ফ্লাইট।