ঝিলমিলের উন্নয়ন আটকে আছে মালয়েশিয়ান কোম্পানির কাছে

বিগত ৭ বছরে ওই কোম্পানি একটি ইটও পুঁততে পারেনি। কোনো কাজ করতে না পারলেও ব্যর্থতার দায়ে রাজউক চুক্তিটি বাতিলও করতে পারেনি।

হামিম উল কবির
Printed Edition

রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পের একাংশের উন্নয়ন আটকে আছে মালয়েশিয়ান এক ভূঁইফোড় কোম্পানির কাছে। রাজউক মালয়েশিয়ার বিএনজি গ্লোবালকে ২০১৭ সালে চুক্তির মাধ্যমে ১৬০ একর ভূমি দিয়েছিল সেখানে ১৪ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করার জন্য।

বিগত ৭ বছরে ওই কোম্পানি একটি ইটও পুঁততে পারেনি। কোনো কাজ করতে না পারলেও ব্যর্থতার দায়ে রাজউক চুক্তিটি বাতিলও করতে পারেনি। কারণ চুক্তির কোনো একটি ধারা পরিবর্তন করার অধিকারও রাজউককে দেয়া হয়নি, সব কিছুই ছিল মালয়েশিয়ান ওই কোম্পানির অনুকূলে।

জানা গেছে, মালয়েশিয়ান কোম্পানিকে এত সুবিধা দিয়ে চুক্তি করার পেছনের ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল। তিনিই ঝিলমিলকে ব্যবহার করে অর্থ কামিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। জানা গেছে, বিএনজি ঝিলমিলে কাজ করতে না পারলেও বিদেশী কোনো ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকার ঋণ বাগিয়ে নিয়েছেন। রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পের লোকজন বলছেন, রাজউকের স্বার্থবিরোধী প্রকল্পটি ব্যর্থতার দায়ে বাতিল করার একটি সুযোগ থাকলেও বর্তমানে এর ভাগ্য ঝুলে আছে উচ্চ আদালতের হাতে। বাংলাদেশের আবাসন কোম্পানির একজন ইতোমধ্যে জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। প্রকল্পটি ৪ বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও ৭ বছরেও তা হয়নি। এই ব্যর্থতার দায়ে চুক্তিটি বাতিল করা যেতো। কিন্তু এখন উচ্চ আদালতে চলে যাওয়ায় সেখানকার সিদ্ধান্ত ছাড়া ঝিলমিল প্রকল্পের ১৬০ একর ভূমির ব্যাপারে রাজউক কিছু করতে পারবে না।

ঝিলমিলে মোট ৪০০ একর ভূমির মধ্যে বিএনজি গ্লোবালকে দেয়া ১৬০ একরে ১৪ হাজার ফ্ল্যাট করার পাশাপাশি লেক, খেলার মাঠ, সবুজায়নের চুক্তি ছিল। সেখানে মোট ৬০টি ভবন হতো ২০ তলা বিশিষ্ট, ২৫টি ভবন হওয়ার কথা ছিল ২৫ তলা বিশিষ্ট। প্রতি ফ্ল্যাটের আকার নির্ধারণ করে দেয়া হয় এক হাজার ৪০০ বর্গফুটের। প্রতিটি অবকাঠামোই ভূমিকম্প প্রতিরোধক করে নির্মাণ করার কথা। এ উদ্দেশ্যে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা।

জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিএনজি গ্লোবালের অফিস পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে ওই কোম্পানির একটি নামাত্র অফিস দেখতে পান। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ করার মতো সামর্থ্য বিএনজির নেই বলে দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিএনজি অফিসে কর্মরতরা বাংলাদেশে ঝিলমিল প্রকল্প নামে কোনো প্রকল্পের সাথে চুক্তি হয়েছে কি না বলতে পারেনি। তারা বাংলাদেশের সাথেও কোনো চুক্তি হয়েছে কি না সেটাও বলতে পারেনি। বিএনজি গ্লোবাল রাজউকের সাথে চুক্তি করার সময় দাবি করেছিল সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও ভিয়েতনামে তাদের সিস্টার কোম্পানি রয়েছে। এ-সংক্রান্ত তথ্যও সঠিক নয় বলে দূতাবাস অভিমত দেয়। কোম্পানিটি নির্মাণ সম্পর্কিত কোনো কাজের সঙ্গেও যুক্ত নয়।

রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পটি পোস্তগোলার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু থেকে ২ কিলোমিটার ভেতরে কেরানীগঞ্জ থানায় অবস্থিত। এক হাজার ৭৪০টি আবাসিক প্লট রয়েছে। এখানে ৫ কাঠার প্লট রয়েছে ৩৯৭টি এবং ৩ কাঠার প্লট রয়েছে এক হাজার ৭৩টি। এর মধ্যে ১০ শতাংশ প্লট সংরক্ষিত। প্রকল্পটি সম্প্রসারণ করে সব মিলিয়ে ১০ হাজার প্লট দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জমি না পাওয়ায় ঝিলমিলের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৯৭ সালে এই প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ভেতরের সব রাস্তার নির্মাণ শেষ হয়নি। কেবল বড় রাস্তাগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এখানে একটি মসজিদ ও একটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবকাঠামো নির্মাণ করবে রাজউক। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে পরিচালনার জন্য কোনো একটি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। কলেজ পরিচালনার জন্য নটরডেম কলেজ কর্তৃপক্ষকেও অনুরোধ করা হয়েছে।