লালমনিরহাটে ভারতের উপহারের অ্যাম্বুলেন্সটি নিজেই রোগী

Printed Edition

আসাদুল ইসলাম সবুজ (লালমনিরহাট)

চার বছর আগে বাংলাদেশকে উপহার দেয়া ভারতের লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্সগুলোর মধ্যে একটি লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের দখলে থাকলেও, সেটি এখন নিজেই রোগী। অচল অবস্থায় হাসপাতালের পেছনের এক ছাউনি চালার নিচে পড়ে আছে আধুনিক সেই অ্যাম্বুলেন্সটি। অন্য দিকে, একই সময়ে পাওয়া পৌরসভার অ্যাম্বুলেন্সটি সচল ও নিয়মিত ব্যবহৃত হচ্ছে।

২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকায় আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরকালে তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে সহায়তা হিসেবে ১০৯টি আধুনিক লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেয়ার ঘোষণা দেন। সেই বছরের ২২ ডিসেম্বর এসব অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ সরকারকে হস্তান্তর করা হয়। প্রতিটির মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।

এই অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে ছিল আইসিইউ-গ্রেড ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন সিলিন্ডার, কার্ডিয়াক মনিটর, নেবুলাইজার, সাকশন মেশিন, পালস অক্সিমিটারসহ পথেই জরুরি চিকিৎসা দেয়ার সব ব্যবস্থা। কিন্তু লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি সেই সামর্থ্য হারিয়েছে অনেক আগেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের পেছনে মরিচা পড়া, ধুলায় ঢাকা অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। অভ্যন্তরের যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে, ব্যাটারি ও টায়ার অকেজো হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অ্যাম্বুলেন্সটি হস্তান্তরের পর কেবল একবার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিল। তার পর থেকেই সেটি স্থির হয়ে আছে, যেন ‘নিজেই রোগী’।

ফুলবাড়ি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মোজাম্মেল হক (৫৫) বলেন, ‘এই অ্যাম্বুলেন্সটি সাধারণ নয়, ভারত সরকারের উপহার, বাংলাদেশের মানুষের জন্য দেয়া। অথচ এখন এটি পড়ে আছে লোহার কঙ্কাল হয়ে। এটা অপচয় নয়, এটা অবহেলার প্রতীক।’

আরেক রোগী শফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হাসপাতালের ভবন বড় হয়েছে, কিন্তু মানসিকতা বদলায়নি। কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্স চালুর উদ্যোগ নেই কারো।’

এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: আব্দুল মোকাদ্দেম বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করতে জনবল ও জ্বালানি ব্যয় দুটোই বড় বাধা। তাই এটি সাধারণ রোগী পরিবহনে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দান বা উপহার নয়, যে কোনো সম্পদের স্থায়ী ব্যবহারই উন্নয়ন সূচকের মূল চাবিকাঠি। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের অচল অ্যাম্বুলেন্স কেবল এক জেলার নয়, দেশের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অদক্ষতা ও জবাবদিহির অভাবের এক বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি।