পুঁজিবাজার ঈদপূর্ব সপ্তাহটি সূচকের উন্নতিতেই পার করেছে। এ সময় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ হ্রাস পাওয়ায় লেনদেন কমলেও সূচকের উন্নতিতে বেড়েছে দুই বাজারের মূলধনও। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হ্রাস পেলেও সপ্তাহটিতে কার্যদিবস ছিল চারটি যেখানে এর আগের সপ্তাহের মোট ৫ দিনই লেনদেন নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে এ সময় লেনদেন বেড়েছে দেশের আরেক পুঁজিাবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহান্তে ১৭.৪৬ পয়েন্ট বা ০.৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২১৯ দশমিক ১৬ পয়েন্ট। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২৬.৮১ পয়েন্ট বা ১.৪২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯১৪ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১০.০৯ পয়েন্ট বা ০.৮৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৬৮ দশমিক ১১ পয়েন্ট এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ১.৬৩ পয়েন্ট বা ০.১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯০ পয়েন্টে।
সূচকের এ উন্নতির ফলে বিদায়ী সপ্তাহশেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭১ হাজার ৫১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮ পয়েন্ট বা ০.১২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৪১ পয়েন্ট। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ০.৮১ শতাংশ বেড়ে ১২ হাজার ২৭ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ০.০৮ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৮৪২ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.১০ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১১৩ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ০.৭৭ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২ হাজার ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৩ কোটি ২ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার ৩৪০ কোটি ৫ লাখ টাকা।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ১ হাজার ৬১৭ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি হয় যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেন ছিল ২ হাজার ৩৮৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে বাজারটির গড় লেনদেনও ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ কমে নেমে আসে ৪০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪৭৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে (২৩ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৬ কোম্পানির মাঝে লেনদেনের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানটির প্রতিদিন গড়ে ২৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এই তথ্য জানা গেছে।
লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানটির প্রতিদিন গড়ে ২৩ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
সাপ্তাহিক লেনদেনের তৃতীয় স্থানে থাকা শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ ছাড়া, সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলো হলো বিচ হ্যাচারি, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, লাভেলো আইসক্রিম, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কেডিএস এ্যাক্সেসরিজ এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বিদায়ী সপ্তাহে (২৩ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ) লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
সূত্র মতে, সমাপ্ত সপ্তাহে এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭০ পয়সা বা ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়েছে। দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ৫০ পয়সা বা ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ শেয়ারদর বাড়ায় তালিকার তৃতীয়স্থানে উঠে আসে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে এক্সিম ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, শ্যামপুর সুগার মিল, মাইডাস ফাইন্যান্স, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বিদায়ী সপ্তাহে (২৩ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ) লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে ইস্টার্ন ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। এ সপ্তাহে ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারদর কমেছে ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য কমেছে ৮০ পয়সা।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির শেয়ারদর কমেছে ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১ টাকা ১০ পয়সা। তৃতীয় স্থানে থাকা ইন্দো বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের শেয়ারদর কমেছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১ টাকা।
তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিক, বিডি থাই ফুডস, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস, আরএসআরএম স্টিল, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস এবং উসমানীয়া গ্লাস শিট ইন্ডাস্ট্রিজ।