পটুয়াখালীতে ৬৫১ কোটি টাকার মেডিক্যাল কলেজ ভবন ১১ বছরেও চালু হয়নি

Printed Edition

গোলাম কিবরিয়া ও মাহমুদ হাসান, (পটুয়াখালী)

১১ বছর আগে চালু হওয়ায় কথা ছিল নির্মাণাধীন ৫০০ শয্যা হাসপাতালের নতুন ভবনের। কিন্তু এখনো সেটি সচল হয়নি। তাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পুরনো ভবনেই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রোগীর পাশাপাশি ‘হাসপাতাল নতুন ভবন যেন জটিল রোগে’ আকান্ত হয়েছে। এতে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাগরকন্যা খ্যাত জেলা পটুয়াখালীর মানুষ।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৪ সালে প্রকল্প অনুমোদন দেয়। ২০১৬ সালে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে নির্মাণকাজ শেষে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। তবে ১১ বছর অতিক্রম করতে চললেও এখন সম্পূর্ণ রূপে প্রস্তুত নয়। হাসপাতালের ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫৪৬ কোটি টাকা। নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি কাজ, বেড়েছে দফায় দফায় মেয়াদ। সেই সাথে বরাদ্দ বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৬৫১ কোটিতে।

জানা গেছে, ৫৪৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। তখন নির্ধারণ ছিল ২০২০ সাল নাগাদ হাসপাতালটি চালু করা হবে। কিন্তু করোনা মহামারী, নির্মাণসংক্রান্ত ত্রুটি, বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে কাজ বারবার পিছিয়ে যায়। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫১ কোটি টাকা এবং নতুন সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায় ঝালকাঠির খান বিল্ডার্স ও বঙ্গ বিল্ডার্স (জেভি)। ভবন নির্মাণে দায়িত্ব পায় ঠিকাদার নাসির খান।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ভবনের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ ও অক্সিজেন সরবরাহ লাইন স্থাপিত হয়নি। এসব কারণে হাসপাতাল ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর হয়নি। ফলে পাশের পুরনো ২৫০ শয্যার হাসপাতালেই তিনগুণ রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপ।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলছেন, অসুস্থ রোগী বহনের জন্য ট্রলি পাওয়া যাচ্ছে না। শিশু ওয়ার্ডে একটি বেডে একাধিক শিশু ভর্তি থাকে। তাদের স্বজনরা রয়েছে। সেবা পেতে ভোগান্তি হচ্ছে চরমে। খাবার, ওষুধ এবং শয্যা সঙ্কট রয়েছে। এতে করে অসুস্থ রোগী আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি হাসপাতালের নানা ধরনের অনিয়ম ও সেবা মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ‘পটুয়াখালীর ফেলে আসা দিনগুলো’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেখানে নানা ধরনের শ্রেণী-পেশার মানুষজন অংশ নেয়। সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দ রুমী বলেন, অতিসত্বর ৫০০ শয্যা হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু করাসহ ১২ দফা দাবি নিয়ে প্রতিবাদ সমবেশ করেছি। আশা করছি দফাগুলো বাস্তবায়ন হলে জেলার চিকিৎসাসেবা মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না।

পটুয়াখালী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলারুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, ‘এখন ২৫০ শয্যায় ৬০০-এর মতো রোগী রয়েছে। ৬০ শতাংশের মতো রোগী ফোরে থাকে। দুর্ভোগের সীমা-পরিসীমা নেই। বিশাল সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্স অনেক রকমের চ্যালেঞ্জের শিকার। চিকিৎসক-নার্স এক-তৃতীয়াংশ রয়েছে। শয্যার চেয়ে তিনগুণ রোগী থাকায় কাক্সিক্ষত সেবা পায় না। বেড, ওষুধপত্র ও খাবারে সঙ্কট থাকে। পদে পদে ভোগান্তি রয়েছে। নতুন ভবনটি চালু হলে আমরা ৫০০ শয্যার সুবিধা দিতে পারব। এতে করে রোগীদের চাপ অনেকটাই কমে আসবে।’

প্রকল্প পরিচালক ডা: এস এম কবির হাসান বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ, লিফিট ও ছোট ছোট সংস্কারকাজ রয়েছে। এ ছাড়া এখনো পথ সৃজন হয়নি। পথ সৃজনের জন্য প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করছি ২০২৬ সালের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’

হাসপাতাল ভবন নির্মাণে দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার নাসির খানের সাথে যোগাযোগ করেও মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস বলেছেন, ‘হাসপাতাল নির্মাণকাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেছি। সংযোগ পেলে আমরা চালু করা সম্ভব হবে।