প্রেস উইংয়ের ব্রিফিং

পলাতক সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের প্রত্যাবাসন চাওয়া হবে

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

  • নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক দলগুলো
  • প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা

দুর্নীতি, হত্যা মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ‘প্রত্যাবাসন’ চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘যারা যারাই অভিযুক্ত, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, খুনের মামলা আছে তাদের ব্যাপারে আমরা সিরিয়াস এবং প্রত্যেকের আমরা প্রত্যাবাসন চাইব। তাদের বাংলাদেশের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনা শুধু আমাদের নয় পরবর্তী সরকারেরও নৈতিক দায়িত্ব।’

গতকাল সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শফিকুল আলম।

পলাতক নেতাদের ‘দুর্নীতিবাজ’ আখ্যা দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘এরা বাংলাদেশের মানুষের টাকা চুরি করে বাইরে গিয়ে মোজ-ফুর্তি করছেন। তাদের ফেরানো অবশ্যই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই কাজটা আমরা করব।’ বিদেশে পালিয়ে যাওয়া বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের নেতার হাতে ‘রক্ত লেগে আছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত। বড় বড় দুর্নীতিতে যুক্ত।’

নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক দলগুলো : নারী সংস্কার কমিশন বাতিল চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম এবং তাদের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে জামায়াত। অন্যান্য ইসলামী দলও কমিশনের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে কঠোর সমালোচনা করছে-এ নিয়ে সরকারের ভাবনা জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আমার জানামতে এই রিপোর্ট ঐকমত্য কমিশনে যাবে। ঐকমত্য কমিশন আগামীতে এই রিপোর্ট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলবে। সব সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট ঐকমত্য কমিশনে যাবে। তিনি বলেন, অনেক বিষয়ই রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোই অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারণ করবে যে, কতটুকু নিবে আর কতটুকু নিবে না। রিপোর্টগুলো ঐকমত্য কমিশনে যাবে এবং এই কমিশনই পরবর্তী দিকনির্দেশনা ঠিক করবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারী সংস্কার কমিশন গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে যৌন কর্মীদের শ্রমিকের স্বীকৃতি এবং ছেলে মেয়ের সমান অধিকার প্রদানসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। কমিশনের এই প্রতিবেদনকে ইসলামবিরোধী হিসেবেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামী এই প্রতিবেদনে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন ও ইসলামী পারিবারিক আইন নিয়ে কমিশনের সুপারিশের চরম আপত্তি জানিয়েছে। এই কমিশন বাতিলসহ কয়েকটি দাবিতে সরকারকে আগামী ৩ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে সংগঠনটি। এই সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না হলে ওই দিনের মহাসমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলছে তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে যেটা বলেছি ওটাই আমার বক্তব্য।’

প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা : এ দিকে, গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিশনের সদস্যরা দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।

জানা যায়, প্রতিবেদনে শ্রম সংস্কার কমিশন সুপারিশগুলোর মধ্যে ২৫টি মূল সুপারিশকে গুরুত্বারোপ করেছে। এর মধ্যে আছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও শ্রমিক আন্দোলনে নিহত সব শ্রমিককে রাষ্ট্র কর্তৃক শহীদের স্বীকৃতি প্রদান। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ছাড়া শ্রম খাতে দুর্ঘটনা বা অবহেলাজনিত কারণে নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় যথাযথ নীতি গ্রহণ। একইসাথে রানা প্লাজা, তাজরিন গার্মেন্ট এবং হাসেম ফুডসহ উল্লেখযোগ্য কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা।

সুপারিশে সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতির কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহভিত্তিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক শ্রম আইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে কাজের স্বীকৃতি ও পরিচয়পত্র নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর-শোভন কর্মপরিবেশ, অস্থায়ী ও এজেন্সি নির্ভর নিয়োগের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। সুপারিশে নিজের ও পরিবারের মর্যাদাকর জীবনযাপন উপযোগী ন্যায্য মজুরি (লিভিং ওয়েজ), উন্নয়নে ন্যায্য অংশীদারত্ব ও হিস্যা-প্রাপ্তির অধিকার, প্রত্যেকের জন্য নিরাপদ কাজ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ, দুর্ঘটনায় যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং নিজের ও পরিবারের সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার, প্রত্যেকেরই অবসর, কর্ম অক্ষমতা, অসুস্থতা, মাতৃত্বকালীন সময় বা যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা প্রাপ্তি এবং কোনো না কোনো সামাজিক নিরাপত্তা স্কিমে অন্তর্ভুক্তি, প্রত্যেকের অধিকার সুরক্ষা ও ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সংগঠিত হওয়া, সমষ্টিগতভাবে প্রতিনিধিত্ব করার, অধিকার লঙ্ঘনে অভিযোগ জানানো, প্রতিকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে।

এই অধিকারগুলো নিশ্চিতকরণে, সরকার কর্তৃক দেশের সংবিধান, আইএলও কনভেনশন ও কর্মক্ষেত্রে মৌলিক নীতিমালা ও অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণা, শোভন কাজের মানদণ্ড এবং মানবাধিকার ও ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার আলোকে, যথাযথ ত্রিপক্ষীয় পদ্ধতি অনুসরণ করে বর্তমান শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় এবং মৌলিক সংস্কার অথবা একাধিক আইন প্রণয়ন করা এবং কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়। পরে গতকাল বিকেলে রাজধানীর শ্রম ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ তাদের প্রণীত ১৯ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান শ্রম আইন অনেকাংশেই বৈষম্যমূলক, যা অনানুষ্ঠানিক খাতসহ বহু শ্রমজীবী মানুষকে সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করে। এ প্রেক্ষাপটে একটি সর্বজনীন শ্রম আইন এবং কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের সুপারিশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেসসচিব ফয়েজ আহম্মদ ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন।