স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও তাদের প্রধান অর্থের জোগানদাতা এস আলম, বেক্সিমকো, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসাসহ ১০টি শিল্প গ্রপের ১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা তাদের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা নগদ জব্দ করা হয়েছে। একই সাথে তাদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনারও প্রক্রিয়া জোরেশোরে শুরু হয়েছে।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের সভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা, দুদক, এনবিআর, সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে এ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এ টাস্কফোর্সের প্রধান কাজ হলো পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। গতকালের সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এ ছাড়া সভায় সব সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই দেশের ব্যাংকিং খাতসহ দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে তার তদন্ত শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে বিএফআইইউর তৎকালীন ডেপুটি প্রধান এ কে এম এহসানের নেতৃত্বে হাসিনা রেহানাসহ শেখ পরিবার ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে ১০টি শিল্প গ্রুপের অর্থ পাচারের তথ্য উদঘাটনের প্রক্রিয়া শুরু করে। শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠী নিয়ে তদন্ত চলছে, সেগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ। এসব গ্রুপের পাশাপাশি গ্রুপের প্রধান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে এস আলমসহ তাদের অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এর পর থেকে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বয়ে যৌথ তদন্ত দল। সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশেষ নিরাপত্তাবিশিষ্ট কক্ষে চলছে তদন্তের নথিপত্র প্রস্তুতের কাজ।
গতকালের সভায় পাচারকারীরা ঠিক কোন কোন দেশে অর্থ পাচার করেছেন এবং পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের কী প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে, তার অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। সভায় বলা হয়, হাসিনা-রেহানাসহ তার পরিবার ও ১০ শিল্প গোষ্ঠীর ১৭ হাজার কোটি টাকা শেয়ার জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। প্রতিনিয়তই দেশীয় সম্পদ শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে তা জব্দ করা হচ্ছে আদালতের মাধ্যমে। পাশাপাশি তাদের ব্যাংকে থাকা অর্থও জব্দ করা হয়। এ পর্যন্ত চার হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয় ও ৮৪ জনকে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সভায় তদন্তের প্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ে মামলা করে তা নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে উদ্যোগ নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।