উখিয়ায় রোহিঙ্গা বর্জ্যরে চাপ সঙ্কটে কৃষিজমি ও পরিবেশ

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)
Printed Edition

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে উখিয়া। তবে একই সাথে তীব্র হয়ে উঠেছে বর্জ্যজনিত পরিবেশ-সংকট, যা এখন স্থানীয় জনজীবন ও কৃষি ব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বয়ে আসা বর্জ্য খাল-বিল হয়ে চাষের জমিতে জমা হচ্ছে। এতে উর্বরতা কমে যাচ্ছে, জমির মাটিতে জীবাণু ও বর্জ্য উপাদান মিশে ফসল উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় দুর্গন্ধের পাশাপাশি জমি শক্ত হয়ে যাওয়ায় মৌসুমি ফসলও আগের মতো ফলছে না।

এ সঙ্কট শহর এলাকাতেও সমানভাবে প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়াও বিভিন্ন এনজিওতে নিয়োজিত হাজারো কর্মীর আবাসনের কারণে বর্জ্যরে চাপ বহু গুণ বেড়েছে। প্রতিদিনের প্লাস্টিক, খাবারের প্যাকেট ও গৃহস্থালি বর্জ্য রাস্তাঘাট ও জনপদজুড়ে বাড়িয়ে তুলেছে দূষণ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিপুল জনসংখ্যার চাপের মধ্যে এনজিও সংস্থা ও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে।

সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন এলাকায় পরিণত হয়েছে উখিয়ার মাছকারিয়া খাল। নালা-নর্দমা ধরে ক্যাম্পের বর্জ্য এসে খালে জমছে। পানি কালচে হয়ে গন্ধ ছড়াচ্ছে; পাশে থাকা গ্রিন বার্ড স্কুল, অফিসার্স কোয়ার্টার ও আশপাশের এলাকাজুড়ে দেখা যাচ্ছে ময়লার স্তূপ।

স্থানীয়দের মতে, উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে রোহিঙ্গার সংখ্যা স্থানীয় মানুষের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। এই ভারসাম্যহীনতার চাপ সরাসরি পড়ছে পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যে। বর্জ্যরে পাহাড়, দূষিত বাতাস ও পানি স্থানীয় জীবনে শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঙ্কট এখন শুধু পরিবেশগত নয়, মানবিকতার টেকসই ব্যবস্থাপনাও এর সাথে জড়িত। রোহিঙ্গাদের সহায়তা অব্যাহত রাখতে হলে পরিবেশ রক্ষায় কঠোর ও দীর্ঘমেয়াদি বর্জ্যব্যবস্থাপনা জরুরি। স্থানীয়রা বলছেন, ‘মানবিকতার পাশাপাশি পরিবেশ সুরা এখন জরুরি পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

উখিয়াকে বাঁচাতে এখনই প্রয়োজন সমন্বিত নজরদারি, কঠোর বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ, নইলে সঙ্কট আরও গভীর হবে।