সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ আজ জমা দেবে কমিশন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ পাস হলে সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে আগামী সংসদ। এ জন্য সংসদ সদস্যদের নিয়ে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠিত হবে। বাস্তবায়ন কাজ শেষে ওই পরিষদ বিলুপ্ত হবে। তবে সংসদ চলমান থাকবে। অন্য দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ও গণভোটের সময়ের বিষয়ে কমিশন কোনো সুপারিশ করছে না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা |পিআইডি

  • গণভোটের আগে সংবিধান আদেশ জারি করবে সরকার; নাম হবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ-২০২৫’; এই আদেশের ওপর হবে গণভোট
  • নোট অব ডিসেন্ট ও গণভোট কখন হবে, সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সুপারিশে সনদের আইনি ভিত্তির জন্য সংবিধান আদেশ জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই আদেশের ওপর গণভোট নেয়া হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ পাস হলে সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে আগামী সংসদ। এ জন্য সংসদ সদস্যদের নিয়ে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠিত হবে। বাস্তবায়ন কাজ শেষে ওই পরিষদ বিলুপ্ত হবে। তবে সংসদ চলমান থাকবে। অন্য দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ও গণভোটের সময়ের বিষয়ে কমিশন কোনো সুপারিশ করছে না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

গতকাল সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সামগ্রিক বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেন। যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকটি ছিল কমিশনের সমাপনী বৈঠক। আজ মঙ্গলবার সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার হাতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তুলে দেয়া হবে। এ সময় সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টাও উপস্থিত থাকবেন। পরে দুপুর ২টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘ আলোচনার পর সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো গেলেও সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। আইনি ভিত্তির প্রশ্নে গণভোটের সিদ্ধান্তে একমত হলেও গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দলগুলো। এই অবস্থায় সনদের সাথে পৃথক সুপারিশ আকারে সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি সংক্রান্ত প্রস্তাব সরকারকে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানায় কমিশন। কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া ৩০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৫টি স্বাক্ষর করলেও এনসিপিসহ পাঁচটি দল স্বাক্ষর করেনি। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ছাত্র-তরুণদের দল এনসিপি সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্বাক্ষর করবে না বলে জানায়। কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেয়া হয়।

সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর থেকে এর বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে কাজ করছেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। গতকাল সোমবারও জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে বৈঠক করেন কমিশনের সদস্যরা। কিছু ভুলত্রুটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করেন তারা। বৈঠকে সনদ বাস্তবায়নে সংবিধান ও আইনি দিকগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত মতামতও পর্যালোচনা করা হয়। সনদ বাস্তবায়নে যাতে কোনো আইনি জটিলতার সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে তা চূড়ান্ত করা হয়।

এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথেও আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার পাশাপাশি আইনি বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয়ে একাধিক বিকল্প প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সরকার ওই সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত জানাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সরকারের কাছে সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ হস্তান্তরের পাশাপাশি নোট অব ডিসেন্ট ও গণভোট কখন অনুষ্ঠিত হবে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ জানানো হবে। সরকার গণভোটের আগে সংবিধান আদেশ জারি করবে। যে আদেশের নাম হবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ-২০২৫’। ওই আদেশের ওপর গণভোট হবে। জনগণ হ্যাঁ ভোটের মাধ্যমে তা অনুমোদন দিলে আগামী সংসদ (সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ) দ্বৈত ভূমিকা পালন করবে। সংবিধান সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে জুলাই সনদে উল্লিখিত সংস্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শেষে সংস্কার পরিষদ বিলুপ্ত হবে এবং সংসদ চলমান থাকবে।

জানা যায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ ২০২৫-এর যে খসড়া করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, তাতে ভোটের আনুপাতিক হারে (পিআর পদ্ধতি) আগামী সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনে আদেশে বিশেষ শর্ত থাকবে। গণভোটে আদেশ পাস হলে সংবিধান সংস্কার পরিষদ উচ্চকক্ষ গঠনের অনুমোদন দেবে।

বিএনপি পিআরের ঘোর বিরোধী। জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল পুরো নির্বাচনে পিআর চাইলেও তারা এবং এনসিপি অন্তত উচ্চকক্ষে পিআরের দাবিতে অনড়। এই বিরোধ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে প্রধান বাধা। তাই আদেশে পিআর নিয়ে সঙ্কট সমাধানে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মতামতের সমন্বয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সুপারিশে খসড়ায় বলা হয়েছে, আদেশ গণভোটে পাস হলে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন অনুমোদনে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বাধ্য থাকবে। অন্যান্য সংস্কারে পরিষদ ৯ মাস সময় পেলেও উচ্চকক্ষ গঠনে অগ্রাধিকার দেবে। অনুমোদনের ১৫ দিনের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আগামী সংসদেই পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ কার্যকরে আদেশে এই বিশেষ শর্তটি রাখা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

কমিশন সূত্র জানায়, গণ-অভ্যুত্থানের ক্ষমতাবলে আদেশ জারির সুপারিশ করা হবে। এই আদেশের ওপর গণভোট হবে। খসড়ায় বলা হয়েছে, আদেশ গণভোটে জনগণের অনুমোদন পেলে আগামী নির্বাচনে গঠিত সংসদ দ্বৈত ভূমিকা রাখবে। একটি হবে নিয়মিত সংসদ, যা সরকার গঠন এবং আইন ও বাজেট প্রণয়ন করবে। দ্বিতীয় ভূমিকা হলো- সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন।

খসড়া আদেশে বলা হয়েছে, ৯ মাস বা ২৭০ দিনে জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধানের সংস্কার, পরিমার্জন, সংশোধন করা নির্দেশনামূলক নয় বাধ্যতামূলক হবে পরিষদের জন্য। তবে এটা না করলে কী হবে, তা জানা যায়নি।

গণভোট কখন হবে, আদেশ কে জারি করবে- এ-সংক্রান্ত সুপারিশ কমিশন করবে না বলে জানিয়েছে গতকালের বৈঠক সূত্র। এ দুই বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য না থাকায় সরকারের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেবে কমিশন।

সূত্রে জানা যায়, সংবিধানের সুরক্ষায় উচ্চকক্ষে পিআর প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপিকে উপেক্ষা করে তা চাপিয়ে দিলে সংস্কার ভন্ডুল হবে। দলটি সংসদে পিআরের সুরাহা চায়। অন্যান্য দল বলছে, গণভোটে আদেশ পাস হলেই উচ্চকক্ষে পিআর হবে। মাঝামাঝি পথ হিসেবে খসড়ায় রাখা হয়েছে, গণভোটের পর পরিষদে অনুমোদিত হলে উচ্চকক্ষে পিআর হবে। এর মাধ্যমে বিএনপির অবস্থানকে গ্রহণ করা হয়েছে। পরিষদে উচ্চকক্ষ গঠনের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করে অন্যদের দাবিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিষদ ঠিক করবে কিভাবে উচ্চকক্ষের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন।

বিএনপি বলে আসছে, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালতের মতামতে গঠিত। সংবিধান এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রয়েছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক আদেশ জারির ক্ষমতা নেই। জামায়াত এবং এনসিপি এই অবস্থানের বিরোধী। আদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ব্যক্ত করা জনগণের কর্তৃত্বে আদেশ জারি করা হচ্ছে।’ জামায়াত এবং এনসিপির দাবি, আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন নন, আদেশ জারি করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নামে। বিএনপি এই আদেশ জারিরই বিপক্ষে। বিদ্যমান আইনে প্রজ্ঞাপন জারি করে জুলাই সনদের ওপর গণভোট হতে পারে বলে দলটির মত।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদ নয়, গণভোট হবে আদেশের ওপর। আদেশ কে জারি করবে, তা সরকার নির্ধারণ করবে। ‘আপনি কি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ এবং সংস্কারকে সমর্থন করেন’? গণভোটে এমন প্রশ্ন থাকতে পারে। গণভোটে নোট অব ডিসেন্ট থাকবে না বলে জানা যায়।

কমিশনের সব ডকুমেন্ট সংরক্ষণের তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার : গতকাল বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের সমাপনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো: এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো: আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

সমাপনী বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত সব ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন্ প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন্ সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সবার জন্য দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার। যত বৈঠক হয়েছে সেগুলোর ছবি ও ভিডিও, যত চিঠি চালাচালি হয়েছে- সব ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে এবং ক্যাটাগরি করে রাখতে হবে। টেলিভিশনে যেসব আলোচনা লাইভ প্রচার হয়েছে সেগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, এগুলো হবে ইতিহাসের চিরজীবন্ত দলিল। যারা গবেষণা করতে চায় তারা যেন এগুলো দেখে কাজে লাগাতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ডকুমেন্ট থেকে যাবে। এই দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।’

বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।

ঐকমত্য কমিশন একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার, নির্বাচন) একটি কাঠামোগত সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাক্সক্ষা দৃশ্যমান ছিল। তারা বরাবরই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। দিনের পর দিন অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সাথে সংলাপে অংশ নিয়েছেন।’

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে। গণ-অভ্যুত্থানে এত তাজা প্রাণ ঝরে গেল, এত মানুষ আহত হলো, এটা স্মরণে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার যাতে নিশ্চিত হয়। এই সুযোগ যেন না হারাই।’

কমিশন সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল একইরকম আন্তরিকতার প্রতিফলন ছিল কমিশনের বৈঠকগুলোতে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক।’

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য সফর রাজ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বসে ধৈর্যের সাথে আলোচনা করেছে। ভবিষ্যতেও যেন এই ধরনের সৌহার্দ্যতা থাকে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুদক সংস্কারেও সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘যতগুলো শহীদ পরিবারের সাথে আমরা কথা বলেছি, তারা প্রত্যেকে আমাদের জানিয়েছে সংস্কার নিশ্চিত করা না হলে তাদের সন্তানদের জীবন উৎসর্গ করা বৃথা যাবে বলে তারা মনে করেন। যারা জুলাইয়ে জীবন দিলো তারাই এর মূল ভিত্তি।’