শালিখার আড়পাড়া বাজারে ভয়াবহ যানজট : দেখার কেউ নেই

Printed Edition

শহিদুজ্জামান চাঁদ শালিখা (মাগুরা)

মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া বাজার থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও নেই কোনো নিজস্ব জায়গা কিংবা পরিকল্পিত হাটব্যবস্থা। অথচ এটি উপজেলা সদরের সবচেয়ে বড় হাটবাজার, যেখানে সপ্তাহে দুই দিন (শনিবার ও বুধবার) বড় হাট বসে। কিন্তু হাটের কোনো স্থায়ী পরিকাঠামো না থাকায় ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও পথচারীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধান, পাটসহ কৃষিপণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় বিক্রেতারা শালিখা-দরিশলই সড়কের ওপরই বেচাকেনা করেন। এতে ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটছে এবং সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। গত বছর নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি গাড়ির চাপায় দু’জন নিহত হন বলে জানায় স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও হাটের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা বরাদ্দ বা সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না প্রশাসন। আড়পাড়া হাটের ইজারাদার শহিদুজ্জামান শহিদ জানান, হাটটি প্রতি বছর অর্ধকোটি টাকারও বেশি দিয়ে ইজারা নেয়া হয়। অথচ সরকারি জায়গা থাকা সত্ত্বেও হাটের কোনো নিজস্ব জমি নেই। এ কারণে ক্রেতা-বিক্রেতারা এ হাট থেকে ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এজন্য এত টাকার ইজারা নিয়ে এবার আমাদের লোকসান গুনতে হতে পারে।

ইজারাদার আরো বলেন, ‘আড়পাড়া কানুদার খাল এলাকা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি জমিতে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি নামমাত্র ডিসিআর কেটে ভবন নির্মাণ করেছেন। এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা রহস্যজনক। আমরা উপজেলা ও জেলা প্রশাসকের দফতরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি।’

পথচারী দীলিপ রায়, সুজয় ও আলিম মোল্যা বলেন, প্রতি শনিবার ও বুধবার আড়পাড়া বাজারের দরিশলই ও কালিগঞ্জ সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। রাস্তার দুই পাশে ভ্যান, করিমন, নসিমন, ইজিবাইকসহ নানা যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। সেই সাথে সড়কের দুই পাশে সবজির দোকান বসে। ফলে সড়ক প্রায় অচল হয়ে যায়। অনেক সময় রোগী হাসপাতাল পৌঁছানোর আগেই প্রাণ হারান।

ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন, বাবর আলী ও শামিম হোসেন বলেন, বাজারের প্রবেশমুখে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গেছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হাটের দিনে ধানবাহী ট্রাক, ভ্যান ও টেম্পোর ভিড়ে পুরো এলাকা অচল হয়ে যায়।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, আড়পাড়া হাটবাজারের এমন বিশৃঙ্খল অবস্থার পেছনে প্রশাসনের অবহেলাই দায়ী। তারা বলেন, যথাযথ পরিকল্পনায় হাটের জায়গা নির্ধারণ ও সড়ক দখলমুক্ত করতে পারলে যানজট সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান হয়ে যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: বনি আমিন বলেন, আড়পাড়া হাটবাজারসহ উপজেলার প্রায় প্রতিটি হাটের উন্নয়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট সমস্যাগুলোও খুব দ্রুত সমাধান করা হবে।

স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা যদি হাটের সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেন, তবে আড়পাড়া হাট আবারো প্রাণ ফিরে পাবে। নইলে শালিখার অন্যতম রাজস্ব উৎসটি ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথেই চলে যাবে।