সাক্ষাৎকার

শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার উন্নয়নে কাজ করব : শেখ তাসনিম আফরোজ

বামপন্থী জোট সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি)। নির্বাচনে সাতটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী হয়েছেন ইমি।

হারুন ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Printed Edition
শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি)
শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) |সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানই প্রধান প্রতিশ্রুতি

দীর্ঘ ছয় বছরের প্রতীক্ষার পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচন মূলত পাঁচটি বড় গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার রূপ নিয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীজোট, বাম সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রতিদ্বন্দ্বী এই প্রধান পাঁচটি জোটের ভিপি প্রার্থীরা কথা বলেছেন দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হারুন ইসলাম

বামপন্থী জোট সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি)। নির্বাচনে সাতটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী হয়েছেন ইমি। এই জোটে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন রয়েছে।

নয়া দিগন্ত : ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ কেমন দেখছেন?

শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) : পরিবেশ এখন পর্যন্ত বেশ ভালোই। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ডাকসুর উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে সবার মাঝে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

নয়া দিগন্ত : আপনি ২০১৯ সালে ডাকসুতে অংশ নিয়ে শামসুন্নাহার হলের স্বতন্ত্র ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা কেমন।

শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) : ২০১৯ সালে আমাকে হল প্রশাসন হল থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। তখন তুচ্ছ কারণে মেয়েদের হল থেকে বের করে দেয়া হতো। আমি চেয়েছিলাম একজন শিক্ষার্থীকে যেন তুচ্ছ কারণে হল থেকে বহিষ্কার না করা হয়। সে কারণেই আমি ভিপি পদে নির্বাচন করি। শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার উন্নয়ন করেছিলাম। পরে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমি পদে থাকাকালীন কোনো ছাত্রীকে হল ছাড়তে হয়নি। তা ছাড়া আমরা হলে সেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছিলাম। এ বছর কোনো বৈরী পরিবেশ নেই। সবাই বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে ডাকসুতে অংশ নিচ্ছে।

নয়া দিগন্ত : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রার্থীদের নিয়ে নানা কটূক্তি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) : আমরা দেখছি প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। একে অন্যের বিরুদ্ধে চরিত্র হননের উক্তি করছেন- এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। আমি মনে করি, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহমর্মিতার জায়গায় আমাদের আরো সচেতন হওয়া উচিত। আমি সবসময়ই ইমেজ রক্ষা করে চলার চেষ্টা করেছি, সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি। তবুও আমাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোংরামি করা হয়েছে। আমরা তো মানুষ, মনুষ্যত্বের জায়গা থেকে আমাদের এসব পরিহার করা উচিত।

নয়া দিগন্ত : শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) : আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে জনসংযোগ করছি। সবাই আমাদের আন্তরিকতার সাথেই গ্রহণ করছে। যেহেতু আমার ডাকসু নিয়ে অভিজ্ঞতা আছে, জয়ী হয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার সুযোগ হয়েছে- তাই জয়ী হওয়ার পর দ্রুত যেকোনো কাজ করা সহজ হবে। আমাদের প্রতিরোধ পর্ষদের যারা আছেন, তাদের সবারই দীর্ঘ দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা প্রতিরোধ গড়তে জানেন। তাই আমার মনে হয়, আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

নয়া দিগন্ত : শিক্ষার্থীরা আপনাদের কাছে কী প্রত্যাশা রাখবে?

শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) : আমাদের কাছে শিক্ষার্থীদের অধিকার সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় সংগ্রাম করে অধিকার আদায় করে নিয়েছি। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একজন বিবাহিত মেয়েকে হল থেকে বের করে দিতে চাইলে আমরা আন্দোলন করে বিবাহিত মেয়েদের হলে রাখার অধিকার আদায় করেছিলাম। আগামীতে জয়ী হতে পারলে শিক্ষার্থীদের জীবনমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্যারিয়ার গঠন, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, খাবারের মানোন্নয়নের দিকে নজর দেবো। আগে মেয়েদের হলগুলোতে অনাবাসিক মেয়েরা আইডি কার্ড জমা দিয়ে হলে থাকতে পারতেন, শিক্ষার্থীদের মা-বোন কেউ এলে তারাও হলে থাকতে পারতেন। যা ইদানীং বাতিল হয়েছে। আমি আবার এটা ফিরিয়ে আনতে চাই। সর্বোপরি, বিগত দিনগুলোতে আমরা যেহেতু শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম, কাজ করেছি, তাই মনে করছি শিক্ষার্থীরা আমাদের বেছে নেবেন।

নয়া দিগন্ত : অভ্যুত্থান-পরবর্তী ডাকসুতে আপনাদের অঙ্গীকার কী?

শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) : ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর যারা হামলা করেছিল, গত এক বছরে তার বিচার হয়নি। প্রশাসন তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেনি, বরং এসএম হলে শিক্ষার্থীদের ওপর ডিম হামলাকারী জুলিয়াস সিজার তালুকদারকে ভিপি পদে নির্বাচন করারও সুযোগ দিচ্ছে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। সর্বোপরি, যারা হামলায় জড়িত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা, যাদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়নি, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ থাকবে। তা ছাড়া জুলাইয়ে নারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া, তারা যেন প্রাপ্য সম্মানটুকু পান- সেটি নিশ্চিত করব। নারীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিসি মেকিং বা ডিসিশন মেকিংয়ে থাকতে পারেন, সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ।