- অস্ত্রোপচারের পর ভেতরে কাপড় রেখে সেলাই
 - সঠিক বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি পরিবারের
 - দায় নিতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
 
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয় মীম আক্তারের (১৮)। কয়েক মাস পর গর্ভবতী অবস্থায় অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখান তিনি। তখন ডাক্তার জানান, দ্রুত সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হবে। তার কথা মতো মাদারীপুরের প্রত্যাশা (প্রা:) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নভেম্বরের ৩০ তারিখ সিজারে একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। তবে কিছু দিন যেতেই মীমের পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। হাসপাতালের ডাক্তার জানান, সেলাইয়ের ব্যথা। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে বাধ্য হয়ে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়।
ভুক্তভোগী মীম আক্তার জানান, ঢামেকে আসার পর কিছু পরীক্ষা দেয়া হয়। পরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রামে জানতে পারি পেটে ব্যান্ডজের কাপড় আছে। প্রত্যাশা হাসপাতালের ডাক্তার সিজারের সময় পেটের ভেতর গজ ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই করেছিল। আর সেটি প্রায় ১০ মাস ধরে পেটের ভেতর থাকায় আমার পায়খানার রাস্তায় পচন ধরেছে বলে জানিয়েছে ডাক্তার। তবে সিজারের কয়েক দিন পর থেকেই আমার পেটে ব্যথা হতো। ডাক্তার বলত সেলাইয়ের ব্যথা। পরে আস্তে আস্তে আমার মাথার চুল উঠে যেতে শুরু করে।
এ অবস্থায় গত ১৫ সেপ্টেম্বরে ঢামেকের ডাক্তাররা অপারেশন করে ভেতরে থাকা গজ কাপড়টি বের করেন। যেহেতু পায়খানার রাস্তায় সমস্যা হয়েছে তাই সেখানে বিকল্প হিসাবে একটি ব্যাগ লাগানো হয়েছে। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ঢামেকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। এই খরচ জোগাতে না পেরে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হচ্ছে। ডাক্তার বলেছে, উন্নত চিকিৎসা হলে হয়তো ভালো হতে পারি, নয়তো মৃত্যুও হতে পারে। আমি চলাফেরা করতে পারি না, আর কথা বলতেও কষ্ট হয় অনেক। আমার এই অবস্থা দেখে স্বামীও কোনো খোঁজ নেয় না। প্রত্যাশা হাসপাতাল একটি ভবনে কিছু মেশিন দিয়ে চিকিৎসার নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা দায় স্বীকারই করছে না।
মিম আক্তারের মা রুমা বেগম বলেন, তারা কেন আমার মেয়ের সাথে এমন করল, এটার সঠিক বিচার চাই। আমার মেয়ের এর আগে কোনো অপারেশন হয়নি। এত বড় ক্ষতি করেও হাসপাতালের মালিক দায় স্বীকার করতে রাজি না। ঢামেকের ডাক্তাররা বলেছে, পেটে কাপড় ছিল। এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। টাকার কারণে কিছু ওষুধ কিনতেও পারছি না। আগামী আরো তিন মাস এভাবেই চিকিৎসা করাতে হবে। কিভাবে ব্যবস্থা করব বুঝতে পারছি না। আমরা আমার মেয়ের সব ধরনের ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। হাসপাতাল থেকে মাত্র ৮ হাজার টাকা দিয়েছে। আর কিছু ওষুধ দিয়েছিল, যা কোনো কাজে লাগেনি। আমাদের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়।
এ দিকে প্রত্যাশা (প্রা:) হাসপাতালের মালিক মো: শাহিন মৃধা গজ কাপড়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সিজারিয়ান অপারেশনের সময় পেটে কাপড় ছিল না। অপারেশনের পরবর্তীতে ভেতরে পুঁজ জমে এই সমস্যা হয়েছে। ভেতরে কাপড় থাকলে সাথে সাথে সমস্যা হতো। ১০ মাস পর এসে সমস্যা হতো না। তাদেরকে ঢাকা যাওয়ার ব্যবস্থা আমি করেছি। তা ছাড়া ঢাকার পরীক্ষাগুলোতে সরাসরি কাপড় ছিল বলে প্রমাণ করতে পারেনি। তা ছাড়া আমরা জানতে পেরেছি, সিজারের পরও তিনি গর্ভধারণ করেছিলেন, পরে এটি নষ্ট করেন। যার কারণেও এমনটা হতে পারে। এরপরও আমরা বলেছি তাদের পাশে থাকব। তাদেরকে ২৮ হাজার টাকা ও তিন মাসের ওষুধ দেবো বলে কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা রাজি হয়নি।
 


