রেড সি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে রেখার ‘উমরাও জান’

সাকিবুল হাসান
Printed Edition
রেড সি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে রেখার ‘উমরাও জান’
রেড সি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে রেখার ‘উমরাও জান’

রেড সি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এই বছরের সংস্করণে আইকনিক ভারতীয় অভিনেত্রী রেখা (ভানুরেখা গণেশন)-কে স্বাগত জানাবে। ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী রেখা, উৎসবে তার অভিনীত এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ক্লাসিক চলচ্চিত্র ‘উমরাও জান’ (১৯৮১)-এর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর সূচনা করতে উপস্থিত থাকবেন। উৎসবের ‘ট্রেজারস’ (ঐতিহ্য) বিভাগে প্রদর্শিত হতে চলেছে এই প্রখ্যাত সৃষ্টিটি, যার পটভূমি ১৮৫৭ সালের লখনউ। এটি একজন স্থানীয় ‘তাওয়াইফ’ (নৃত্য ও সঙ্গীতের শিল্পী)-এর বিখ্যাত কবি হয়ে ওঠার গল্প বলে। এটি ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অর্জনগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত এবং ছবিটির পরিচালক মুজাফফর আলীও রেড সি-এর বিশেষ প্রদর্শনীতে যোগ দেবেন। এই প্রসঙ্গে রেখা এক বিবৃতিতে বলেছেন, উমরাও জান আমার আত্মার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে। তিনি কেবল একটি চরিত্র নন; তিনি আমার আবেগ এবং স্বপ্নের গভীরতা তুলে ধরার এক মাধ্যম। বলা যেতে পারে, বহু জীবনের প্রতিধ্বনির মধ্য দিয়ে তিনি আমার আত্মাকেই প্রতিফলিত করেন, যা লাখ লাখ হৃদয়ের অনুভূতিকে প্রকাশ করে। এই প্রাণবন্ত ছবিটি ৪৫ বছর পর নতুন জীবন পাওয়ায় এবং মর্যাদাপূর্ণ রেড সি চলচ্চিত্র উৎসবে এক নতুন দর্শকের সাথে যুক্ত হওয়ার যে সুযোগ, তা সত্যিই আনন্দদায়ক ও তাৎপর্যপূর্ণ। আর, যখন কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা আলফ্রেড হিচককের ছবির পাশাপাশি একটি ১৯৮১ সালের ক্লাসিক ‘উমরাও জান’ উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে, সেই মুহূর্তটির সাক্ষী হওয়া আমার কাছে শুধু আশীর্বাদ নয়, এটি বিনয়ের অনুভূতিও জাগায়।

‘উমরাও জান’ হলো মির্জা হাদি রুসওয়ার ১৮৯৯ সালের উর্দু উপন্যাস ‘উমরাও জান আদা’-এর রূপান্তর। এটি ভারতীয় সিনেমার এক অমর ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত, যা সঙ্গীত পরিচালক খৈয়ামের সুর, শাহরিয়ারের উর্দু কবিতা, আশা ভোঁসলের কণ্ঠস্বর এবং রেখার অসাধারণ সৌন্দর্য ও আইকনিক অভিনয়ের কারণে আজও স্মরণীয়। শিল্পী এবং কবিতার সমঝদার মুজাফফর আলী, ১৮৫৭ সালের লখনউ-এর পটভূমিতে এই ঐতিহাসিক নাটকটি নির্মাণ করেছিলেন অবধী সংস্কৃতির এক স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে। জমকালো পোশাক পরিকল্পনা এবং নিখুঁত শিল্প নির্দেশনার মাধ্যমে তিনি ছবির পুরো পরিবেশটি তৈরি করেন। মূলধারার সিনেমার বাইরে একটি স্বাধীন ঘরানার ছবি হওয়া সত্ত্বেও, এটি দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

রেখা আরো বলেন, ‘আজো এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া, যারা এই চলচ্চিত্রটির মূল গল্প এবং আবেগের সাথে গভীরভাবে একাত্ম হন, তা আমার হৃদয়ে এক অতুলনীয় আনন্দ, গর্ব এবং ভবিষ্যতের জন্য আশার জন্ম দেয়। এটি আমাকে বিশ্বাস জোগায় যে এমন কিছু গল্প ও আবেগ আছে যা সময়ের সাথে সাথে ম্লান হয়ে যায় না, বরং বাতাসের ফিসফিস এবং স্মৃতির বালুকণায় লেগে থাকে। এই চিরন্তন গল্পগুলো নতুন প্রজন্মের কল্পনাকে মুগ্ধ করতে এবং তাদের সামনে নিজেদের সব মহিমা নিয়ে আবির্ভূত হওয়ার জন্য সঠিক মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকে। এই অসাধারণ ঘটনার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ, কারণ এটি মানব অভিজ্ঞতার সর্বজনীনতাকে তুলে ধরে, মনে করিয়ে দেয় যে সময় হয়তো আমাদের পরিস্থিতি বদলাতে পারে, কিন্তু আমাদের গল্পের মূল ভাব এবং তা যে অনুভূতি জাগায়, তা সমুদ্রের প্রতিটি ঢেউয়ে, বালির প্রতিটি কণিকায়, প্রতিটি প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভে, প্রতিটি পাথরে, আকাশের প্রতিটি মেঘে এবং এখান থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত প্রতিটি উজ্জ্বল তারায় লেখা আছে আর সেটাই হলো উমরাও জান।’