অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
ধারাবাহিক পতনের ফলে চার মাসের মাথায় ফের পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। গতকাল ৩২ দশমিক ১৭ পয়েন্ট হারিয়ে চার হাজার ৯৮৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে স্থির হয় সূচকটি। সর্বশেষ ৮ জুলাই পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমেছিল সূচকটি।
ডিএসই থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৮ মে ঢাকা শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকটি সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনি¤œ চার হাজার ৬১৫ দশমিক ৪০ পয়েন্টে নেমে গিয়েছিল। এর পর থেকে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে সূচকের উন্নতি ঘটতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ সেপ্টেম্বর সূচক পাঁচ হাজার ৬৩৬ দশমিক ১৫ পয়েন্টে উন্নীত হয়। অর্থাৎ সাড়ে তিন মাসের মাথায় সূচকটির উন্নতি ঘটে হাজার পয়েন্টের বেশি। এর পর আবার বাজার পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত আছে। গতকাল নিয়ে চলতি সপ্তাহের চার কর্মদিবসেই পতনের মধ্যে পার করে ঢাকাসহ দেশের দুই পুঁজিবাজারের সব সূচক।
ডিএসইর প্রধান সূচক পাঁচ হাজার ১৯ দশমিক ০৭ পয়েন্ট থেকে শুরু করে দিনশেষে নেমে আসে চার হাজার ৯৮৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে। এভাবে সূচকটির পয়েন্ট কমে ৩২ দশমিক ১৭। এ সময় ডিএসইর বিশেষায়িত দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭৪ ও ১১ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই এদিন ১০৫ দশমিক ৮১ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। সিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৮৬ দশমিক ৮৫ ও ৬৮ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট।
সূচকের অবনতি ঘটলেও গতকাল লেনদেনের উন্নতি ঘটে দুই পুঁজিবাজারেই। ঢাকা শেয়ারবাজার এদিন ৪৮৫ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন থেকে ৩৩ কোটি টাকা বেশি। মঙ্গলবার বাজারটির লেনদেন ছিল ৪৫২ কোটি টাকা। এদিন চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ২৪ কোটি টাকার লেনদেন হয় যা আগের দিনের চেয়ে ছয় কোটি টাকা বেশি।
এদিকে পুঁজিবাজার সূচকের ধারাবাহিক অবনতি ঘটলেও কিছু কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে বাজারের অস্বাভাবিক আচরণে বিরক্ত বিনিয়োগকারীরা। গতকাল দুই পুঁজিবাজারেই মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় জায়গা করে নেয় প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আনোয়ার গ্যালভেনাইজকে। ডিএসই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি টাকার কিছু বেশি। শেয়ারসংখ্যা তিন কোটি এক লাখ ৮৭ হাজার। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কোম্পানির ব্যাপক লোকসানের কারণে ২০২৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের লাভ দিতে ব্যর্থ হয়। গত ২৭ অক্টোবর কোম্পানিটি ডিএসই ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করে। এতে বিগত অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখানো হয় ১২ দশমিক ৩২ টাকা। এ ছাড়া ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের সম্পদমূল্য নেমে এসেছে ১ দশমিক ৩৮ টাকায়।
আবার একই দিন অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর কোম্পানিটি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে ওই প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় দেখানো হয় ২ দশমিক ৮৬ টাকা। এতে বলা হয় উৎপাদনবহির্ভূত আয়ের কারণেই কোম্পানির এ মুনাফা হয়েছে। এর পর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারের টানা দাম বেড়ে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে ও সিএসইর মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, কোম্পানিটি একদিকে আর্থিক প্রতিবেদনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করেছে। আবার নতুন অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা দেখিয়ে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে। কয়েকজন বিনিয়োগকারী আরো অভিযোগ করেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে এর আগেও ২০২৩-২০২৪ সালে কোম্পানিটির শেয়ারের দর তিন শ’ টাকার ওপরে তোলা হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেও শেয়ারদর ছিল ২২০ টাকা। আর গত মে মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর নেমে আসে ৫২ টাকায়। তারা মনে করেন, উৎপাদনবহির্ভূত মুনাফা দেখিয়ে এখন আবার একই পাঁয়তারা করছে কিছু অসাধু বিনিয়োগকারী। তারা এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ডিএসই কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপও দাবি করেন।
গতকাল ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল ওরিয়ন ইনফিউশন। ৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায় কোম্পানিটির আট লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় গতকাল। ২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় ৫৫ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে এ তালিকায় দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল সামিট অ্যালাইয়েন্স পোর্ট। ডিএসইর লেনদেনে শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে আনোয়ার গ্যালভেনাইজিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, মনোস্পুল পেপার, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
গতকাল ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আনোয়ার গ্যালভেনাইজিং। কোম্পানিটির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে এ তালিকার দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল এপেক্স ফুড। ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, হাক্বানি পেপার অ্যান্ড পাল্প, এনসিসিবি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, সামিট অ্যালাইয়েন্স পোর্ট, মনোস্পুল পেপার, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, গ্রিন ডেল্টা ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
দিনের দরপতনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল ওইম্যাক্স ইলেকট্রোড লিমিটেড। বিগত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণায় ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটি ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ দর হারায় গতকাল। ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ দরপতনের শিকার ফাঁস ফিন্যান্স ছিল এ তালিকায় দ্বিতীয় কোম্পানি। ডিএসইর দরপতনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, ওরিয়ন ইনফিউশন, খুলনা পেপার অ্যান্ড প্রিন্টিং, ইনটেক অনলাইন, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স, প্যাসিফিক ডেনিমস ও এস এস স্টিলস।



