সাক্ষাৎকার : রাজেকুজ্জামান রতন

গণ-অভ্যুত্থানের পর অবস্থার পরিবর্তনে পদক্ষেপ দেখছি না

“শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা কম বলেই দেশে বাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না, উৎপাদনশীলতা বাড়ছে না।”

রাশিদুল ইসলাম
Printed Edition
রাজেকুজ্জামান রতন
রাজেকুজ্জামান রতন |সংগৃহীত

বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেছেন, শ্রমিকদের নায্য মজুরি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে তা অর্থনীতিতে বড় আকারের ভূমিকা রাখত। কারণ শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা কম বলেই দেশে বাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না, উৎপাদনশীলতা বাড়ছে না। তিনি বলেন, আমরা রেমিট্যান্স দেখছি কিন্তু শ্রমিক তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবন বিক্রি করেই তা দেশে পাঠাচ্ছে। গত ৫৪ বছরে এমন কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারিনি যে দেশেই তরুণদের কাজে লাগানো যায়।

দৈনিক নয়া দিগন্তকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাজেকুজ্জামান বলেন, মাথাভারী মেগাপ্রকল্প না নিয়ে শ্রমঘন শিল্পের দিকে বেশি নজর দেয়া উচিত। তিনি মনে করেন গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের আকাক্সক্ষা যতটা উপরে উঠেছিল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, টাকা পাচারের বিরুদ্ধে, সেই যে মানুষের আকাক্সক্ষা সেটাকে কাজে লাগানোর মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

রাজেকুজ্জামান রতন ৮ম বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেও উত্তাল রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকায় সরকারি চাকরিতে যোগ দেননি। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে তিনি শ্রম আইন সংশোধন কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি, শ্রম আদালতের শ্রমিক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর ব্যবস্থাপনায় তিনি ইতালির তুরিনে আইটিসিতে দুই বার প্রশিক্ষণ নেন। শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল গিয়েছেন। তিনি ন্যাশনাল কো-অরডিনেসন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশনের প্রবাসী শ্রমিক কমিটিতে সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের মুখপাত্র ভ্যানগার্ড পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নয়া দিগন্ত : আমাদের তরুণদের পেছনে অভিভাবক বলেন, সরকার বলেন শিক্ষায় তো বিরাট একটা বিনিয়োগ করা হয়, তো যখন সে দেশ ছেড়ে যায় তখন তো বিনিয়োগটাও নিয়ে যায়, এটা তো শ্রমশক্তির অপচয়, আপনি বিষয়টা কিভাবে দেখেন?

রাজেকুজ্জামান : দেখুন শ্রমবাজারে প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ প্রবেশ করে, বাংলাদেশের গত ৫৪ বছরে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের জায়গাটা এই মাত্রায় আসেনি যে আমরা তাদের সবাইকে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ করতে পারি। ফলে প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ লাখ যুবশক্তি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ শ্রমশক্তি দেশের বাইরে কাজ করছে, তারা রেমিট্যান্স পাঠান, আমরা রেমিট্যান্সটা গুনি কিন্তু এটা গুনি না প্রতিদিন কি পরিমাণ লাশ আমাদের দেশে আসছে। আর তারচেয়ে বেশি আমরা বুঝি না রেমিট্যান্স কত আসে, আমাদের যুবশক্তি কতটা বাইরে যায়, যে যুবশক্তিকে আমরা তৈরি করেছি দেশের সম্পদ দিয়ে সেই যুব শক্তি এখন দেশের বাইরে এখন শুধু যে শ্রম বিক্রি করে তা নয়, এটাকে বলা যায় একধরনের যৌবন বিক্রি করার কাজে আমরা লিপ্ত হয়েছি।

নয়া দিগন্ত : এই যৌবনটা তো তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় তাই না? এটা তো আর সে ফিরে পাবে না।

রাজেকুজ্জামান : না আর সে ফিরে পাবে না। তাদের শ্রমের বিনিময়ে আমরা যে রেমিট্যান্স পাচ্ছি তা এই মুহূর্তে হয়তো টাকার অঙ্কে শুনতে ভালো লাগে কিন্তু যে পরিমাণ মানবসম্পদ ও শ্রম দেশের বাইরে আমরা দিচ্ছি ও সেই পরিমাণ রিটার্ন আমি পাচ্ছি না। দুই তুলনামূলক পর্যালোচনা যদি করি তাহলে আমরা কিন্তু নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারতের তুলনায় কম রেমিট্যান্স পাচ্ছি। কিন্তু ওসব দেশের চেয়ে আমাদের তরুণরা কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ করে বিদেশে কাজের জন্য পাড়ি দিচ্ছে। আমরা অদক্ষ শ্রমশক্তিকে বিদেশে পাঠাচ্ছি কারণ শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছি। তাদেরকে না পারলাম কাজের উপযোগী করে তৈরি করতে, না পারলাম বিদেশের বাজারে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে, এমনকি তারা যে পরিমাণ টাকা খরচ করে দেশের বাইরে যান, দুই-তিন বছর পর সে টাকাটাও দেশে ফেরত পাঠাতে পারেন না। অনেকে ঋণ করেও বিদেশে যান। ফলে তাকে অবৈধভাবে বিদেশে থেকে যেতে হয়। পুরো ব্যবস্থাকে সংক্ষিপ্ত করে বলতে হয়, আমরা যৌবন রফতানি করছি কিন্তু যৌবনের মূল্য পাচ্ছি না। কারণ আমরা দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি করতে পারিনি। যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়ার কথা তা পাইনি এবং প্রবাসী শ্রমিক যখন দেশে ফিরে আসে সে তখন কোথায় কাজ করবে, তার অবশিষ্ট পুঁজি বা জীবনী শক্তি যেটুকু আছে তা কোথায় বিনিয়োগ করবে তার নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারছি না। সব মিলিয়ে বলা যায় শ্রমশক্তির বড় একটা অংশ এভাবে অপচয় হয়ে যাচ্ছে।

নয়া দিগন্ত : তাহলে এর বিকল্পই বা কি ছিল?

রাজেকুজ্জামান : আমাদের রাষ্ট্রের একটা প্রধান উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল যে আমরা আমাদের শ্রমশক্তিকে দেশেই কাজে লাগাব। সেই ক্ষেত্রে আমাদের কৃষিতে, আমাদের শিল্পে, সেবা খাতে যদি কর্মসংস্থান উপযোগী পরিকল্পনা করা হতো, তথাকথিত মাথাভারী মেগাপ্রকল্প নেয়ার পরিবর্তে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকারী প্রকল্প যদি নেয়া হতো, শ্রমঘন শিল্প গড়ে তোলা হতো, দক্ষ শ্রমিকের শিল্প গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করা হতো তাহলে এই শ্রমশক্তির এত বিশাল অপচয় হতো না।

নয়া দিগন্ত : কিন্তু শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কি নিশ্চিত করা যাচ্ছে? নতুন মজুরি ঘোষণা হচ্ছে তো বাস্তবায়ন হতে আবার জিনিসপত্রের দামও বেড়ে যাচ্ছে। শ্রমিকের আয় ও ব্যয়ে তো ভারসাম্য আনা যাচ্ছে না।

রাজেকুজ্জামান : আমাদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো দরকার। বাংলাদেশে ৪৬টি মজুরি বোর্ড আছে, তার মধ্যে ২৯টি মজুরি বোর্ডের মেয়াদই শেষ হয়ে গেছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় দিক হচ্ছে, মজুরি যা নির্ধারণ করা হয় সেটাও সবজায়গায় শ্রমিকরা পায় না। তৃতীয়ত ট্রেড ইউনিয়নগুলো শক্তিশালী নয়। সক্ষমতা কম। ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার শ্রমিকের সংরক্ষিত। সরকারের এখানে ভূমিকা কম। মালিকের মুনাফায় নজরটা বেশি এবং সস্তা শ্রমিকের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করার প্রবণতা তাদের বেশি। ফলে সস্তা শ্রমিক মানে অদক্ষ শ্রমিক, অদক্ষ শ্রমিক মানে তার প্রডাক্টিভিটি কম, প্রডাক্টিভিটি কম মানে দেশের উৎপাদন কম, দেশের উৎপাদন কম মানে আবার শ্রমিকের মজুরির ওপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বা অর্থনীতির ওপরই পড়ে। আমরা সস্তা শ্রমিক ও অদক্ষ শ্রমিকের একটা দুষ্টু চক্রের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি। এতে কিছু মালিকের মুনাফা বাড়ে কিন্তু সাধারণভাবে দেশের কর্মক্ষমতা বাড়ে না। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকারের এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা দরকার। প্রতি বছর মজুরি রিভিউ করা দরকার। এবার শ্রম কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে তিন বছর পরপর মজুরি রিভাইজ করা দরকার। এখন যেটা পাঁচ বছর পরপর করা হয়। সবচেয়ে বড় কথা একটা মানসম্পন্ন জীবনযাপন উপযোগী মজুরি করা দরকার।

নয়া দিগন্ত : এটা যদি সম্ভব হতো তাহলে কি শ্রমিকরা সঞ্চয় করতে পারত, তারা উদ্বৃত্তকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ পেত? তৃণমূলে উদ্যোক্তা বিকাশের একটা সম্ভাবনা তৈরি হত?

রাজেকুজ্জামান : তৃণমূলে উদ্যোক্তা বিকাশ না হলেও একটা জিনিস হতো তা হচ্ছে শ্রমিকের সন্তান ভালো মানের শিক্ষা পেত। শ্রমিকের স্বাস্থ্যটা ভালো থাকত। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে সে কাজে দক্ষ হয়ে উঠত। শ্রমিক অসুস্থ কম হলে চিকিৎসা খাতে তার ব্যয় কমত। আর শ্রমজীবনে স্বস্তি থাকলে এই যে তাৎক্ষণিক যে উত্তেজনা, নানা ধরনের অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে, শ্রমিক কারখানা থেকে রাস্তায় নেমে আসে তা হতো না এবং এগুলো সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়নে প্রভাব বিস্তার করত।

নয়া দিগন্ত : দেশেও তাহলে শ্রমসম্পদের অপচয় হচ্ছে, শ্রম সম্পদকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছি না বা দক্ষ করে গড়ে তোলার মুখে এসব অসুবিধা বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

রাজেকুজ্জামান : অপরিকল্পিত শ্রমব্যবস্থাপনা যার পরিণতিতে আমাদের দেশে যেটুকু বিকাশ হওয়ার কথা ছিল সে বিকাশটা হয়নি এবং যার পরিণতিতে আমরা স্থায়ী শিল্প পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারিনি। এখনো পর্যন্ত গার্মেন্ট নির্ভর রফতানি, প্রায় ৮২ শতাংশ রফতানি আয় আসছে গার্মেন্ট থেকে। যেটা এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে বিদেশের বাজারের ওপর নির্ভর করে আমাদের উৎপাদন করতে হয়। কিন্তু আমাদের তো দরকার ছিল ইন্টারনাল হোম মার্কেটটাকে ডেভেলপমেন্ট করা। যদি শ্রমিকরা ভালো মজুরি পায় তাহলে তার প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার ক্ষমতা বাড়লে দেশে কিন্তু সেই দ্রব্যের উৎপাদনটাও বাড়ে। ফলে শুধু যে অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণ হয় তা না নতুন নতুন কলকারখানার বিকাশের প্রয়োজন পড়ে। ফলে শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি মানে তার প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করার ক্ষমতা বৃদ্ধি, তার খরচ আবার প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে রূপান্তরিত হয়। সব মিলে তো ১৮ কোটি মানুষের বাজার। বাজার অর্থনীতিতে কিন্তু খুব ছোট বাজার না। ইউরোপের তিন চার দেশের চেয়েও বড় বাজার আমাদের। কিন্তু মানুষের যেহেতু ক্রয়ক্ষমতা কম ফলে জনসংখ্যা আছে কিন্তু এটা বাজারে পরিণত হচ্ছে না। তাই শ্রমিকের নায্য মজুরি শুধু শ্রমিকের জন্য নয় দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

নয়া দিগন্ত : গ্যাসের দাম বাড়ে, বিদ্যুতের দাম বাড়ে, পানির দাম বাড়ে, বাড়ি ভাড়া বাড়ে, জীবন যাত্রার ব্যয় বাড়ে, পাল্লা দিয়ে বাড়ে পণ্যের দাম কিন্তু সময় মতো শ্রমিক মজুরি বাড়ে না। এখানে কি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন পড়ে না?

রাজেকুজ্জামান : অর্থনীতির মূল জায়গায় আমাদের থাকতে হবে, উৎপাদনটাকে সামনে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থানটাকে প্রধান বিবেচনায় নিয়ে আসা, মানুষের জীবন মান উন্নয়নকে টার্গেট করা। এটা যদি হয় তাহলে আমাদের পরিকল্পনা হবে এক রকম। আর যদি হয় যে কোনোভাবে রফতানি বাড়াও এবং মালিকদের মুনাফা বাড়াও তাহলে পরিকল্পনাটা হবে আরেক রকম। রফতানি ও মুনাফা বৃদ্ধির রাজনীতির কারণে হয়তো আমরা দেখছি ভলিউম আকারে এক্সপোর্ট বাড়ছে কিন্তু শ্রমিকদের জীবনের মান উন্নয়ন হচ্ছে না। আরেক দিকে তারা তাদের নায্য মজুরিটাও পাচ্ছেনা।

নয়া দিগন্ত : কিন্তু অর্থনীতির একটা বিরাট জায়গা জুড়ে আছে অলিগার্ক শ্রেণী, ঋণখেলাপি, বিদেশে পুঁজি পাচার এগুলো তো এখন জাতীয় সমস্যা। এগুলো রুখে দেয়ার জন্য সংস্কার না সুশাসন কি জরুরি? ঘুরে দাঁড়াব কিভাবে?

রাজেকুজ্জামান : সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জবাবদিহিমূলক পলিসি। একটা কারখানার মালিক কত টাকা ইনভেস্টমেন্ট করেছেন, কত মুনাফা করেছেন, যা তিনি মুনাফা করেছেন সে টাকাটা কোথায় আছে বা কিভাবে তিনি সেটা পুনরায় বিনিয়োগ করছেন। এমনকি আমাদের সংসদ সদস্যরা পাঁচ বছর পরপর যে হলফনামা দেন সম্পদের বিশদ বিবরণ দিয়ে, কিভাবে তা থাকে, আমরা যদি দেখি এক্সপোর্ট আর্নিং কতগুলো কিন্তু সেই অনুযায়ী এনবিআর রাজস্ব আয়টা পেল না কেন। এই সমস্ত ক্ষেত্রে যদি একটা জবাবদিহিমূলক পরিবেশ থাকে তাহলে এক দিকে দুর্নীতি কমানো সম্ভব আরেক দিকে টাকা পাচারটাও রোধ করা সম্ভব। এর জন্য দরকার রাজনৈতিক দায় বা সদিচ্ছা।

নয়া দিগন্ত : সেক্ষেত্রে এখন তো একটা চমৎকার সময় যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর একাট্টা হয়ে কাজ করার পরিবেশ রয়েছে, সংস্কারের সুযোগ পাওয়া গেছে, তো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ আসলে কেমন হতে যাচ্ছে?

রাজেকুজ্জামান : যে প্রক্রিয়ায় দেশটা চলছে তাতে আমি কোনো ভালো ভবিষ্যৎ দেখি না। কারণ এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পরে মানুষের আকাক্সক্ষাটা এত ওপরে উঠেছিল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, টাকা পাচারের বিরুদ্ধে, সেই যে মানুষের আকাক্সক্ষা সেটাকে কাজে লাগানোর মতো প্রয়োজনীয় আমরা পদক্ষেপ কিন্তু দেখি নাই। এখনো মনে হচ্ছে আগের মতো করেই দেশটা চলছে, শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলের পরিবর্তন হয়েছে। আমরা মনে করি যে মানুষের পরিবর্তনের যে আকাক্সক্ষাটা ছিল সেই আকাক্সক্ষার স্বীকৃতিটা মানুষ পায় নাই, যে কারণে দেখি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা কম, শেয়ার মার্কেটে অস্থিরতা দূর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা কম, এমনকি আমরা যদি বলি যে অভ্যুত্থানের পরেও শ্রমিকদের এখনো রাস্তায় নামতে হচ্ছে বকেয়া মজুরি পাওয়ার জন্য অথবা নায্যমজুরি পাওয়ার জন্য। আমাদের কৃষকরা ফসল উৎপাদন করে নায্য দাম পাচ্ছে না, আবার দেখি বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অভ্যুত্থান পরবর্তী একটা দারুণ সুযোগ পাওয়া গিয়েছে সেটা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।