- প্রস্তুত হচ্ছে বাংলা ও ইংরেজির নির্বাচিত ঘটনা
- আজ কালের মধ্যেই দায়িত্ব দেয়া হবে লেখকদের
গত ১ আগস্ট শুক্রবার দৈনিক নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হওয়ায় এবার কলেজের পাঠ্যবইয়ে নতুন করে জুলাই অভ্যুত্থান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও আগের পরিকল্পনায় উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থান বিষয়ে কোনো কন্টেন্ট যুক্ত না করেই বই মুদ্রণের উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে শুক্রবার এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদক প্রকাশ করে দৈনিক নয়া দিগন্ত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবির কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক হয়। পরে গতকাল শনিবার উচ্চ মাধ্যমিক তথা কলেজ পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ে জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও তাদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস যুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই উচ্চ মাধ্যমিকের আবশ্যিক বাংলা এবং ইংরেজি বইয়ে ২০২৪ এর জুলাই সংশ্লিষ্ট কন্টেন্ট যুক্ত করার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকেই এনসিটিবিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল শনিবার এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা এবং ইংরেজি বইয়ে একাধিক কন্টেন্ট যুক্ত করতে এবং এ বিষয়ে আগের রচিত পাণ্ডুলিপি সংশোধন বা পরিমার্জনের জন্য একাধিক লেখককে (বাংলা এবং ইংরেজি) দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। আজ রোববার অথবা আগামীকাল সোমবার এ বিষয়ে কয়েকজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ লেখককে দায়িত্বও দেয়া হবে। নতুন পাণ্ডুলিপিতে ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের ঘটনা প্রবাহ নির্ভুল এবং নিরপেক্ষভাবে তুলে আনার দায়িত্ব দেয়া হবে।
অপরদিকে গত শুক্রবার নয়া দিগন্তে প্রকাশিক সংবাদের বিষয়ে একটি লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছে এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ফাতিহুল কাদীর সম্রাট স্বাক্ষরিত লিখিত ব্যাখ্যায় তিনি দাবি করেন এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত ২০২৫-২০২৬ শিক্ষা বর্ষের একাদশ-দ্বাদশ ও আলিম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকসমূহের পরিমার্জন প্রক্রিয়া চলমান। মুদ্রণের জন্যে এখনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। বইয়ে বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজনের যথেষ্ট সুযোগ এখনো রয়েছে।
এনসিটিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গর্বের অনুষঙ্গ। ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনে দেশের ছাত্র-জনতা যে আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা জাতির ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ২০২৪ সালের মহান গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, এনসিটিবিও এর ব্যতিক্রম নয়। এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে কনটেন্ট থাকা উচিত। ইতোমধ্যে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্তরের প্রতিটি শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত কন্টেন্ট যুক্ত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কন্টেন্টসহ একাদশ-দ্বাদশ ও আলিম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি এবং এনসিটিবি আন্তরিক। পাঠ্যপুস্তক প্রকাশিত হওয়ার পর এর প্রমাণ পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে অনেক সৃজনশীল কাজই এই প্রতিষ্ঠানে করা সম্ভব। কিন্তু এখানে কিছু কর্মকর্তা আছেন যারা কোনো দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে চান না। নিকট অতীতে দেখা গেছে গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ এর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর মাত্র দুই মাস সময়ের মধ্যেই আওয়ামী লীগের বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিল করে সেখানে নতুন পাণ্ডুলিপিতে অথবা আগের কারিকুলাম পরিমার্জন কিংবা সংশোধন করে দিন রাত পরিশ্রম করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন করে জুলাই আগস্টের স্পিরিটকে ধারণ করে সেই আলোকে পাঠ্যবই তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে একটি বৈপ্লবিক কাজ এনসিটিবি তখন পালন করেছে।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় গত এক বছরের এই সময়কালেও উচ্চ মাধ্যেিমকর পাঠ্যবইয়ে জুুলাই আগস্টের ঘটনাবহুল সেই গৌরবোজ্জল ইতিহাস বা কন্টেন্ট পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করার বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো কাজ এনসিটিবি দেখাতে পারেনি। যদিও মাত্র দুই মাসের সময় নিয়ে ২০২৫ সালের মাধ্যমিকের পাঠ্যবই জুলাই আগস্টের অনেক ঘটনাই সেখানে যুক্ত করা হয়েছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে মাধ্যমিকের বইয়ে জুলাই নিয়ে একাধিক কন্টেন্ট যুক্ত করা সম্ভব হলে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে কেনো এত দেরীতে এনসিটিবির বোধোদয় হলো ?