কোরবানির শতভাগ চাহিদা দেশীয় পশুতেই মিটবে

আবুল কালাম
Printed Edition
  • প্রয়োজনের চেয়ে পশু বেশি
  • বেড়েছে গরু মহিষ
  • কমেছে ছাগল ভেড়া

এবার দেশীয় পশু দিয়েই মিটবে কোরবানির শতভাগ চাহিদা। তাই কোরবানির জন্য বাইরের দেশ থেকে পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন পড়বে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশে এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা প্রায় সোয়া কোটি। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার কম। এর মধ্যে গরুর এবং মহিষের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে ছাগল এবং ভেড়ার সংখ্যা। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে সাত লাখ আট হাজার ৯৬৪টি। রাজশাহী বিভাগে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ছয়টি। রংপুর বিভাগে বিভাগে সাত লাখ ৭৫ হাজার ২৮৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে দুই লাখ ৮০ হাজার ৫১২টি, বরিশাল বিভাগে তিন লাখ ২৩ হাজার ৮৬৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০টি।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পশুর সংখ্যা কম হলেও মোটেও সঙ্কট হবে না। কারণ গত বছর কোরবানির পরও উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখেরও বেশি। সুতরাং আসন্ন কোরবানির ঈদে কোরবানিযোগ্য পশুর কোনো সঙ্কট হবে না। অভ্যন্তরীণ পশু দিয়েই কোরবানির শতভাগ চাহিদা মেটানো যাবে। তাই এবার কোরবানি দেয়ার জন্য বাইরের দেশ থেকে পশু আমদানির কোনো দরকার পড়বে না।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানায়, এ বছর দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। যা গত বছরের চেয়ে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার ৩০টি কম। তাদের ভাষ্য গত বছর পশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। কিন্তু এবার এক বছরে দেশে কোরবানিযোগ্য ছাগলের সংখ্যা সাত লাখ ৬৮ হাজার ৬৭১টি এবং ভেড়ার সংখ্যা কমেছে ১০ হাজার ২১০টি কমায় মোট পশুর সংখ্যায় তার প্রভাব পড়েছে। তবে এর মধ্যে এক বছরের ব্যবধানে গরুর সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার ৯৪৪টি। এবং মহিষের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ হাজার ২৪৫টি। এ ছাড়া গত বছর কোরবানির উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখেরও বেশি। ফলে সব মিলিয়ে এবার আনুপাতিক হারে পশুর সংখ্যা কমলেও চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি থাকায় কোনো সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা নেই।

কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে দেশে ১৭ লাখেরও বেশি ডেইরি ফার্ম রয়েছে। আমদানি বন্ধ থাকায় সারা দেশে প্রচুর গবাদিপশুর ফার্ম গড়ে উঠেছে। ছোট-মাঝারি-বড় সব ধরনের উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে দেশের ডেইরি খাতে। এ ছাড়া ছাগল-ভেড়া ও গাড়লের ফার্মের সংখ্যাও বেড়েছে। এর ফলে গবাদিপশুর উৎপাদন বিগত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে এ বছর ঢাকায় এবার কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা সাত লাখ আট হাজার ৯৬৪টি। যা গত বছরের চেয়ে ৭২ হাজার ৭৫৯টি বেশি। রংপুর বিভাগে এবার কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা সাত লাখ ৭৫ হাজার ২৮৬টি, যা গত বছরের চেয়ে ২৯ হাজার ৯৮৮টি বেশি।

ময়মনসিংহ বিভাগে এ বছর কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা দুই লাখ ৮০ হাজার ৫১২টি। যা গত বছরের চেয়ে ১২ হাজার ৩০টি বেশি। বরিশাল বিভাগে এক বছরে গরুর সংখ্যা বেড়েছে সাত হাজার ২৪০টি। এ বছর এ বিভাগে কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা তিন লাখ ২৩ হাজার ৮৬৩টি। আর চট্টগ্রাম বিভাগে এ বছর কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০টি, যা গত এক বছরের সাত হাজার ৯৮টি বেশি।

অন্য দিকে বর্তমানে রাজশাহী বিভাগে কোরবানিযোগ্য গরু ও ছাগলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কারণ গত এক বছরে এই বিভাগে গরু-ছাগলের সংখ্যা অন্য বিভাগের চেয়ে বেশি বেড়েছে। রাজশাহী বিভাগে কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ছয়টি। এই বিভাগে গত বছর গরুর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ২২ হাজার ৪০১টি। অর্থাৎ এক বছরে রাজশাহী বিভাগে গরুর সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৬০৫টি। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে এ বছর কোরবানিযোগ্য ছাগলের সংখ্যা ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ৯৭৫টি। গত বছর ছিল ২৫ লাখ ১১ হাজার ৩৯৩টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজশাহী বিভাগে কোরবানিযোগ্য ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে ৭৬ হাজার ৫৬৪টি।

তবে এক বছরের মধ্যে খুলনা বিভাগে কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা কমেছে ২৩ হাজার ৯১৩টি। গত বছর এই বিভাগে গরু ছিল পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ৩৪৪টি, এ বছর রয়েছে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩১টি। এ ছাড়া এক বছরের ব্যবধানে সিলেট বিভাগে কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা কমেছে ২০ হাজার ১৪২টি। গত বছর বিভাগটিতে কোরবানিযোগ্য গরু ছিল দুই লাখ ২০ হাজার ৬৫৮টি, এবার রয়েছে দুই লাখ ৫১৬টি।

এ ছাড়া গত এক বছরে দেশে কোরবানিযোগ্য মহিষের সংখ্যা বাড়লেও ভেড়ার সংখ্যা কমেছে। গত বছর কোরবানিযোগ্য মহিষের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৬০ হাজার ৩২টি, এবার আছে দুই লাখ আট হাজার ২৭৭টি। আর ভেড়ার সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৬৭ হাজার ৭৪৩টি। এবার রয়েছে সাত লাখ ৫৭ হাজার ৫৩৩টি।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন দেশে এখন শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা বাড়ছে। যার কারণে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ। সে সাথে গবাদিপশুতেও দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই কোরবানির সময় পশুর কোনো সঙ্কট হবে না, বরং কোরবানি পরও প্রায় ২০ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে।

কর্মকর্তাদের ভাষ্য, একটা সময় দেখা যেত কোরবানির ঈদের সময় এলে সীমান্ত পথ দিয়ে দেশে গরু আসত। এখন আর সে অবস্থা নেই। আমাদের দেশে এ খাতে বড় বড় উদ্যোক্তা এসেছেন। ফলে গত এক দশকে দেশে অসংখ্য গরু-ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। এতে দেশ এখন গরুতে সমৃদ্ধ। তাই এবার দেশীয় গরুতেই মিটবে পশুর চাহিদা।