নাশকতার কৌশল পরিবর্তন আ’লীগের হোটেল থেকে খুদে বার্তায় নির্দেশনা

আমিনুল ইসলাম
Printed Edition

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতায় নাশকতা পরিকল্পনার কৌশল বদলেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে তারা দলীয় অবস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মগোপনে থেকে ছদ্মবেশে ‘সক্রিয়’ রয়েছে।

সূত্র জানায়, ঢাকার বেশ কয়েকটি অভিজাত হোটেলে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা পাশের দেশে থাকা হাইকম্যান্ডের নির্দেশনায় নাশকতার ছক কষছেন। এসব পরিকল্পনা খুদে বার্তা ও এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থসহায়তাও পাঠানো হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কয়েকজন মাঠপর্যায়ের নেতার মোবাইলে এমন এসএমএস পাওয়া গেছে, যেখানে লেখা ছিল : ‘যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন; পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী নির্দেশনা আসবে।’

একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘যখনই অ্যাটাকের পরিকল্পনা হয়, জায়গার নাম পাঠানো হয়। সঙ্গে খরচের টাকা পাঠানো হয় বিকাশে। নেতাকর্মীরা বিনা খরচে মাঠে নামে না।’

গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, রাজধানীর পান্থপথ এলাকার হোটেল রয়েল বেঙ্গলসহ কয়েকটি হোটেলে এসব নেতা গোপনে অবস্থান করছেন। দিনের বেলায় তারা রুম থেকে বের হন না, রাতের আঁধারে মাঠপর্যায়ের নেতারা এসে তাদের সাথে আলোচনায় বসেন। এসব সভা মূলত হোটেলের বারে নির্দিষ্ট নির্জন কোণে অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিষয়ে হোটেল রয়েল বেঙ্গলের রিসেপশন বিভাগ জানায়, বোর্ডারদের তালিকা নিয়মিতভাবে স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)-তে পাঠানো হয়, তবে রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করা হোটেলের দায়িত্ব নয়।

বিশেষ সতর্কতা ও পুলিশের প্রস্তুতি : এসবির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বাসটার্মিনাল, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, হোটেল ও ছাত্রাবাসগুলোতে নজরদারি এবং তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা শহরের ১৪৬টি পয়েন্টে বসানো হয়েছে তল্লাশিচৌকি। সন্দেহভাজন যানবাহন, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসেও চলছে অভিযান। সাইবার পেট্রোলিং ও গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলও চলছে সমান্তরালে।

পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘নাশকতার কৌশল বদলানোর খবরও কৌশলের অংশ হতে পারে। তবে তারা যা-ই করুক না কেন, রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তায় পুলিশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে দেখায়, নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো সংগঠিত থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কৌশলগত প্রস্তুতি এবং জনগণের সচেতনতাই এই ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে পারে।