বিদেশী ক্রেতাদের ডিসকাউন্টের মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা

চট্টগ্রামের আইসিডিগুলো রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনারে ঠাসা

নূরুল মোস্তফা কাজী, চট্টগ্রাম ব্যুরো
Printed Edition
চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর |সংগৃহীত

এনবিআর কর্মকর্তাদের কলম বিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচিতে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ঘিরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসূচি শেষ হলেও এর ক্ষতি বইতে হবে অনেক দিন। বেসরকারি আইসিডিগুলো এখন রফতানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারে ঠাসা। বন্দর ইয়ার্ডেও জমছে আমদানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার এবং বাল্ক পণ্যের স্তূপ। সময় মতো রফতানি পণ্য না পৌঁছায় তিনটি জাহাজের বন্দর ছাড়ার শিডিউল পরিবর্তন করতে হয়েছে। বেড়েছে বন্দরে আসা জাহাজের অপেক্ষমাণ সময়। এসব ক্ষতির মাশুল গুনতে হবে প্রকারান্তরে ভোক্তা ও রফতানিকারকদেরই।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রফতানি পণ্যগুলো মূলত বেসরকারি আইসিডিগুলোতে রফতানিকারকরা প্রেরণ করেন। সেখানে কনটেইনারজাত করে বন্দরে জাহাজীকরণের জন্য প্রেরণ করা হয়। কিন্তু এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মসূচির কারণে গত শনিবার ও রোববার রফতানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার জাহাজীকরণের জন্য প্রেরণই করতে পারেনি আইসিডিগুলো। এ ছাড়া ঈদের দীর্ঘ ছুটিও আইসিডিগুলোতে কনটেইনারের স্তূপ বাড়িয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি আইসিডি এখন রফতানি পণ্য বোঝাই কনটেইনারে ঠাসা। গতকাল সোমবার বেসরকারি আইসিডিগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার টিইইউএস রফতানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার জাহাজীকরণের অপেক্ষায় ছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, রফতানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার নিয়ে তিনটি জাহাজ গত রোববার বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মসূচির কারণে রফতানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার আইসিডি থেকে বন্দরে না পৌঁছায় জাহাজ তিনটি বন্দর ছেড়ে যেতে পারেনি।

এই তিনটি জাহাজের মধ্যে পর্তুগালের পতাকাবাহী এমভি এএস সিসিলিয়া জাহাজটি ৫৬৪ টিইইউএস কনটেইনার নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এমভি এক্সপ্রেস নিলওয়ালা নামে আরেকটি জাহাজে রফতানির কথা ছিল এক হাজার ৪৬০ টিইইউএস কনটেইনার। পানামার পতাকাবাহী এমভি হং ডা জিন-৬৮ নামের অন্য জাহাজটিতে এক হাজার ৬৬৬ টিইইউএস কনটেইনার রফতানি হওয়ার কথা ছিল।

এ দিকে বেসরকারি আইসিডিগুলোর পাশাপাশি বন্দরের ইয়ার্ডেও আমদানি পণ্য বোঝাই কনটেইনারের স্তূপ বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাব অনুযায়ী গতকাল সোমবার ৪১ হাজার ৪৩২ টিইইউএস কনটেইনার ইয়ার্ডে পড়ে ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস। কিন্তু ইয়ার্ডের যে ধারণ ক্ষমতা হিসাব করা হয় তা মূলত সিক্স হাই (এক ভাঁজে উপরের দিকে ৬টি) হিসেবে। ফলে এক দিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অতিরিক্ত কনটেইনার ইয়ার্ডে অবস্থান করছে, অন্য দিকে কার্যত বন্দরের ইয়ার্ডে এখন কনটেইনার রাখার জায়গা নেই বললেই চলে। কনটেইনার বহনকারী যন্ত্রপাতিগুলোর মুভমেন্টই কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙ্গরে ১৩১টি জাহাজ ছিল। এর মধ্যে কনটেইনার জাহাজই ছিল ৩৪টি। এর মধ্যে আবার ১০টি জাহাজ জেটিতে নোঙ্গররত থাকলেও ২৪টি কনটেইনার জাহাজ জেটিতে ভেড়ার অপেক্ষায় বহির্নোঙ্গরে অলস বসে ছিল। এসব কনটেইনার জাহাজ থেকেও প্রায় ২০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার বন্দর ইয়ার্ডে নামবে বলে সূত্র জানায়।

বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোট এসোসিয়েশন (বিকডা)’র সচিব রুহুল আমিন সিকদার নয়া দিগন্তকে জানান, গতকাল পর্যন্ত ১৯টি আইসিডিতে ১৪ হাজার ৯৪৬ টিইইউএস রফতানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার সংরক্ষিত ছিল। রোববার সন্ধ্যার পর হতে গতকাল সোমবার পর্যন্ত এক হাজার ৯১৫ টিইইউএস কনটেইনার বন্দরে জাহাজীকরণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। কোনো রফতানি কনটেইনার জাহাজ মিস করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মসূচির কারণে রোববার বন্দর ত্যাগের শিডিউল থাকা জাহাজ জেটি ছেড়ে যায়নি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএ’র শিপিং অ্যাডভাইজর এ এম মাহবুব চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের শাটডাউনসহ কলম বিরতির কারণে দেশের রফতানি খাত চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। বায়ারের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী পণ্য প্রেরণ করতে না পারায় বিদেশী ক্রেতা নিশ্চিতভাবে ডিসকাউন্ট কাটবেন। তিনি জানান, কোরবানির ঈদের বন্ধসহ এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মসূচির কারণে বেসরকারি আইসিডিগুলোতে রফতানি কনটেইনারের ওভারফো হয়েছে। ফলে আইসিডিগুলো এখন রফতানি কনটেইনারে ঠাসা।