এক লিগে দুই ভাই, তিন ভাই সবই দেখেছে দেশের ফুটবল। তবে এক লিগে কি বাবা ছেলেকে দেখেছে কেউ। তা ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায়। বাবা এক দলের কোচ। আর ছেলে আরেক দলের খেলোয়াড়। আরো ব্যতিক্রম আছে। ছেলে ও বাবা দুইজনের ক্লাবই পেয়েছে একই সময়ে প্রমোশনের পুরস্কার। বাবা আকবর হোসেন রিদন ছিলেন সর্বশেষ বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের রানার্সআপ দল আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের কোচ। সেই দল বিসিএল থেকে প্রমোশন পেয়ে উঠেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। অন্য দিকে ছেলে গাউসুল আকবর সাবিন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের চ্যাম্পিয়ন দল পিডব্লিউডির খেলোয়াড়। দলের শিরোপা মানে তার দলও উঠেছে প্রিমিয়ারে।
লক্ষ্মীপুরে জন্ম নেয়া রিদন বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন নোয়াখালীর মাইজদীতে। তার স্ত্রী শাহনাজ আক্তার বিউটিও সাবেক অ্যাথলেট। তবে ততটা লাইম-লাইটে আসতে পারেননি। ন্যাশনাল মিটে ১০০ মিটার হার্ডলসে রৌপ্য জিতেছিলেন সুমিতা রানীর পেছনে থেকে। এ ছাড়া জুনিয়র মিটে অনূর্ধ্ব-১৮ বালিকা বিভাগে গলায় তুলেছিলেন ৪০০ মিটার স্প্রিন্টের স্বর্ণ। যেহেতু বাবা ও মা দু’জনই খেলোয়াড়, সুতরাং ছেলে সাবিনের শরীরেও খেলোয়াড়ি রক্ত। তাই তিনিও এলেন খেলার জগতে। সর্বশেষ সেমি প্রফেশনাল লিগে একই সাথে বাবা ও ছেলের উপস্থিতি। তাদের নৈপুণ্যে ধরা দিয়েছে সাফল্যও।
রিদন ঢাকা তথা দেশের ফুটবলে পরিচিত নাম। বিআরটিসি, আরামবাগ, চট্টগ্রাম মোহামেডান ও ঢাকা মোহামেডানের খেলেছেন। প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ ও অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলে। রিদনের গোলেই মিরপুর স্টেডিয়ামে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। রিদন ছিলেন স্ট্রাইকার। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ছেলে সাবিনই বড়। সাবিনও বাবার মতো স্ট্রাইকিং পজিশনে খেলা শুরু করেন। কিন্তু ২০১৭-১৮ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর বিকেএসপির কোচরাই তাকে স্টপার ব্যাক বানায়। এখন এই পজিশনেই সাবিন তিনটি বিসিএল ও একবার দ্বিতীয় বিভাগ লিগে খেলেছেন।
ছেলে সম্পর্কে বাবা রিদন জানান, সাবিনের ফিনিশিং ভালো ছিল। হেড ওয়ার্কও দুর্দান্ত। কিন্তু বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর সেখানকার কোচরা তাকে বিভিন্ন পজিশনে পরীক্ষা করে শেষপর্যন্ত ডিফেন্সেই খেলার জন্য পরামর্শ দেন।’ কিং স্টারের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ লিগে অভিষেক সাবিনের। পরের বছরই তাকে পছন্দ করেন বিসিএলের ক্লাব গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ বর্তমান বাফুফে সদস্য সাইফুর রহমান মনি। সেখানে খেলেন ১০-১২টি ম্যাচ। দলই উঠে প্রিমিয়ারে। যদিও ক্লাবটি আর বিপিএল খেলেনি। এরপর দুই মৌসুম ধরে আছেন পিডব্লিউডি ক্লাবে। গত সিজনে চার-পাঁচটি ম্যাচ খেললেও এবার হাঁটুর ইনজুরির জন্য কোনো ম্যাচেই খেলার সুযোগ হয়নি। পিডব্লিউডির কোচ আনোয়ার হোসেন আগে ছিলেন বিকেএসপির কোচ। ফলে তার অধীনেই আছেন এই অফিস ক্লাবে। দলটি আগামী প্রিমিয়ার লিগের বহরে রাখছে রিদনের ছেলে সাবিনকে।
ছেলের সাথে বাবার দলেরও প্রিমিয়ারে ওঠা। এটাকে অসাধারণ এক অনুভূতি বললেন রিদন। তার মতে, ‘এটা এক বিরল ঘটনা। একই লিগে বাবা ও ছেলের উপস্থিতি। দুই জনের টিমই উঠেছে প্রিমিয়ারে।’ ছেলে সাবিন এই অনুভূতির কথা জানান এভাবে, ‘এটা আমার জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা। আমি বাবার টিমের বিপক্ষে। বাবা আমার প্রতিপক্ষ ক্লাবে। আর দু’জনেরই টিম প্রমোশন পেয়েছে।’
বাবাকে ফলো করেই ফুটবলে আসা সাবিনের। স্বপ্ন ছিল বাবার মতোই স্ট্রাইকার হওয়া। কিন্তু বিকেএসপির কোচরা আর তা হতে দেননি। তারা ডিফেন্ডার বানিয়েছেন। এ নিয়ে আফসোস থাকলেও এখন সাবিনের সন্তুষ্টি, ‘বিকেএসপির কোচরাই আজ আমাকে এই স্থানে নিয়ে এসেছে। আমার এই পর্যন্ত আসার পেছনে প্রথমে আমার বাবা আর এরপর আমার কোচ আনোয়ার হোসেন।’
গত মৌসুমে সাবিনের খেলার কথা ছিল ঢাকা আবাহনীতে। কথাও চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু দেশের পট পরিবর্তনের ছোবল পড়েছিল দর্শকপ্রিয় ক্লাবে। ফলে আর সেই ক্লাবে খেলা হয়নি। এখন বিপিএলে ভালো খেলে জাতীয় দলে খেলতে চান ২১ বছর বয়সী এই ফুটবলার। তিন বছর বিসিএলে থাকলেও কোনো গোল নেই। তবে ২০২১-২২ এর দ্বিতীয় বিভাগ লিগে কিং স্টারের হয়ে এক গোল ও চার অ্যাসিস্টের মালিক তিনি।