আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরের চারটি সংসদীয় আসনে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে- এমন আভাসে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জুলাই মাসের রাজনৈতিক আন্দোলন ও ঈদ-পূর্ব সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রার্থীরা শুরু করেছেন প্রচারণা ও গণসংযোগ।
লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) : বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা
এ আসনে একসময় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়ার মৃত্যুর পর দল কিছুটা নেতৃত্ব সঙ্কটে পড়লেও বর্তমানে একাধিক নেতার সরব উপস্থিতিতে মাঠে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকার সাবেক কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ইমাম হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী ও শিল্পপতি মো: জহিরুল ইসলাম।
জামায়াত থেকে একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন উপজেলা আমির নাজমুল হাসান। তরুণ এই নেতার গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্য দিকে এনসিপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুল আলম। গুঞ্জন রয়েছে, তার ছোট ভাই, ইন্টারিম সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও নির্বাচন করতে পারেন।
এ ছাড়া এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিমও এ আসনে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিএনপির প্রার্থীকেই কেন্দ্র করে হবে বলে ধারণা সবার।
লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর আংশিক): এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া। তিনি জুলাই আন্দোলনের পর থেকেই নিয়মিত দলীয় ও সামাজিক কর্মসূচিতে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। জামায়াত থেকে প্রার্থী হয়েছেন জেলা আমির মাস্টার এস ইউ এম রুহুল আমিন ভূঁইয়া। যিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার রাজনীতিতে সক্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে সবার কাছে সুপরিচিত হয়ে উঠছেন।
এখানে জামায়াত বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দলের কোনো তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও কেন্দ্রীয় সদস্য হিরো মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় থাকলেও, বাস্তবে তাদের কার্যক্রম তেমন দেখা যাচ্ছে না। ফলে এ আসনে মূল লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই।
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. রেজাউল করিম উভয়েই বেশ সরব ভূমিকা রাখছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে বন্যা, ত্রাণ, ইফতার মাহফিল ও দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা গড়ে তুলছেন।
এখানে আর কোনো প্রার্থী দৃশ্যমান না থাকায় দু’জন কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেই সবাই মনে করছেন। দুই দলের দলীয় অবস্থানও বেশ শক্তিশালী।
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর): এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এ আর হাফিজ উল্যাহ। তিনি এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ, সমাবেশ ও সামাজিক সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্য দিকে সাবেক এমপি ও বিএনপির উপজেলা সভাপতি আশরাফ উদ্দিন নিজান নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ধরে দলীয় কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে এই আসনে আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় নেতা আ স ম আবদুর রব। সম্প্রতি বিএনপি হাইকমান্ড থেকেও তাকে সহযোগিতার নির্দেশনা এসেছে জেলা নেতাদের প্রতি। এর ফলে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে কিছুটা দ্বিধা তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে। তিনি কমলনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চর কাদিরা ইউনিয়নের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
রাজনৈতিক সমীকরণে আসছে নানা সম্ভাবনা
লক্ষ্মীপুর জেলার চারটি আসনে মূলত বিএনপি ও জামায়াতের শক্ত অবস্থান থাকলেও জাতীয় পর্যায়ের জোটগঠন ও প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত হলেই কেবল নির্বাচনী দৃশ্যপট স্পষ্ট হবে। একাধিক আসনে নতুন রাজনৈতিক দলের তৎপরতা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপস্থিতি পরিস্থিতিকে জটিল করতে পারে। আগামীর রাজনৈতিক সমীকরণ ও নির্বাচনী জোটের পর বুঝা যাবে শেষ পর্যন্ত এ আসনে কে কে প্রার্থী থাকবেন এবং কাদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।