পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লুটপাটের শিকার হওয়া পাঁচ ইসলামী ব্যাংক একীভূত হওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একীভূত নতুন ব্যাংকের নাম হবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’। এরই মধ্যে ব্যাংকটির নাম চূড়ান্ত করে গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারের পক্ষে নতুন এই ব্যাংকের মালিক হবে অর্থ বিভাগ।
একীভূত হওয়ার কারণ ও পটভূমি : গত কয়েক বছরে ইসলামী ব্যাংক খাতের মাফিয়া এস আলম একাই সাতটি ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, যার বেশির ভাগ অংশই বিদেশে পাচার করে নিজেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব স্থগিত করেছে। লুটপাটের কারণে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয় এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় অক্ষম হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সরকার ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় উদ্যোগ নেয়। একীভূত হওয়ার তালিকায় রয়েছে- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। সূত্র জানিয়েছে, এসব ব্যাংকের সম্পদ ও দায়দেনা একত্রিত করে নতুন প্রতিষ্ঠানের অধীনে স্থানান্তর করা হবে।
গঠন প্রক্রিয়া ও মূলধনের কাঠামো : জানা গেছে, নতুন ব্যাংকের ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার পর যৌথ মূলধনী কোম্পানির নিবন্ধন করা হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা শুরু করবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’। প্রস্তাবিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক। এর মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা নগদ ও বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। অন্য দিকে বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে আমানত সুরক্ষা তহবিল ও করপোরেট আমানতকারীদের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে।
আমানত সুরক্ষা ও দায় পরিশোধ পরিকল্পনা : নতুন ব্যাংকের মূলধনের বড় অংশ ব্যয় করা হবে পাঁচটি ব্যাংকের আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য। দুই লাখ টাকার নিচে থাকা আমানতকারীদের আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে পরিশোধ করা হবে। আর এর বেশি অঙ্কের আমানত পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে। এই পদক্ষেপের ফলে সাধারণ মানুষ আবারো ইসলামী ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাম ও অনুমোদন প্রক্রিয়া : প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করেছিল ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ বিকল্প প্রস্তাব দেয় ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’, যা শেষ পর্যন্ত অনুমোদিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ অনুমোদনের পর এখন আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চলছে।
প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা : বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, বর্তমানে আমানত প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। ফলে সরকারি মালিকানায় নতুন ইসলামী ব্যাংক গঠিত হলে মানুষ এতে আবারো বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। একই সাথে রেমিট্যান্স আহরণে নতুন উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে একটি স্থিতিশীল ও আস্থাশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে। তবে রাজনৈতিক প্রভাব ও অদক্ষ পরিচালনা অব্যাহত থাকলে পুরনো সঙ্কট নতুন আকারে ফিরে আসার আশঙ্কাও রয়েছে। দুর্বল পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করে নতুন ব্যাংক গঠনের এ উদ্যোগ বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন তারা।