আরো একটি ভূমিকম্পের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ

৭ দিনে ৬টি, ৪টিরই উৎপত্তিস্থল নরসিংদী

হামিম উল কবির
Printed Edition

আরো একটি ভূমিকম্পের সাক্ষী হলো বাংলাদেশের মানুষ। এটার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসংিদী জেলার ঘোড়াশালে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১৬ মিনিট ২০ সেকেন্ডে ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়েছে। এবারো এটা ছিল মৃদু ধরনের, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩.৬। এটা ছাড়াও কক্সবাজার জেলার টেকনাফ শহরে গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৩টা ২৯ মিনিটে ৫৫ সেকেন্ডে আরেকটি ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল টেকনাফ থেকে ১১৮ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের পানির নিচে।

তবে গত বুধবার রাতে বঙ্গোপসাগরে যখন ভূমিকম্প হয়েছে, যেটা টেকনাফ থেকে অনুভূত হয়েছে, এর ঠিক এক মিনিট পর ভারতের মনিপুর রাজ্যের ইমফলে আরেকটি ভূমিকম্প হয়ে গেছে। ওই ভূমিকম্পটি সিলেট থেকে অনুভূত হয়েছে। মনিপুরের ইমফল সিলেট থেকে কাছাকাছি হওয়ায় এবং শেষ রাতে সংঘটিত হওয়ায় ঘুমের মধ্যে অনেকেই টের পাননি।

গত ২১ নভেম্বরের পর থেকে গতকাল ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সাত দিনের মধ্যে দেশে ছয়বার ভূমিকম্প হয়ে গেল। এর মধ্যে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলই ছিল নরসিংদী জেলার পলাশ ও শিবপুর উপজেলার চারটি স্থানে। এই চারটি স্থানেরই অবস্থান খুবই কাছাকাছি। গত সাত দিনের ব্যবধানে ৬ ভূমিকম্পের অপর দু’টির একটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা শহরের বাড্ডায়। এটা রাজধানীর মধ্যে পড়ায় রাজধানীবাসী বেশ ভালো করেই ভূমিকম্পের কম্পন অনুভব করেন।

গত ২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার যে ভূমিকম্প হয়ে গেল, পরের ভূমিকম্পগুলো অপেক্ষাকৃত কম মাত্রার ছিল। ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি শক্তিশালীই বলা চলে। ওই ভূমিকম্পটি সারা দেশেই অনুভূত হয়েছে এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুরনো এবং দুর্বল ধরনের ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। অনেক ভবনে ফাটল দেখা দিলেও নিরাপত্তার কারণে অথবা ভবনে বসবাসকারীদের ভবন ত্যাগের কথাটি মাথায় রেখে মালিকদের অনেকেই ভূমিকম্পে ভবনে ফাটল ধরার কথাটি গোপন রেখেছেন বলে ভূমিকম্পে ভবন যারা পরীক্ষা করেন সেই প্রকৌশলী টিমের কয়েকজন জানিয়েছেন।

নরসিংদীতে বিভিন্ন এলাকায় ঘন ঘন ভূমিকম্পের ব্যাপারে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নরসিংদী একটি ফল্টলাইনের (ভূ-চ্যুতি) অংশ হতে পারে। এটা পরীক্ষা করে বলা না হলেও ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ায় তারা নরসিংদী মাটির গভীরে একটি ফল্টলাইন থাকার ব্যাপারটি বলছেন। ৭ দিনে নরসিংদীতে চারটি ভূমিকম্প হলেও এরও আগে এখানে আরো কয়েকবার ভূমিকম্প হয়েছে। সেগুলো ৫ মাত্রার নিচে বলে সেগুলো নিয়ে এত আলোচনা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শত বছর অথবা এর চেয়ে বেশি বছরের ব্যবধানে ফল্টলাইনগুলো প্রাকৃতিকভাবে ভরাট হয়ে গেছে। তবে ভরাট হয়ে গেলেও ফল্টলাইনের উপরিস্থিত মাটি অপেক্ষাকৃত নরম হওয়ায় মাটির নিচে থাকা প্রেশার (চাপ) ফল্টলাইনের দুর্বল অংশের মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে।

এ ব্যাপারে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী নয়া দিগন্তকে বলেন, হয়তো নরসিংদীর মাটির নিচে বড় ফল্টলাইন রয়েছে। এখানে গত ২১ নভেম্বর যে ভূমিকম্প হয়ে গেল সেটার পর আফটার শক হিসেবে কম মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এই নরসিংদীতে ভবিষ্যতে এর চেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে কিন্তু এর সময় এখনো আসেনি, ভবিষ্যতে কোনো একসময় হতে পারে। আপাতত মনে হচ্ছে, ছোট মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে মাটির নিচে যে প্রেশার জমা হয়েছে, সেটা রিলিজ হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কানাডা প্রবাসী ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল পলাশ নয়া দিগন্তকে বলেন, মধুপুর ফল্টলাইনটি হয়তো নরসিংদী দিয়ে আরো নিচের দিকে দক্ষিণে চলে গেছে। ফল্টলাইনগুলো মাটির অনেক গভীরে থাকায় এগুলো সহজে প্রমাণ করা যায় না যে, ঠিক কোন লাইন বরাবর এগুলো রয়েছে। সে জন্য বাংলাদেশ সরকারের উচিত যে যে স্থানে ভূমিকম্পগুলো হচ্ছে সেখানে জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বসানো। এই সিস্টেম বসানো হলে ভূমিকম্পের অনেক কিছু জানা সম্ভব হবে। এমনকি ফল্টলাইনের ব্যাপারে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।

জিপিএস মানে হলো- কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই সিস্টেম পৃথিবী পৃষ্ঠের যেকোনো বস্তুর অবস্থান, গতি এবং সময় নির্ণয় করতে সাহায্য করে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং বর্তমানে এটি সামরিক ও বেসামরিক উভয় কাজেই ব্যবহৃত হয়। মোবাইল ফোনের ন্যাভিগেশন অ্যাপ ব্যবহার করে রাস্তা খুঁজে বের করা হয় জিপিএস সিস্টেমে।