পটপরিবর্তনেও প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নতি নেই

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট দু’মাসে এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি মাত্র ২.৩৯ শতাংশ, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের একই বাস্তবায়ন হার ছিল ৬ শতাংশ। যেখানে গত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে এত আন্দোলন রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও বাস্তবায়ন হার ছিল ২.৫৭ শতাংশ।

হামিদ সরকার
Printed Edition

  • জুলাই-আগস্ট ২ মাসে বাস্তবায়ন হার মাত্র ২.৩৯ শতাংশ
  • বিদেশী সহায়তা ৩০ মন্ত্রণালয় ব্যবহারই করতে পারেনি
  • সর্বোচ্চ ব্যয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পৌনে ১১ শতাংশ

উন্নয়ন প্রকল্প বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে কোনো ধরনের উন্নতি আসেনি। উল্টো গত এক যুগের মধ্যে জুলাই-আগস্ট দু’মাসে ছিল সর্বনি¤œ বাস্তবায়ন হার। একই অবস্থা ছিল গত জুলাই মাসে। ফলে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট দু’মাসে এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি মাত্র ২.৩৯ শতাংশ, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের একই বাস্তবায়ন হার ছিল ৬ শতাংশ। যেখানে গত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে এত আন্দোলন রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও বাস্তবায়ন হার ছিল ২.৫৭ শতাংশ। ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ৩০টিই বিদেশী সহায়তা খরচ করতে পারেনি বলে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলেও সরকারের প্রশাসনে কোনো ধরনের পরিবর্তন হয়নি। আগে যারা ছিল, এখনো তারাই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে নিয়োজিত। ফলে কাজে কোনো ধরনের অগ্রগতি আসার কথা না।

পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি গতকাল চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট দু’মাসের এডিপির অগ্রগতির তথ্য প্রকাশ করেছে। চলতি অর্থবছর এডিপির আকার দুই লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যেখানে সরকারি অর্থায়ন এক লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা (৬০.৩৩ শতাংশ), প্রকল্প সহায়তা ৮৬ হাজার কোটি টাকা (৩৬.০৩ শতাংশ) এবং সংস্থার অর্থায়ন আট হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা (৩.৬৪ শতাংশ)। এক হাজার ১৯৮টি বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর দুই মাসে খরচ হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার ৭১৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

অগ্রগতির হার মাত্র ২.৩৯ শতাংশ : বিশাল আকারের এডিপি নিলেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কখনোই গতি পাচ্ছে না। বছর গেলেই আগের বছরের তুলনায় অগ্রগতি কম হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট দু’মাসে মোট বরাদ্দের মাত্র ২.৩৯ শতাংশ অর্থ খরচ হয়েছে, যা আগের অর্থবছর ২০২৪-২৫ এ ছিল ২.৫৭ শতাংশ বা সাত হাজার ১৪৩ কোটি আট লাখ টাকা। ধারাবাহিকভাবে এই ব্যয় গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ওই বছর একই সময়ে অগ্রগতি ছিল ৬ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছর ৫ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৩ শতাংশ, ২০১৬-২০১৭ তে ৩.৮৬ শতাংশ এবং এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছর ৪.৪৮ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছর ৩.৮৯ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছর ৩.৮২ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছর ৩.৮৫ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছর ছিল ২.৫৭ শতাংশ।

অর্থই ব্যয় হয়নি ৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের : প্রকল্প বাস্তবায়ন বেশ ঢিমেতালে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বরাদ্দকৃত অর্থই খরচ করতে পারে না অর্থবছরের প্রথম দিকে। সাতটি মন্ত্রণালয়ের একটি টাকাও খরচ হয়নি জুলাই মাসে। আর এক শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পারেনি পাঁচটি মন্ত্রণালয়। সেগুলো হলো- জননিরাপত্তা বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুদক ও সংসদবিষয়ক সচিবালয়।

বিদেশী সহায়তা খরচে ব্যর্থ ৩০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ : খরচে ব্যর্থ হওয়ার কারণে পাইপলাইনে বিদেশী সহায়তার অর্থ বছরের পর বছরে থাকে। বাস্তবায়নে গতিহীনতায় উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ ছাড় করে না। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দু’মাসে ৩০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রকল্প সহায়তার কোনো অর্থ খরচ করতে পারেনি। সেগুলো হলো, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, সংসদবিষয়ক সচিবালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ (উন্নয়ন বরাদ্দ), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় (থোক বরাদ্দসহ), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় (থোক বরাদ্দসহ), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ।

সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্তদের ২.৯১ শতাংশ: এডিপিতে সর্বোচ্চ বরদ্দপ্রাপ্ত ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল ৭৪.৫৬ শতাংশ অর্থ। যার পরিমাণ এক লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। তাদের বাস্তবায়ন হার ২.৯১ শতাংশ। সর্বোচ্চ ১০.৭৫ শতাংশ বা এক হাজার ২৬৬ কোটি টাকা দু’মাসে ব্যয় করতে পেরেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া জ্বালানি বিভাগ ৫.৯৪ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩.৪৫ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে।