চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক

অনুমোদনহীন যানবাহনের দাপটে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই যানবাহন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের।

মোছাদ্দেক হোসাইন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)

Location :

Lohagara
Printed Edition
লোহাগাড়ার পদুয়া তেওয়ারিহাট অংশে যত্রতত্র ৩ চাকার বাহনের চলাচল ও পার্কিং
লোহাগাড়ার পদুয়া তেওয়ারিহাট অংশে যত্রতত্র ৩ চাকার বাহনের চলাচল ও পার্কিং |নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহন। সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো মহাসড়কে উল্টো পথেও অনায়াসেই চলাচল করছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই যানবাহন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অদক্ষ চালক, লাইসেন্সবিহীন ও নাম্বারবিহীন যানবাহনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়েছে। গত এক বছরে এই মহাসড়কে থ্রি-হুইলার সংশ্লিষ্ট অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।

গত ২৫ জুলাই শুক্রবার বিকেলে পদুয়া সিকদার দীঘি এলাকায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় তিন মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। সংযোগ সড়ক থেকে হঠাৎ উঠে আসা একটি সিএনজি অটোরিকশার ধাক্কায় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্সবাজারমুখী একটি ট্রাকের নিচে গিয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দু’জন মারা যান। পরে হাসপাতালে মারা যান আরো একজন।

সরেজমিন দেখা গেছে, পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও দোহাজারী এলাকায় মহাসড়কে অবাধে চলছে তিন চাকার যান। যানবাহনগুলো উল্টো পথ ব্যবহার করে, মাঝ রাস্তায় থামে, এমনকি সড়ক পথের যে কোনো স্থানে পার্কিং করে যাত্রী ওঠানামা করায়। এতে নিয়মিত যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ এসব স্থানে রয়েছে স্থায়ী ট্রাফিক বক্স।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে মহাসড়কে ধীরগতির তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ২০১৯ সালে উচ্চ আদালতও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন। যদিও তখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচল করছে। হাইওয়ে পুলিশের তদারকির অভাবে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

লোহাগাড়ার বিভিন্ন বাসস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, বটতলি, পদুয়া, ঠাকুরদীঘি, কেরানিহাট, আধুনগর ও চুনতি বাজার স্টেশন থেকে সারাদিনই ছোট ছোট থ্রি-হুইলার মহাসড়কে ছুটে বেড়ায়। সিএনজি চালকেরা জানান, বর্তমানে পুলিশের অভিযান না থাকায় কাউকে মাসোহারাও দিতে হচ্ছে না। ফলে চালকেরা মনের ইচ্ছেমতো নিয়ম-রীতি না মেনেই মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

একাধিক চালক স্বীকার করেন, তাদের বেশিরভাগেরই লাইসেন্স নেই। আগে প্রশাসনের কিছু সদস্যকে নিয়মিত টাকা দিতে হতো। এখন তেমন বাধা নেই। ফলে এই রুটে গাড়ি চালানো তাদের জন্য সহজ হয়ে গেছে।

যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক চালকেরা বলছেন, হঠাৎ করে থ্রি-হুইলার উঠে আসায় ব্রেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনা হচ্ছে। সময়মতো গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না, যার মাশুল দিতে হয় যাত্রীদের।

স্থানীয়ভাবে দুর্ঘটনা রোধ ও মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার দাবি জোরালো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ, সামাজিক সংগঠন, বাজার কমিটি, পরিবহন শ্রমিকরা মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ এবং স্মারকলিপি পেশ করেছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আশ্বাস দিয়েছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দ্রুত ছয় লেনে উন্নীত করা হবে।

তবে সমস্যা শুধু অবকাঠামোগত নয়, বরং কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতার অভাবই বড় বাধা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী আমরা নিয়মিত মামলা দিচ্ছি। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে আমাদের একার পক্ষে এসব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমরা মাইকিং করছি, যৌথ চেকপোস্ট বসিয়েছি, সেনাবাহিনীর সহায়তাও নিচ্ছি। গত ২৬ জুলাই শনিবার ২৫টি মামলা করেছি। পদুয়া দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি জানান, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সিএনজি এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ট্রাক ও মোটরসাইকেল হেফাজতে রয়েছে।

শুভ রঞ্জন চাকমা আরো বলেন, যদি বাজার কমিটি ও দোকান মালিকরা সিদ্ধান্ত নেন যে মার্কেটের সামনে থ্রি-হুইলার দাঁড়াতে পারবে না, তাহলে আমাদের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, হাইওয়ে পুলিশ চাইলে প্রতিটি যানবাহনের লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন যাচাই করতে পারে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা এবং জরিমানার পাশাপাশি, রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্বল তদারকি রোধ করাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।